সংগ্রহ করতে কল করুন- 01321 562 334
প্রচণ্ড দাবদাহে পুড়ছে গোটা দেশ। নিদাঘের মধ্যাহ্ন সূর্য যেন প্রকৃতিতে তরল আগুন ঢালছে। প্রতিদিনই বাড়ছে উষ্ণতা। ঘরে-বাইরে প্রশান্তি নেই কোথাও। বাতাসের আর্দ্রতার আধিক্যে ভ্যাপসা গরমে নাভিশ্বাস দশা। বাড়ছে রোগ-বালাই। হিট স্ট্রোকে মরছে মানুষ। জারি করা হয়েছে ‘হিট অ্যালার্ট‘। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া তেমন কেউ গৃহ আবাসের বাইরে যাচ্ছে না। রাস্তাঘাট সড়কে পিচ গলছে। যত দিন যাচ্ছে তাপপ্রবাহ মাঝারি থেকে তীব্র, তীব্র থেকে আরও তীব্রতর হচ্ছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে তাপপ্রবাহ এতো অধিক পরিমাণে বেড়ে যাওয়ার পিছনে কারণ কী?
এর অন্যতম কারণ হলো- মানবসভ্যতার উন্নয়ন, প্রগতি ও উৎকর্ষের নামে আমরা নানা সময়ে, নানা কারণে পরিবেশকে বিপর্যস্ত করছি। নদী-নালা, খাল-বিল ও পুকুর ভরাট করে বসতি স্থাপন ও কলকারখানা নির্মাণ করছি। গাছ কেটে বন উজাড় করছি। এসব কাজের বিরূপ প্রভাব পড়ছে প্রকৃতিতে। তাই দেখা দিয়েছে অসহনীয় তীব্র তাপপ্রবাহ।
অথচ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে আমরা এসব ক্ষতি থেকে বাঁচতে পারি। কারণ, আমাদের সুস্থভাবে বাঁচার জন্য সুন্দর ও নির্মল পরিবেশ-প্রকৃতি অপরিহার্য। নির্মল পরিবেশ বজায় রাখতে ইসলাম আমাদেরকে বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে।
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পানি ও গাছের ভূমিকা অনন্য। পানি প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রধান উপাদান। পানি ছাড়া প্রাণীর অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। সে জন্য পানিকে নিরাপদ ও দূষণমুক্ত রাখতে হবে। নিজেদের কোনো কর্মে যেন পানি দূষিত না হয় সে ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানিকে পবিত্র, নিরাপদ ও দূষণমুক্ত রাখতে সবাইকে সচেতন করেছেন। হযরত আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমাদের কেউ যেন আবদ্ধ পানিতে প্রস্রাব করে অতঃপর সেখানে গোসল না করে।’ (বুখারী, হাদীসক্রম : ২৩৬; মুসলিম, হাদীসক্রম : ৬৮২)
বৃক্ষ-তরুলতা প্রকৃতির প্রাণ এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অতি প্রয়োজনীয় উপাদান। কাজেই এই তীব্র তাপপ্রবাহ থেকে বাঁচতে বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যা করতে হবে। অপ্রয়োজনে বৃক্ষ-তরুলতাকে নষ্ট করা যাবে না। হযরত আনাস রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যদি নিশ্চিতভাবে জানো যে কিয়ামত এসে গেছে, তখন হাতে যদি একটি গাছের চারা থাকে, যা রোপণ করা যায়, তবে সেই চারাটি রোপণ করবে।’ (বুখারী, আদাবুল মুফরাদ, হাদীসক্রম : ৪৭৯; মুসনাদ আহমদ, হাদীসক্রম : ১৮৩)
অন্য হাদীসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি বিনা প্রয়োজনে গাছ কাটবে (যে গাছ মানুষের উপকার করত) আল্লাহ তার মাথা আগুনের মধ্যে নিক্ষেপ করবেন।’ (বায়হাকি, হাদীসক্রম : ১৪০) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বৃক্ষরোপণ করতে উৎসাহ দিয়েছেন। এটিকে সাদকা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। জাবির রাযিয়াল্লাহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে মুসলমান কোনো বৃক্ষ রোপণ করে, তারপর তা থেকে কোনো মানুষ, পশু বা পাখি ভক্ষণ করে, এর বিনিময়ে কিয়ামতে তার জন্য একটি সদকার সাওয়াব রয়েছে।’ (মুসলিম, হাদীসক্রম : ৪০৫৩)
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও তাপপ্রবাহ কমিয়ে আনতে পরিকল্পিতভাবে বৃক্ষরোপণ করা এখন সময়ের দাবি। কারণ, বৃক্ষ বাতাসে জলীয়বাষ্পের ক্ষমতা বাড়িয়ে আবহাওয়াকে শীতল রাখে। প্রচুর বৃষ্টিপাতেও বৃক্ষরাজি বিশেষ সহায়ক।
পরিবেশ রক্ষায় মসজিদের ইমাম, খতিব ও ধর্মীয় বক্তাদেরও ভূমিকা অনস্বীকার্য। প্রত্যন্ত অঞ্চলের অসচেতন সাধারণ মুসলমানদের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতা তৈরিতে মসজিদের মিম্বার ও ওয়াজের মঞ্চ হতে পারে চমৎকার ক্ষেত্র। কুরআন-হাদীসের আলোকে গঠনমূলক নির্দেশনা নিয়ে এ ক্ষেত্রে আলেমদেরও এগিয়ে আসতে হবে। পৃথিবীর ভারসাম্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণে ইসলাম যে নীতিমালা দিয়েছে, তা যদি মুসলিম স্কলাররা ঐক্যবদ্ধভাবে বিশ্বমানবকে, বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বে তুলে ধরেন, তাহলে হয়তো পরিবেশ সংরক্ষণে মুসলমানেরা আরও বেশি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবে।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এই তাপপ্রবাহ থেকে হেফাজত করুন এবং পরিবেশ রক্ষায় আমাদের সবাইকে সচেতন হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমীন।
-সালাহ উদ্দীন তারেক
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, মাসিক হেফাজতে ইসলাম
প্রতিষ্ঠাতা : শায়খ আল্লামা লুৎফুর রহমান বর্ণভী রহ.
নিবন্ধন নম্বর : চ-৪৭৩/০৫
প্রতিষ্ঠাতা : শায়খ আল্লামা লুৎফুর রহমান বর্ণভী রহ.
নিবন্ধন নম্বর : চ-৪৭৩/০৫
কপিরাইট © ২০২৪ | মাসিক হেফাজতে ইসলাম, আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলামের মুখপত্র। Developed By Shabaka IT