তাফসীরে সূরা বুরূজ [আয়াত-ক্রম : ১-৭]

وَالسَّمَاءِ ذَاتِ الْبُرُوجِ (১)

 وَالْيَوْمِ الْمَوْعُودِ (২)

 وَشَاهِدٍ وَمَشْهُودٍ (৩)

 قُتِلَ أَصْحَابُ الْأُخْدُودِ (৪)

 النَّارِ ذَاتِ الْوَقُودِ (৫)

 إِذْ هُمْ عَلَيْهَا قُعُودٌ (৬)

 وَهُمْ عَلَى مَا يَفْعَلُونَ بِالْمُؤْمِنِينَ شُهُودٌ (৭)

তরজমা

(১) শপথ বুরূজ (বড় বড় তারকা)-বিশিষ্ট আকাশের।

(২) এবং প্রতিশ্রুত দিবসের।

(৩) শপথ উপস্থিত-এর এবং যাতে উপস্থিত হয় তার।

(৪) লাভা গর্তের অধিকারীরা লা’নতপ্রাপ্ত হয়েছে।

(৫) ইন্ধনযুক্ত অগ্নির অধিকারীরা

(৬) যখন তারা তার আশেপাশে বসা ছিল

(৭) এবং তারা মুমিনদের সাথে যা (কর্মকণ্ড) করছে তা প্রত্যক্ষ করছিল।

মূল আলোচ্য বিষয়

কাফেররা মুসলমানদের উপর যে নির্যাতনের স্টিমরুলার চালিয়েছিল, এ ব্যাপারে তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে। পাশাপাশি মুসলমানদেরকে সান্ত্বনা প্রদান করা হয়েছে যে, যদি তারা কঠিন নির্যাতনের মুখে ধৈর্য ধারণ করতে পারে, তাহলে তাদের জন্য রয়েছে মহা পুরস্কার।

আসহাবুল উখদুদের ঘটনা

রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মের সত্তর বছর পূর্বের ঘটনা। ইউসুফ যুনওয়াস নামে ইয়েমেনে এক কাফের বাদশাহ ছিল। তার দরবারে থাকত এক জাদুকর। জাদুকরের মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এলে সে বাদশার নিকট আবেদন করল যে, একজন বিচক্ষণ বালক দিন। যাকে আমার যাদুবিদ্যা শিক্ষা দেব। যাতে আমার মৃত্যুর পর যাদুবিদ্যা বিলীন না হয়ে যায়। কথামতো বাদশাহ একজন চতুর-চালাক বালকের ব্যবস্থা করলেন। বালকটির নাম ছিল আবদুল্লাহ ইবনে তাযের। যাদুবিদ্যা শিক্ষার উদ্দেশ্যে বালকটি প্রতিদিন জাদুকরের নিকট যাতায়াত করত। যাতায়াতপ্রাক্কালে একদিন প্রথিমধ্যে এক পাদ্রীর সাথে সাক্ষাৎ ঘটে। পাদ্রী ছিলেন তখনকার সময়ের খ্রিষ্ট ধর্মের অনুসারী একজন খাঁটি মুমিন। বালকটি পাদ্রীর সাহচর্য লাভে ধন্য হয়ে ইসলাম গ্রহণ করে পাদ্রীর দীক্ষায় দীক্ষিত হয়ে ধীরে ধীরে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে অলৌকিকতার স্তরে উন্নীত হয়।

একদিন যাতায়াতকালে বালকটি লক্ষ্য করল-একটি হিংস্র জন্তু মানুষের পথরোধ করে আছে। বালকটি একটি কংকর হাতে নিয়ে দুআ করল, আয় আল্লাহ! পাদ্রীর ধর্ম যদি সত্য হয়, তাহলে আমার কঙ্কর আঘাতে যেন জন্তুটি মারা যায়। অলৌকিকভাবে প্রস্তরাঘাতে জন্তুটি মারা যায়। ঘটনার পরপরই লোকমুখে বালকটির প্রশংসা ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণ লোকজনের আনাগোনা বাড়তে থাকে। এক অন্ধলোক এসে বলতে লাগল-আমার চক্ষু ভালো করে দিন। বালকটি জবাব দিল, সুস্থ করার মালিক আল্লাহ। তুমি যদি আল্লাহর উপর ঈমান আন তাহলে আমি আল্লাহর দরবারে দুআ করব, হয়তো আল্লাহ ভালো করে দেবেন। সে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ঈমান আনল এবং বালকটির দুআর বরকতে আল্লাহপাক তার চক্ষু ভালো করে দিলেন। বালকটির অসাধারণ ক্ষমতার বিষয়ে তৎকালীন যালিম শাসক অবগত হলে তাকে রাজদরবারে হাজির হওয়ার নির্দেশ প্রদান করে। তখন বালকটিকে হাজির করা হলো। রাজা বলল, বৎস! জাদু বিদ্যায় তুমি এত পারদর্শী হয়েছ যে তুমি জন্মান্ধ ও অন্যান্য রোগীকে সুস্থ করতে পার? বালকটি বলল, আমি কোনো লোককে সুস্থ করি না, সুস্থ করেন স্বয়ং আল্লাহপাক। রাজা তাকে বন্দী করল এবং তার প্রতি চরম নির্যাতন করতে লাগল এবং তাকে বলল, তোমার ধর্ম পরিত্যাগ করো। কিন্তু সে এতে অস্বীকৃতি জানায়। এবার রাজা কয়েক ব্যক্তিকে আদেশ দিল, বালকটিকে অমুক পাহাড়ে নিয়ে যাও। যদি সে ধর্ম ত্যাগে প্রস্তুত হয়, তবে ভালো কথা। অন্যথায় তাকে পাহাড়ের উচ্চ চূড়ায় রেখে নিচে নিক্ষেপ করো। রাজার নির্দেশে লোকেরা তাকে পাহাড়ে নিয়ে যায়। বালকটি দুআ করল, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে এদের যুলুম থেকে রক্ষা করো। তখন সঙ্গে সঙ্গে পাহাড়ে ভূমিকম্প শুরু হলো এবং রাজার নিয়োজিত লোকেরা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল। সুস্থ অবস্থায় বালকটি রাজার নিকট ফিরে গেল। রাজা জিজ্ঞেস করল, তোমার সাথীদের কী হয়েছে? সে বলল, আল্লাহপাক আমাকে তাদের হাত থেকে রক্ষা করেছেন। এরপর রাজা অন্য কিছু লোককে বলল, তোমরা তাকে নৌকায় উঠিয়ে সমুদ্রে নিয়ে যাও। যদি সে ধর্ম ত্যাগ করে তবে ভালো কথা, অন্যথায় সমুদ্রে নিক্ষেপ করো। লোকেরা বালকটিকে নিয়ে গেল। সে দুআ করল, হে আল্লাহ! যদি তোমার মর্জি হয়, তবে তুমি আমাকে এদের হাত থেকে রক্ষা করো। সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্রে ঝড় উঠল, তাদের নৌকাটি নিমজ্জিত হলো। রাজার লোকগুলোর সলিল সমাধি ঘটল এবং বালকটি নিরাপদে রাজার দরবারে ফিরে এল। বালকটি রাজাকে বলল, যে পর্যন্ত তুমি আমার কথার উপর আমল না করবে, সে পর্যন্ত আমাকে হত্যা করতে পারবে না। রাজা জিজ্ঞাসা কলল, সে কথাটি কী?  বালকটি বলল, ‘কোনো ময়দানে জনসাধারণকে একত্রিত করো। আমাকে কোনো খুঁটির সাথে বেধে ঝুলিয়ে দাও এবং আমার তীরগুলো থেকে একটি তীর নিয়ে بسم الله رب الغلام (এই বালকের প্রতিপালক আল্লাহপাকের নামে) বলে আমার প্রতি নিক্ষেপ করো।

তা-ই করা হলো এবং এভাবে বালকটির মৃত্যু হলো।

এই দৃশ্য দেখে সমবেত জনতা তিনবার চিৎকার করে বলল, আমরাও এই বালকের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান এনেছি। সকল লোক এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনল আর বালকটি তার প্রতিপালকের নামে প্রাণ উৎসর্গ করল।

সত্য ও সুন্দরের প্রহরায় ৪৮ বছর

প্রতিষ্ঠাতা : শায়খ আল্লামা লুৎফুর রহমান বর্ণভী রহ.
নিবন্ধন নম্বর : চ-৪৭৩/০৫

সত্য ও সুন্দরের প্রহরায় ৪৮ বছর

প্রতিষ্ঠাতা : শায়খ আল্লামা লুৎফুর রহমান বর্ণভী রহ.
নিবন্ধন নম্বর : চ-৪৭৩/০৫

কপিরাইট © ২০২৪ | মাসিক হেফাজতে ইসলাম, আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলামের মুখপত্র। Developed By Shabaka IT