وَ السَّمَآءِ ذَاتِ الرَّجۡعِ ـ
(১১) শপথ বারবার বর্ষণশীল আসমানের।
وَ الۡاَرۡضِ ذَاتِ الصَّدۡعِ ـ
(১২) এবং শপথ যমীনের, যা (বীজ অংকুরিত হওয়ার সময়) বিদীর্ণ হয়।
اِنَّهٗ لَقَوۡلٌ فَصۡلٌ ـ
(১৩) নিশ্চয় পবিত্র কুরআন (হক ও বাতিলের মধ্যে) মীমাংসাকারী মহান বাণী ।
وَّ مَا هُوَ بِالۡهَزۡلِ ـ
(১৪) আর তা অনর্থক কোনো (কথা) নয়।
اِنَّهُمۡ یَکِیۡدُوۡنَ کَیۡدًا ـ
(১৫) নিশ্চয় তারা চক্রান্ত করছে।
وَّ اَکِیۡدُ کَیۡدًا ـ
(১৬) আর আমিও (তাদের চক্রান্ত ব্যর্থ করার জন্যে) কৌশল করছি।
فَمَهِّلِ الۡکٰفِرِیۡنَ اَمۡهِلۡهُمۡ رُوَیۡدًا ـ
(১৭) অতএব, কাফিরদেরকে অবকাশ দাও, মাত্র কয়েকদিনের জন্যে অবকাশ দাও।
সংক্ষিপ্ত আলোচনা
আলোচ্য সূরাটির প্রথমাংশ অর্থাৎ ১ থেকে ১০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাআলা পুনরুত্থান বিষয়ে আলোচকপাত করেছেন। আর শেষাংশ অর্থাৎ বক্ষ্যমাণ আলোচনার অংশে (৭-১৭ আয়াতে) কুরআনে করীমের সত্যতা প্রমাণ এবং মানবজাতির প্রতি সূরাটির দিকনির্দেশনা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
তাফসীর
আল্লাহ তাআলা وَالسَّمَآءِ ذَاتِ الرَّجۡعِ، وَ الۡاَرۡضِ ذَاتِ الصَّدۡعِ বলে কুরআনুল কারীমের বিষয়টি তুলে ধরেছেন। আলোচ্য আয়াতে رجع শব্দটির আভিধানিক অর্থ হলো-ফিরে আসা। তবে পরোক্ষভাবে আরবী ভাষায় এ শব্দটি বৃষ্টির জন্য ব্যবহার করা হয়। কারণ, বৃষ্টি মাত্র একবার বর্ষিত হয়েই খতম হয়ে যায় না বরং একই মওসুমে বারবার এবং কখনো মওসুম ছাড়াই একাধিকবার ফিরে আসে এবং যখন-তখন বর্ষিত হয়। সুতরাং এর অর্থ পরপর বর্ষিত বৃষ্টি। কাতাদাহ রহ. বলেন, আকাশের বৃষ্টি প্রতিবছর মানুষের রিযিক নিয়ে আসে। যদি তা নিয়ে না আসত তবে মানুষ ও জীব-জানোয়ারের ধ্বংস অনিবার্য হতো।
বৃষ্টিকে প্রত্যাবর্তনকারী বলার আরো একটি কারণ এটাও হতে পারে পৃথিবীর সমুদ্রগুলো থেকে পানি বাষ্পের আকারে উঠে যায়। আবার এই বাষ্পই পানির আকারে পৃথিবীতে বর্ষিত হয়।
বৃষ্টিপাত ও ভূমির বিদীর্ণ হওয়ার শপথ করার দ্বারা আল্লাহ তাআলা এদিকে ইশারা করেছেন যে, বৃষ্টির পানি সব জায়গায় সমানভাবে বর্ষিত হয়, কিন্তু সব ভূমি তা দ্বারা উপকৃত হয় না। তা দ্বারা উপকৃত হয় কেবল সেই ভূমিই যার ঊর্বরা শক্তি আছে, ফসল ফলানোর যোগ্যতা আছে। এমনিভাবে কুরআন মাজীদও সকলের জন্যই হিদায়াতের বাণী ও পথের দিশারি, কিন্তু এর দ্বারা উপকৃত হয় কেবল এমন লোক, যার অন্তরে সত্য গ্রহণের যোগ্যতা আছে।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয় পবিত্র কুরআন (হক ও বাতিলের মধ্যে) মীমাংসাকারী মহান বাণী। আর তা মোটেও অনর্থক নয়, অহেতুক নয়, খেল-তামাশার কথা নয়; বরং তা ধ্রুব সত্য, মানুষের অতীত বর্তমান এবং ভবিষ্যত সম্বন্ধে পবিত্র কুরআনে যে ঘোষণা রয়েছে তা চিরন্তন সত্য, এর সত্যতায় বিন্দুমাত্রও সন্দেহের অবকাশ নেই, অতএব, প্রত্যেকের কর্তব্য হলো বিনীত হয়ে অন্তরে ভয়-ভীতি নিয়ে পবিত্র কুরআন পাঠ করা এবং শ্রবণ করা, পবিত্র কুরআনের মহান শিক্ষার অনুশীলন করা এবং এর বাস্তবায়নে আত্মনিয়োগ করা।
আল্লাহ তাআলা বলেন- إِنَّهُمْ يَكِيْدُوْنَ كَيْدًا অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও কুরআনকে মিথ্যা প্রতিপন্নকারীরা সত্যকে অপসারণ করার জন্য অপকৌশল অবলম্বন করে। আল্লাহ তাআলা বলছেন, আমিও কৌশল করি। অর্থাৎ তিনি সত্যকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য তাদের অপকৌশলকে প্রতিহত করেন। كَيْدًا গোপন কৌশল অবলম্বন করাকে বলা হয়। এ কৌশল মন্দ উদ্দেশ্যে হলে তা নিন্দনীয়।
প্রত্যেক যুগের কাফিররা ইসলাম ও মুসলিমদেরকে সমূলে ধ্বংস করার জন্য বিভিন্ন চক্রান্ত করেছে, এখনো করছে, ভবিষ্যতেও করবে। আল্লাহ তাআলা কুরআনের অন্যত্র ইরশাদ করেন-
يُرِيْدُوْنَ لِيُطْفِئُوْا نُوْرَ اللّٰهِ بِأَفْوَاهِهِمْ ط وَاللّٰهُ مُتِمُّ نُوْرِه۪ وَلَوْ كَرِهَ الْكٰفِرُوْنَ
তরজমা : তারা আল্লাহর নূর তাদের মুখের ফুঁৎকারে নিভিয়ে দিতে চায়; কিন্তু আল্লাহ তাঁর নূরকে পরিপূর্ণ করবেনই যদিও কাফিররা তা অপছন্দ করে। (সূরা সফ : ৮)
কিন্তু তাদের চক্রান্ত সফল হবে না, আল্লাহ তাআলা ইসলামকে অবশ্যই প্রতিষ্ঠিত করবেন।
সূরার সর্ব শেষে আল্লাহ তাআলা বলেন-
فَمَہِّلِ الۡکٰفِرِیۡنَ اَمۡہِلۡہُ رُوَیۡدًا
তরজমা : ‘অতএব কাফিরদেরকে অবকাশ দাও, তাদেরকে অবকাশ দাও কিছু কালের জন্য।’ অর্থাৎ তাদের জন্য তড়িঘড়ি শাস্তি প্রার্থনা করো না বরং তাদেরকে কিছু সময় অবকাশ দাও। رُوَيْدًا শব্দটি قليلا অর্থে ব্যবহার হয়েছে। এ অবকাশ দেওয়াটা আল্লাহ তাআলার একটি কৌশল। কুরআনের অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেন-
نُمَتِّعُهُمْ قَلِيْلًا ثُمَّ نَضْطَرُّهُمْ إِلٰي عَذَابٍ غَلِيْظٍ
তরজমা : আমি অল্প সময়ের জন্য তাদেরকে সুখ-সম্ভোগ দেব, পুনরায় তাদেরকে বাধ্য করব কঠিন শাস্তি ভোগ করতে। (সূরা লুকমান : ২৪)
অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَالَّذِیْنَ کَذَّبُوْا بِاٰیٰتِنَا سَنَسْتَدْرِجُھُمْ مِّنْ حَیْثُ لَا یَعْلَمُوْنَﰅوَاُمْلِیْ لَھُمْﺚ اِنَّ کَیْدِیْ مَتِیْنٌ
তরজমা : যারা আমার নিদর্শনকে প্রত্যাখ্যান করে আমি তাদেরকে এমনভাবে ক্রমে ক্রমে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাই যে, তারা জানতেও পারে না। আমি তাদের অবকাশ দিয়ে থাকি, আমার কৌশল অত্যন্ত বলিষ্ঠ। (সূরা আরাফ : ১৮২-১৮৩) অতএব ইসলাম ও মুসলিমদের শত্রু পূর্বেও ছিল, এখনো আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। সেই শত্রুরা যতই চক্রান্ত করুক না কেন মুসলিমদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না, ইনশাআল্লাহ। তাই মুসলিমদের উচিত হবে কাফিরদের শক্তি ও সংখ্যাকে ভয় না করে ইসলামের জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া।