দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি বর্তমানে দেশের জাতীয় সমস্যাগুলোর অন্যতম। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম এমন অস্বাভাবিক, অনাকাঙ্ক্ষিত এবং আকস্মিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে যে, সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস অবস্থা। ফলে স্বল্প আয়ের মানুষ থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের জীবনধারণ ক্রমশ দুর্বিষহ হয়ে পড়ছে।
বাজারের ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই বললেই চলে। একবার যে পণ্যের দাম বাড়ে, তা আর কমে না। সরকারি বিভিন্ন সংস্থা এ ব্যাপারে কাজ করলেও, তা তেমন কার্যকর ভূমিকা না রাখায় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আসছে না।
দ্রব্যমূল্যের এমন ঊর্ধ্বগতি চলতে থাকলে অতি দ্রুত আমাদের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়বে। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাহত হবে। তাই এখনই সরকারকে যুগোপযোগী ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ইসলামের কালজয়ী সুচিন্তিত নীতিমালা ও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। ইসলামের বাজার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, অনাকাঙ্ক্ষি মূল্যস্ফীতি রোধ এবং সর্বোপরি বাজারের উদ্বেগজনক পরিস্থিতি ও অস্থিতিশীলতা দূর করা সম্ভব।
বাজার দর নিয়ন্ত্রণে ইসলামের সাধারণ নীতি হলো পণ্য উৎপাদক পণ্যের মূল্য নির্ধারণে স্বাধীনতা ভোগ করবে। সাধারণ অবস্থায় রাষ্ট্র পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করবে না। কেননা পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে দিলে উৎপাদক পণ্যের মান কমিয়ে দিতে পারে। তবে দ্রব্যমূল্য যদি অস্বাভাবিক রকম হয় এবং সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যায়, তবে ইসলাম দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের অনুমতি দিয়েছে।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায় মজুদদারির মাধ্যমে। ইসলাম অধিক মুনাফার লোভে মজুদদারি নিষিদ্ধ করেছে। এ প্রসঙ্গে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘পাপাচারী ছাড়া অন্য কেউ মজুদদারি করে না।’ (তিরমিযী) ‘যে খাদ্যশস্য গুদামজাত করে সে অভিশপ্ত।’ (ইবনে মাজাহ) ‘যে ব্যক্তি ৪০ দিনের খাবার মজুদ রাখে, সে আল্লাহর জিম্মা থেকে বেরিয়ে যায়।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা) ‘যে ব্যক্তি খাদ্যশস্য গুদামজাত করে সে অপরাধী।’ (আল মু’জামুল কাবির) ‘আমদানিকারক রিযিকপ্রাপ্ত হয় আর মজুদদার হয় অভিশপ্ত।’ (দারেমী)
দ্রব্যমূল্য নির্ধারণের নীতিমালা বর্ণনা করতে গিয়ে ‘বাহরুর রায়েক’ গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘সরকার যখন দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ করতে চাইবে, তখন সংশ্লিষ্ট পণ্যের বাজারের গণ্যমান্য লোকদের একত্র করবে। ক্রেতাসাধারণকে সরকার উপস্থিত করবে। বিক্রেতারা কী দামে বিক্রি করছে এবং ক্রেতারা কী দামে কিনছে, তা জিজ্ঞেস করে সত্যতা যাচাই করবে। এরপর উৎপাদক, আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হয় না, আবার ক্রেতাসাধারণের ক্রয় ক্ষমতার সীমা ছাড়িয়ে না যায়, এমনভাবে মূল্য নির্ধারণ করে দেবে। সরকার কর্তৃক দ্রব্যমূল্য নির্ধারণের পর নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যে কেউ তা বিক্রি করলে সরকার বা বিচারক প্রথমত তাকে উপদেশ দেবেন। আবার তার ব্যাপারে একই অভিযোগ পাওয়া গেলে আবারো তাকে উপদেশ দেবেন। তৃতীয়বার তার সম্পর্কে একই অভিযোগ পাওয়া গেলে তাকে বন্দী করবেন, যাতে সে এমন জগণ্য তৎপরতা থেকে বিরত হয় এবং জনগণের দুর্ভোগ লাঘব হয়।’
ইসলামের দৃষ্টিতে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি আল্লাহর পক্ষ থেকে এক প্রকার শাস্তি। তাই আমাদেরকে পাপ পরিহার করে তওবা করে আল্লাহর পথে ফিরে আসতে হবে। অপচয় রোধ করতে হবে এবং এক ইঞ্চি জমিও যাতে অনাবাদি না থাকে সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। এমনটা করতে পরলে একদিকে যেমন খোদায়ী মদদ আসবে, ঠিক তেমনি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের অসৎ উদ্দেশ্যও নস্যাৎ হবে।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে দ্রব্যমূল্যের ভয়াবহতা থেকে হেফাজত করুন। আমীন।
সালাহ উদ্দীন তারেক
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক