মানব জাতির আদি পিতা হলেন হযরত আদম আলাইহিস সালাম। যে কারণে তাঁকে ‘আবুল বাশার’ বা মানবজাতির জনক এবং মানব জাতিকে ‘বনী আদম’ বা আদমের বংশধর বলা হয়। হযরত আদম আ. পৃথিবীতে আগত প্রথম মানুষ এবং প্রথম পয়গাম্বর। আল্লাহ তাআলা তাঁকে সরাসরি আপন কুদরতি হাতে তৈরি করেছেন এবং তাঁরই বাম পাঁজরের হাড় থেকে তাঁর স্ত্রী মানব জাতির আদি মাতা হযরত হাওয়া আলাইহাস সালামকে বের করেছেন।
প্রথমে তাঁদের উভয়কে জান্নাতের ভেতরে বসবাস করতে দেন তারপর পৃথিবীতে প্রেরণ করেন।
কুরআনুল কারীমের নয়টি সূরার ২৫টি আয়াতে হযরত আদম আ.-এর নাম উল্লেখ করে তাঁর আলোচনা করা হয়েছে। অসংখ্য হাদীসে তাঁর সৃষ্টি, জান্নাতে অবস্থান, দুনিয়াতে আগমন, দুনিয়ার জীবন-যাপন, অতঃপর মৃত্যুবরণ-সহ জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে সবিস্তার আলোচনা করা হয়েছে। মুসনাদে আহমদের এক বর্ণনায় এসেছে, হযরত আদম আ.-এর শারীরিক গঠন ছিল ৬০ হাত দৈর্ঘ এবং সাত হাত প্রস্থ।
হযরত আদম আ.-এর প্রধানতম পাঁচটি শ্রেষ্ঠত্বের কথা স্বয়ং কুরআনুল কারীমের বিভিন্ন আয়াত থেকেই জানা যায়। সেগুলো হলোÑ
১. আল্লাহ পাক হযরত আদম আ.-কে পিতা-মাতা ছাড়া আপন কুদরতি হাতে সরাসরি সৃষ্টি করেছেন।
২. আল্লাহ পাক সরাসরি হযরত আদমের ভেতরে রূহ ফুঁকে দিয়েছেন।
৩. আল্লাহ পাক তাকে সরাসরি সকল বস্তুর নাম শিক্ষা দিয়েছেন।
৪. তাঁক সিজদা করার জন্য আল্লাহ পাক সরাসরি ফেরেশতাদের নির্দেশ করেছেন।
৫. সরাসরি মাটি থেকে কেবলমাত্র হযরত আদম আ.-কেই সৃষ্টি করা হয়েছে।
এছাড়াও তাঁর রয়েছে আরো অনেক বৈশিষ্ট্য। এই স্বল্প পরিসরে যার সবিস্তার আলোচনা সম্ভব নয়।
আদম সৃষ্টির মূল কাহিনী ও তৎসংশ্লিষ্ট কিছু বর্ণনা
আল্লাহপাক একদা ফেরেশতাদের ডেকে বললেন, ‘আমি পৃথিবীতে ‘খলীফা’ অর্থাৎ প্রতিনিধি সৃষ্টি করতে যাচ্ছি। তো বলো, এ বিষয়ে তোমাদের বক্তব্য কী?’ তাঁরা (সম্ভবত ইতিপূর্বে সৃষ্ট জিন জাতির তিক্ত অভিজ্ঞতার আলোকে) বললেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি কি পৃথিবীতে এমন কাউকে সৃষ্টি করতে চান, যারা সেখানে গিয়ে ফাসাদ সৃষ্টি করবে ও রক্তপাত ঘটাবে? অথচ আমরা সর্বদা আপনার হুকুম পালনে এবং আপনার গুণগান ও পবিত্রতা বর্ণনায় রত আছি।’ (এখানে ফেরেশতাদের উক্ত বক্তব্য আপত্তি করণার্থে ছিল না, বরং জানার জন্য ছিল।) আল্লাহ তাআলা তাঁদের উত্তরে বললেন, ‘আমি যা জানি, তোমরা তা জানো না। (সূরা বাকারা, আয়াত-ক্রম : ৩০)। অর্থাৎ আল্লাহ চান এ পৃথিবীতে এমন একটা সৃষ্টির আবাদ করতে, যারা হবে জ্ঞান ও ইচ্ছাশক্তিসম্পন্ন এবং তাঁরা নিজস্ব বিচার-বুদ্ধি ও চিন্তা-গবেষণা সহকারে স্বেচ্ছায়-সজ্ঞানে আল্লাহর বিধান সমূহের আনুগত্য করবে এবং তাঁর ইবাদাত করবে। ফেরেশতাদের মতো কেবল হুকুম তামিলকারী জাতি হবে না।
আল্লাহ তাআলা তাঁর ইচ্ছামাফিক হযরত আদম আলাইহিস সালামকে নিজ হাতে সৃষ্টি করলেন। দেহে ফুঁকে দিলেন রূহ। তারপর প্রথমেই তাঁর শিক্ষার বন্দোবস্ত করলেন। নিজেই শিক্ষা দিলেন তাঁকে। শিক্ষা দিলেন সবকিছুর নাম। ‘সবকিছুর নাম’ বলতে পৃথিবীর সূচনা থেকে লয় পর্যন্ত ছোট-বড় সকল সৃষ্টবস্তুর ইলম ও তা ব্যবহারের যোগ্যতা তাঁকে দিয়ে দেওয়া হলো। যা দিয়ে সৃষ্টবস্তু সমূহকে আদম ও বনী আদম নিজেদের অনুগত করতে পারে এবং তা থেকে ফায়েদা হাসিল করতে পারে। যদিও আল্লাহর অসীম জ্ঞানরাশির সাথে মানবজাতির সম্মিলিত জ্ঞানের তুলনা মহাসাগরের অথৈ জলরাশির বুক থেকে পাখির ছোঁ মারা এক ফোঁটা পানির সমতুল্য হবে না। বলা চলে যে, আদমকে দেওয়া সেই যোগ্যতা ও জ্ঞান-ভাÐাার যুগে যুগে তাঁর জ্ঞানী ও বিজ্ঞানী সন্তানদের মাধ্যমে বিতরিত হচ্ছে ও তার দ্বারা জগত-সংসার উপকৃত হচ্ছে।
হযরত আদম আলাইহিস সালামকে সবকিছুর নাম শিক্ষা দেওয়ার পর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের জন্য আল্লাহ তাআলা তাঁকে ফেরেশতাদের সম্মুখে পেশ করলেন। কুরআনুল কারীমে কেবল ফেরেশতাদের কথা উল্লেখিত হলেও সেখানে জিনদের সদস্য ইবলীসও উপস্থিত ছিল। (সূরা কাহফ : ৫০)। অর্থাৎ আল্লাহ চেয়েছিলেন, জিন ও ফেরেশতাÑ উভয় সম্প্রদায়ের উপরে আদম আ.-এর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হোক এবং বাস্তবে সেটাই হলো। তবে যেহেতু ফেরেশতাগণ জিনদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ও উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন, সেজন্য কেবল তাঁদের নাম নেওয়া হয়েছে।
আর দুনিয়াতে জিনদের ইতিপূর্বেকার উৎপাত ও অনাচার সম্বন্ধে ফেরেশতারা আগে থেকেই অবহিত ছিলেন, সেকারণে তাঁরা মানুষ সম্বন্ধেও একই ধরনের ধারণা পোষণ করেছিলেন এবং প্রশ্নের জবাবে নেতিবাচক উত্তর দিয়েছিলেন। উল্লেখ্য যে, আল্লাহ তাআলা জিন জাতিকে আগুন থেকে সৃষ্টি করে মানুষের আগে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছিলেন। পৃথিবীতে এসে তারা চরম অবাধ্যতা প্রদর্শন করে। ফলে তাদেরকে বিতাড়িত করে মানবজাতি সৃষ্টি করে পৃথিবীতে প্রেরণ করেন।
আদমের প্রতি সম্মান প্রদর্শন
হযরত আদম আ.-কে ফেরেশতাদের সম্মুখে পেশ করার পর আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদেরকে ওইসব বস্তুর নাম জিজ্ঞেস করলেন। কিন্তু সঙ্গত কারণেই তারা তা বলতে পারলেন না। তখন আল্লাহ তাআলা আদমকে সবকিছুর নাম বলার নির্দেশ দিলেন। আদম তৎক্ষণাৎ সবকিছুর নাম বলে দিলেন। ফলে ফেরেশতারা অকপটে তাঁদের পরাজয় মেনে নিলেন এবং আল্লাহর মহত্ব ও পবিত্রতা ঘোষণা করে বললেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে যতটুকু শিখিয়েছেন, তার বাইরে আমাদের কোনো জ্ঞান নেই। নিশ্চয় আপনি সর্বজ্ঞ ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন।’ (সূরা বাকারা, আয়াত-ক্রম : ৩২)।
অতঃপর আল্লাহ তাআলা তাদের সবাইকে আদমের সম্মুখে সম্মানপ্রদশর্নের নিমিত্তে সিজদা করতে বললেন। সবাই সিজদা করলেন, কেবল ইবলীস ব্যতীত। সে অস্বীকার করল ও অহংকারে স্ফীত হয়ে এ আদেশ প্রত্যাখ্যান করল। ফলে সে কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল। (সূরা বাকারা, আয়াত-ক্রম : ৩৪)। ইবলীস ওই সময় নিজের পক্ষে যুক্তি পেশ করে বলল, ‘আমি ওর চাইতে উত্তম। কেননা আপনি আমাকে আগুন দ্বারা সৃষ্টি করেছেন আর ওকে সৃষ্টি করেছেন মাটি দিয়ে।’ আল্লাহ তাআলা বললেন, ‘তুই বের হয়ে যা। তুই অভিশপ্ত! তোর উপরে আমার অভিশম্পাত রইল পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত।’ (সূরা সোয়াদ, আয়াত-ক্রম : ৭৬-৭৮; সূরা আরাফ, আয়াত-ক্রম : ৭/১২)।
স্ত্রী হাওয়া আ.-এর সৃষ্টি ও জান্নাতে অবস্থান
সিজদা অনুষ্ঠানের পর আল্লাহ তাআলা আদমের জুড়ি হিসাবে তাঁর অবয়ব হতে একাংশ নিয়ে তথা তাঁর পাঁজরের হাড়ের অংশ হতে তাঁর স্ত্রী হাওয়াকে সৃষ্টি করলেন। সরাসরি মাটি থেকে সৃজিত আদমের নাম হলো ‘আদম’ এবং জীবন্ত আদমের পাঁজর হতে সৃষ্ট তাঁর স্ত্রীর নাম হলো ‘হাওয়া’। (কুরতুবী)। অতঃপর তাঁদের উদ্দেশ্যে আল্লাহ পাক বললেন, ‘তোমরা দুজন জান্নাতে বসবাস করো এবং সেখান থেকে যা খুশি খেয়ে বেড়াও। তবে সাবধান! এই গাছটির নিকটে যেয়ো না। তাহলে তোমরা সীমালংঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।’ (সূরা বাকারা, আয়াত-ক্রম : ২/৩৫)।
এতে বুঝা যায় যে, ফেরেশতাগণের সিজদা কেবল আদমের জন্য ছিল, হাওয়ার জন্য নয়। দ্বিতীয়তঃ সিজদা অনুষ্ঠানের পরে আদমের অবয়ব থেকে হাওয়াকে সৃষ্টি করা হয়, পূর্বে নয়। তিনি পৃথক কোনো সৃষ্টি ছিলেন না। এতে পুরুষের প্রতি নারীর অনুগামী হওয়া প্রমাণিত হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘পুরুষেরা নারীদের উপর কর্তৃত্বশীল।’ (সূরা নিসা, আয়াত-ক্রম : ৩৪)।
অতঃপর বহিষ্কৃত ইবলীস তার প্রথম টার্গেট হিসাবে আদম ও হাওয়া আলাইহিমাস সালামের বিরুদ্ধে প্রতারণার জাল নিক্ষেপ করল। সেমতে প্রথমে সে তাঁদের খুব আপনজন বনে গেল এবং নানা কথায় তাঁদের ভুলাতে লাগল। এক পর্যায়ে সে বলল, ‘আল্লাহ যে তোমাদেরকে ওই গাছটির নিকটে যেতে নিষেধ করেছেন, তার কারণ হলো এই যে, তোমরা তাহলে ফেরেশতা হয়ে যাবে কিংবা তোমরা এখানকার চিরস্থায়ী বাসিন্দা হয়ে যাবে।’ অতঃপর সে কসম খেয়ে বলল, ‘আমি অবশ্যই তোমাদের হিতাকাক্সক্ষী।’ (সূরা আরাফ, আয়াত-ক্রম : ২০-২১)।
‘এভাবেই সে আদম ও হাওয়াকে সম্মত করে ফেলল এবং তার প্রতারণার জালে আটকে গিয়ে তাঁরা উক্ত নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল আস্বাদন করে ফেললেন। ফলে সাথে সাথে তাঁদের সমূহ শরীর প্রকাশিত হয়ে পড়ল এবং তারা তড়িগড়ি করে গাছের পাতা দিয়ে তা ঢাকতে লাগলেন। আল্লাহ তাআলা তাঁদেরকে ডেকে বললেন, ‘আমি কি তোমাদেরকে এ বৃক্ষ থেকে নিষেধ করিনি এবং বলিনি যে, ‘নিশ্চয়, শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রæ?’ (সূরা আরাফ, আয়াত-ক্রম : ২২)। তখন তাঁরা অনুতপ্ত হয়ে বললেন, ‘হে আমাদের রব! আমরা নিজেদের উপর যুলুম করে ফেলেছি। যদি আপনি আমাদের ক্ষমা না করেন, তবে নির্ঘাত আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব।’ (সূরা আরাফ, আয়াত-ক্রম : ২৩)। আল্লাহ তাআলা তখন বললেন, ‘তোমরা সকলেই এখান থেকে (জান্নাত থেকে) নেমে যাও। তোমরা একে অপরের শত্রæ। তোমাদের অবস্থান হবে পৃথিবীতে এবং সেখানেই তোমরা একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত সম্পদরাজি ভোগ করবে।’ (সূরা আরাফ, আয়াত-ক্রম : ২৪)। আল্লাহ তাআলা আরও বললেন, ‘তোমরা পৃথিবীতেই জীবনযাপন করবে, সেখানেই মৃত্যুবরণ করবে এবং সেখান থেকেই তোমরা পুনরুত্থিত হবে।’ (সূরা আরাফ, আয়াত-ক্রম : ২৫)।
উল্লেখ্য যে, ইবলীসের কথায় সর্বপ্রথম হাওয়া আলাইহাস সালাম প্রতারিত হন, অতঃপর তাঁর মাধ্যমে আদম আলাইহিস সালাম প্রতারিত হন বলে যে কথা চালু আছে কুরআনে কারীমে এর কোনো সমর্থন পাওয়া যায় না। সহীহ হাদীসেও স্পষ্ট কিছু নেই। এ বিষয়ে তাফসীরে তাবারীতে ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে যে বর্ণনা এসেছে, তা নির্ভরযোগ্য নয়। দ্বিতীয়তঃ জান্নাত থেকে অবতরণের নির্দেশ তাঁদের অপরাধের শাস্তি স্বরূপ ছিল না। কেননা, এটা ছিল তওবা কবুলের পরের ঘটনা। অতএব এটা হয়তো-বা তাঁকে শিষ্টাচার শিক্ষা দানের জন্য ছিল।
বরং সঠিক কথা এই যে, এটা ছিল আল্লাহর পূর্ব নির্ধারিত ও দূরদর্শী পরিকল্পনারই অংশ। কেননা, জান্নাত হলো কর্মফল লাভের স্থান, কর্মের স্থান নয়। তাছাড়া জান্নাতে মানুষের বংশ বৃদ্ধির সুযোগ নেই। এজন্য দুনিয়ায় নামিয়ে দেওয়া জরুরি ছিল।
প্রথমবার আদেশ দানের পরে পুনরায় স্নেহ ও অনুগ্রহ-মিশ্রিত আদেশ দিয়ে বললেন, ‘তোমরা সবাই নেমে যাও।’ অতঃপর পৃথিবীতে আল্লাহর খলীফা হওয়ার মহান মর্যাদা প্রদান করে বললেন, ‘তোমাদের নিকটে আমার পক্ষ থেকে হেদায়াত অবতীর্ণ হবে। যারা তার অনুসরণ করবে, তাদের জন্য কোনো ভয় বা চিন্তার কারণ থাকবে না। কিন্তু যারা তা প্রত্যাখ্যান করবে ও মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে, তারা হবে জাহান্নামের অধিবাসী এবং সেখানে তাদেরকে অনন্তকাল ধরে অবস্থান করতে হবে।’ (সূরা বাকারা, আয়াত-ক্রম : ৩৮-৩৯)।
উল্লেখ্য যে, নবীগণ হলেন নিষ্পাপ এবং হযরত আদম আলাইহিস সালাম ছিলেন নিঃসন্দেহে নিষ্পাপ। তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো নিষিদ্ধ কর্মে জড়িত হননি। বরং শয়তানের প্ররোচনায় প্রতারিত হয়ে সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ বৃক্ষের নিকটবর্তী হওয়ার নিষেধাজ্ঞার কথাটি ভুলে গিয়েছিলেন। যেমন অন্য আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, ‘অতঃপর আদম ভুলে গেল এবং আমি তার মধ্যে (সংকল্পের) দৃঢ়তা পাইনি।’ ( সূরা তহা, আয়াত-ক্রম : ১১৫)।
তাছাড়া উক্ত ঘটনার সময় তিনি নবী হননি বরং পদস্খলনের ঘটনার পরে আল্লাহ তাআলা তাঁকে নবী মনোনীত করে দুনিয়ায় পাঠান এবং দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।’ (সূরা আরাফ, আয়াত-ক্রম : ১২২)।
এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, ইবলীসের ক্ষেত্রে আল্লাহ বললেন, ‘তুমি জান্নাত থেকে বেরিয়ে যাও। নিশ্চয় তুমি অভিশপ্ত।’ (সূরা হিজর, আয়াত-ক্রম : ৩৪; সূরা আ‘রাফ, আয়াত-ক্রম : ১৮)। অন্যদিকে আদম ও হাওয়ার ক্ষেত্রে বললেন, ‘তোমরা নেমে যাও।’ (সূরা বাকারা, আয়াত-ক্রম : ৩৬; সূরা আরাফ, আয়াত-ক্রম : ২৪)। এতে ইঙ্গিত রয়েছে যে, ইবলীস কখনোই আর জান্নাতে ফিওে যেতে পারবে না। কিন্তু বনী আদমের ঈমানদারগণ পুনরায় ফিওে যেতে পারবে, ইনশাআল্লাহ।
তাছাড়া আদম ও হাওয়াকে জান্নাতে বিচরণ করানোর পর পৃথিবীতে পাঠানোর মধ্যে সেই রহস্যও রয়েছে যে, বনী আদম যাতে অবগত হতে পারে—তাদের আসল ঠিকানা হলো জান্নাত; যেখান থেকে তারা পৃথিবীতে এসেছে নিজের আমলনামাকে সাজানোর জন্য।