সূরা ফাতিহা : তরজমা ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা

নামাযের প্রতি-রাকাতে আবশ্যকীয়ভাবে আমাদেরকে সূরা ফাতিহা তিলাওয়াত করতে হয়। তাহলে হিসাব করুন তো পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে প্রতিদিন আমরা কত বার সূরাটি তিলাওয়াত করি! নফল নামায ও সূরা ফাতিহা-সম্বলিত অন্যান্য আমলের হিসাব আনলে তো এ সংখ্যা আরও অনেক বেশি! কিন্তু আমরা কি এ সূরার তরজমা ও ব্যাখ্যার দিকে লক্ষ রাখি কখনো? বোঝার কি চেষ্টা করি, এখানে আল্লাহ তাআলা কী বলতে চেয়েছেন? আমরা তো বেশিরভাগ মানুষ কুরআনের তরজমা করতে পারি না, আরবী ভাষার সঙ্গে চিন-পেহচান না-থাকবার অজুহাতে অনেকে কুরআন বোঝারও চেষ্টা করি না। অনেকে আবার কুরআন তিলাওয়াত করি ঠিকই, কিন্তু বুঝে বুঝে তিলাওয়াতের প্রতি গুরুত্ব দিই না। অথচ কুরআন কেবল তিলাওয়াতের কিতাব না, বোঝার ও তদনুযায়ী আমল করার মহাগ্রন্থও।

তাছাড়া না-বুঝে কেবল তিলাওয়াতে সওয়াব থাকলেও, বুঝে বুঝে তিলাওয়াতে যে প্রশান্তি ও পুণ্য তা কি আর হাসিল হয়? উপরন্তু, নামাযের তিলাওয়াতে যদি অর্থ ও ব্যাখ্যার দিকে খেয়াল রাখা হয়, তিলাওয়াতকৃত আয়াতে আল্লাহ তাআলা কী বলছেন বুঝতে পারা যায়, তাহলে নামাযে যে একাগ্রতা ও বিনয় পয়দা হবে, নামাযেরই অন্য অবস্থায় তা কিন্তু পাওয়া মুশকিল। তাই আসুন, নিয়মিত কুরআন তিলাওয়াত তো অবশ্যই, তিলাওয়াতের সঙ্গে তাদাব্বুরের (বুঝে বুঝে তিলাওয়াত) ব্যাপারেও আমরা সচেষ্ট হই; মাদরাসায় পড়িনি, আরবী বুঝি না, কিংবা মাদরাসায় পড়লেও আরবীটা বুঝে উঠতে পারি না—এসব অজুহাত একপাশে রেখে রোজকার তিলাওয়াতে গ্রহণযোগ্য যেকোনো তাফসীরগ্রন্থের বাংলাভাষ্য পাশে রাখি; কিংবা প্রথমে সচেষ্ট হই ফযীলতপূর্ণ সূরাগুলোর তরজমা ও তাফসীর হৃদয়ঙ্গমে। একাগ্রচিত্তে এ প্রচেষ্টা জারি রাখলে ধীরে ধীরে কুরআনের বুঝ ও সমঝ আল্লাহই আপনার হৃদয়ে ঢেলে দেবেন।

কুরআন বোঝার এ প্রচেষ্টা আমরা সূরা ফাতিহা দিয়ে শুরু করতে পারি। কারণ প্রথমেই বলে এসেছি—নামাযের প্রতি-রাকাতে অবশ্যপাঠ্য হওয়ায় ইবাদাতগুজার যে-কাউকে রোজ অন্তত শতবার এ সূরা তিলাওয়াত করতে হয়। আমাদের দৈনন্দিন জীবনেও সূরাটির পাঠ ও ব্যবহার সবচেয়ে বেশি।

কুরআন বোঝার এ প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এখানে আমরা সূরা ফাতিহার তরজমা ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা একদম সংক্ষিপ্ত পরিসরে আলোচনার একটা প্রয়াস নিচ্ছি। তবে বাস্তবিক অর্থে উপকৃত হতে হলে নিম্নে বিবৃত আলোচনাগুচ্ছ বারবার পড়তে হবে এবং এমনভাবে হৃদয়ঙ্গম করতে হবে যাতে করে সূরাটি তিলাওয়াতের সময় পুরো আলোচনার একটি চিত্র চোখের তারায় ভাস্বর থাকে।

তরজমা দিয়েই তাহলে শুরু করা যাক!

بِسۡمِ اللّٰهِ الرَّحۡمٰنِ الرَّحِیۡمِ

পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহ তাআলার নামে শুরু করছি।

প্রথম আয়াত—

اَلۡحَمۡدُ لِلّٰهِ رَبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্য, যিনি সকল সৃষ্টিজগতের প্রতিপালক।

দ্বিতীয় আয়াত—

الرَّحۡمٰنِ الرَّحِیۡمِ

যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।

তৃতীয় আয়াত—

مٰلِکِ یَوۡمِ الدِّیۡنِ

যিনি বিচার-দিনের মালিক।

চতুর্থ আয়াত—

اِیَّاکَ نَعۡبُدُ وَ اِیَّاکَ نَسۡتَعِیۡنُ

আমরা কেবল আপনারই ইবাদাত করি এবং আপনার কাছেই সাহায্য চাই।

পঞ্চম আয়াত—

اِهۡدِ نَا الصِّرَاطَ الۡمُسۡتَقِیۡمَ

আমাদেরকে সরল পথ প্রদর্শন করুন।

ষষ্ঠ আয়াত—

صِرَاطَ الَّذِیۡنَ اَنۡعَمۡتَ عَلَیۡهِمۡ

সে-সমস্ত লোকের পথ, যাঁদেরকে আপনি নিয়ামাত দান করেছেন।

সপ্তম আয়াত—

غَیۡرِ الۡمَغۡضُوۡبِ عَلَیۡهِمۡ وَ لَا الضَّآلِّیۡنَ

তাদের পথ নয়, যাদের ওপর আপনার গযব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট।

সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা

উল্লিখিত তরজমায় খেয়াল করলে দেখবেন সূরা ফাতিহায় সাতটি আয়াত রয়েছে। প্রথম তিন আয়াত আল্লাহ তাআলার প্রশংসা সংবলিত এবং শেষ তিন আয়াতে মানুষের পক্ষ থেকে আল্লাহ তাআলার কাছে দুআ করার ধরন ও বিষয় বিবৃত হয়েছে। মাঝখানের চতুর্থ আয়াতটিতে প্রশংসা ও দুআর সংমিশ্রণ রয়েছে।

প্রথম তিন আয়াত

একটু বিশদে বোঝা যাক। দেখুন প্রথম আয়াতটি। اَلۡحَمۡدُ لِلّٰهِ মানে হচ্ছে সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্য। ‘সমস্ত প্রশংসা’র মানে হচ্ছে প্রশংসা বলতে যা কিছু বোঝায়, অর্থাৎ যেকোনো সময় যেকোনো প্রেক্ষিতে যে-কাউকে বা যে-কোনো কিছুকে উপলক্ষ বা উদ্দেশ্য করে যে-প্রশংসাই করা হোক না কেন, তা আল্লাহ তাআলার দিকেই প্রত্যাবর্তিত হয়। কীভাবে? ধরুন, আপনি কারও যোগ্যতার প্রশংসা করলেন, কিংবা কেউ সুন্দর করে তিলাওয়াত করতে পারে, আপনি তার প্রশংসা করলেন। কী জন্য করলেন? সে সুন্দর তিলাওয়াত করতে পারে বলে, কিংবা কোনো বিষয়ে সে অগাধ পাণ্ডিত্য লাভ করেছে বলে। এখন খেয়াল করুন তো, এই সুন্দর তিলাওয়াত কি সে করতে পারত যদি আল্লাহ তাকে সুললিত কণ্ঠ ও তিলাওয়াতের যোগ্যতা না দিতেন? এ পাণ্ডিত্য কি সে অর্জন করতে পারত যদি আল্লাহ তাকে তাওফীক না দিতেন? পারত না। তাহলে প্রশংসাটা মূলত কার হলো? আল্লাহ তাআলার!

আরেকটু ভেঙে বলি। মনোরম একটি বিল্ডিং দেখে বিল্ডিংটির যারপরনাই তারিফ করলেন আপনি। বললেন, এত চমৎকার ডিজাইনেও বিল্ডিং হয়! প্রশংসাটা আপনি তাহলে কার করলেন মূলত? বিল্ডিংয়ের? না, প্রশংসাটা মূলত করলেন বিল্ডিংয়ের নকশা যে এঁকেছে, ইঞ্জিনিয়ারের। সে সুন্দর প্ল্যান করতে পেরেছে বলেই বিল্ডিং সুন্দর হয়েছে। অনুরূপ পৃথিবীতে যা কিছুর প্রশংসাই আপনি করুন না কেন, এর সৃষ্টিকর্তা তো একমাত্র আল্লাহ। প্রশংসাটা তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তন করবে। এই হলো ‘সমস্ত প্রশংসা’ কথাটির খোলাসা। তবে এখানে আরেকটি কথা মনে রাখতে হবে, প্রশংসা কেবল ভালো ও উত্তম জিনিসের হয়, খারাপ কিবা অনুত্তম জিনিসের কোনো প্রশংসা হয় না। আবার কোনটা খারাপ আর কোনটা ভালো এর নির্ণয়কর্তা কেবল আপনার রব, আপনি নন, নয় কোনো মানুষও। তাই আপনি যেটাকে ভালো মনে করবেন, সেটাই ভালো হয়ে যাবে না, যদি না আপনার রব সেটাকে ভালো ও উত্তম বলেন।

প্রথম আয়াতের প্রথম অংশে আমরা আল্লাহ তাআলার প্রশংসার বিষয়টা পেলাম। পরবর্তী অংশ এবং দ্বিতীয় ও তৃতীয় আয়াতেও আল্লাহর প্রশংসা বিবৃত হয়েছে। প্রথম আয়াতের দ্বিতীয় অংশ رَبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ অর্থাৎ যিনি জগতসমূহের রব বা প্রতিপালক। এখানে আল্লাহ তাআলার গুণবাচক নাম ‘রব’ উল্লেখ করে সমস্ত জগতের সঙ্গে তাকে সম্বন্ধিত করা হয়েছে। অর্থাৎ জগতের প্রতিটি সৃষ্টজিনিসের প্রতিপালক তিনি। আরবীতে عٰلَم অর্থ জগত। عٰلَمِیۡنَ তার বহুবচন। এখানে বহুবচন ব্যবহার করে বলা হয়েছে ‘জগতসমূহের প্রতিপালক।’ অর্থাৎ গ্রহ-নক্ষত্র, চন্দ্র-সূর্য, আকাশ ও আকাশের উপরে যা কিছু রয়েছে, জমিন ও জমিনের নিচে যা কিছু রয়েছে, যা কিছু রয়েছে আকাশ ও জমিনের মাঝখানে—সবকিছুর প্রতিপালক কেবল আল্লাহ তাআলা।

দ্বিতীয় আয়াতে আল্লাহ তাআলার দয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে দুটো শব্দে প্রশংসা করা হয়েছে। الرَّحۡمٰنِ الرَّحِیۡمِ অর্থাৎ পরম করুণাময়, অতি দয়ালু। উভয়টাই আল্লাহ তাআলার গুণবাচক নাম, এবং উভয় নামেই চূড়ান্ত দয়া ও রহমতের অর্থ বিদ্যমান। বিশ্বের সর্বত্র আল্লাহ তাআলার অপার অসীম দয়া ও অনুগ্রহ প্রতিনিয়ত পরিবেশিত হচ্ছে। প্রাকৃতিক জগতে এই যে নিঃসীম শান্তি-শৃংখলা ও সামঞ্জস্য-সুবিন্যাস বিরাজ করছে, এর একমাত্র কারণ হলো, আল্লাহর রহমত সাধারণভাবে সব কিছুর উপর অঝোর ধারায় সদা প্রবাহিত। সকল প্রকারের সৃষ্টিই আল্লাহর অনুগ্রহের ব্যাপ্তিতে আবদ্ধ। কাফির, মুশরিক, আল্লাহদ্রোহী, নাস্তিক, মুনাফিক—কাউকেই আল্লাহ তাঁর রহমত থেকে, জীবন-জীবিকা ও সাধারণ নিয়মে বৈষয়িক উন্নতি কোন কিছু থেকেই–বঞ্চিত করেন না। এমনকি, আল্লাহর অবাধ্যতা এবং তাঁর বিরোধিতা করতে চাইলেও আল্লাহ নিজ থেকে কাউকেও বাধা প্রদান করেন না; বরং তিনি মানুষকে একটি সীমার মধ্যে যা ইচ্ছে তা করারই সুযোগ দিয়েছেন। এই জড় দুনিয়ার ব্যাপারে এটাই আল্লাহর নিয়ম।

তৃতীয় আয়াত مٰلِکِ یَوۡمِ الدِّیۡنِ অর্থাৎ যিনি বিচার-দিনের মালিক বা অধিপতি। এখানেও আল্লাহ তাআলার মহাক্ষমতা-গুণের উল্লেখের মধ্য দিয়ে তাঁর প্রশংসা করা হয়েছে। مٰلِک অর্থ কোনো জিনিসের ওপর এমন ক্ষমতার অধিকারী সত্তা, যিনি জিনিসটাকে যা ইচ্ছা তাই করার ক্ষমতা ও এখতিয়ার রাখেন। বিচার-দিবস মানে এখানে আখিরাত উদ্দেশ্য। সেদিন আল্লাহ তাআলার একচ্ছত্র আধিপত্য থাকবে। সৃষ্টিজীবকে তিনি বিচারের মুখোমুখি করবেন এবং প্রতিদান দেবেন।

আগের দুটো আয়াতে বলা হয়েছে আল্লাহ তাআলা জগতের সবকিছুর প্রতিপালন ও রক্ষণাবেক্ষণ করেন পাশাপাশি সকল সৃষ্টিজীবের জন্য তিনি অতি মেহেরবানও। এ আয়াতে বলা হচ্ছে, তিনি কেবল ‘রাব্বুল আলামীন’, ‘রাহমান’ ও ‘রাহীম’ই নন, বরং তিনি ‘মালিকি ইয়াওমিদদ্বীন’-ও। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা কেবল ইহজীবনের লালন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্যই এ বিশাল জগত-সংসার সৃষ্টি করেননি, বরং এর একটি চূড়ান্ত পরিণতিও নির্ধারণ করে রেখেছেন। আর সেটি হচ্ছে ‘ইয়াওমুদদ্বীন’ অর্থাৎ বিচার-দিবস। বিচার-দিবসের গুরুগম্ভীর পরিবেশ ও পরিস্থিতি সম্পর্কে সামান্য আন্দাজ করা যায় এই কথা থেকে যে, সেদিন জিজ্ঞেস করা হবে, ‘আজকের দিনে একচ্ছত্র কর্তৃত্ব ও প্রভুত্ব কার?’ উত্তরে সুস্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করা হবে, ‘তা সবই একমাত্র সার্বভৌম ও শক্তিমান আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট।’ (সূরা গাফির, আয়াত-ক্রম : ৫৯)

চতুর্থ আয়াত

উল্লিখিত তিন আয়াত থেকে এটা সুস্পষ্ট যে, আল্লাহ তাআলাই একমাত্র ইলাহ, সৃষ্টি জগতের একচ্ছত্র রব, রাহমানুর রাহীম ও বিচার-দিনের একক অধিপতি। সুতরাং বান্দা হিসেবে তাঁর পরিপূর্ণ দাসত্ব কবুল করা এখন আমাদের জন্য অপরিহার্য একটি বিষয়। কেবল তাঁরই ইবাদাত, আনুগত্য ও আদেশ পালন ছাড়া আমাদের দোসরা কোনো উপায় নেই; তাঁর ইবাদাত ব্যতীত আমাদের জীবনে আর কোনো কাজ বা উদ্দেশ্যও থাকতে পারে না। তাই চতুর্থ আয়াতের প্রথম অংশে বান্দার যবানে বিবৃত হচ্ছে—

اِیَّاکَ نَعۡبُدُ অর্থাৎ আমরা কেবল আপনারই ইবাদাত করি।

আবার মানুষ হিসেবে আমরা স্বভাবতই দুর্বল। আমাদের ক্ষমতা যত বেশিই হোক না কেন, তা সীমাবদ্ধ। আমরা কেউই অসীম ক্ষমতাধর নই। তাই আমাদের প্রত্যেকের জন্য অসীম ক্ষমতাধর কোনো সত্তার আশ্রয় গ্রহণ করা অপরিহার্য, মহান সেই সত্তার মর্জির কাছে সর্বান্তকরণে নিজেকে সোপর্দ করতে আমরা বাধ্য। সুতরাং আমাদের যবানেই চতুর্থ আয়াতের দ্বিতীয় অংশে ইরশাদ হচ্ছে—

وَ اِیَّاکَ نَسۡتَعِیۡنُ অর্থাৎ এবং আপনার কাছেই সাহায্য চাই।

আয়াতের উভয় অংশ থেকেই আল্লাহ তাআলার প্রশংসা প্রতীয়মান। কেননা আয়াতের মাধ্যমে এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে তিনি এমন এক সত্তা, ইবাদাত কেবল তাঁরই করতে হয় এবং সকল বিষয়ে কেবল তাঁর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করা যায়। আবার আয়াতের শেষাংশে প্রার্থনার বিষয়টিও বিদ্যমান।

শেষ তিন আয়াত

শেষ তিন আয়াত দুআ-সংবলিত। রাব্বুল আলামীনের দরবারে কীভাবে দুআ করতে হয়, তার কাইফিয়্যাত বিবৃত হয়েছে বান্দার যবানে। পঞ্চম আয়াত—

اِهۡدِ نَا الصِّرَاطَ الۡمُسۡتَقِیۡمَ অর্থাৎ আমাদেরকে সরল পথ প্রদর্শন করুন।

সরল পথ বা সীরাতুল মুসতাকীম কী? কোনো কোনো মুফাসসির বলেছেন, সীরাতুল মুসতাকীম হলো ইসলাম। কারও কারও মতে, কুরআন। বস্তুত, ‘সীরাতুল মুস্তাকীম’ শব্দ-বন্ধে আল্লাহ-প্রদত্ত বিশ্বজনীন দ্বীনের অন্তর্নিহিত প্রকৃত রূপ ফুটে উঠেছে। আল্লাহ্ তাআলার দাসত্ব কবুল করে তাঁরই বিধান অনুসারে জীবন যাপন করার পথই হচ্ছে সীরাতুল মুস্তাকীম এবং এই একটিমাত্র পথে চলতে পারলেই কেবল মানুষ আল্লাহর নিয়ামাত ও সন্তুষ্টি লাভ করে। মানব-জীবনের প্রকৃত ও চূড়ান্ত সাফল্যের জন্য এ পথ অবলম্বন একান্ত অপরিহার্য। তাই এ পথে চলার তওফীক প্রার্থনা করার শিক্ষা দেয়া হয়েছে উল্লিখিত আয়াতে। কিন্তু আল্লাহর কাছ থেকে এ পথ কীভাবে পাওয়া যেতে পারে, এ পথের দৃষ্টান্তই-বা কী? ষষ্ঠ ও সপ্তম আয়াতে বিবৃত হয়েছে এর উত্তর—

صِرَاطَ الَّذِیۡنَ اَنۡعَمۡتَ عَلَیۡهِمۡ ۬ۙ غَیۡرِ الۡمَغۡضُوۡبِ عَلَیۡهِمۡ وَ لَا الضَّآلِّیۡنَ অর্থাৎ সে-সমস্ত লোকের পথ, যাঁদেরকে আপনি নিয়ামাত দান করেছেন; তাদের পথ নয়, যাদের ওপর আপনার গযব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট।

আয়াত-দুটোতে সীরাতুল মুসতাকিমের তিনটি সুস্পষ্ট পরিচয়ের উল্লেখ রয়েছে।

১. এই পথে পরিচালিত হবার কায়দা-কানুন তাঁদের নিকট থেকে শিখতে হবে, যাঁরা এই পথ অবলম্বন করে আল্লাহর নিকট থেকে অপার নিয়ামাত ও অসীম অনুগ্রহ লাভ করেছেন।

২. এই পথের পথিকদের উপর আল্লাহর গযব নাযিল হয়নি, তাঁরা অভিশপ্তও নন।

৩. তাঁরা পথভ্রান্ত লক্ষ্যভ্রষ্টও নন।

 

(তাফসীরে মাআরিফুল কুরআন অবলম্বনে রচিত)

সত্য ও সুন্দরের প্রহরায় ৪৮ বছর

প্রতিষ্ঠাতা : শায়খ আল্লামা লুৎফুর রহমান বর্ণভী রহ.
নিবন্ধন নম্বর : চ-৪৭৩/০৫

সত্য ও সুন্দরের প্রহরায় ৪৮ বছর

প্রতিষ্ঠাতা : শায়খ আল্লামা লুৎফুর রহমান বর্ণভী রহ.
নিবন্ধন নম্বর : চ-৪৭৩/০৫

কপিরাইট © ২০২৪ | মাসিক হেফাজতে ইসলাম, আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলামের মুখপত্র। Developed By Shabaka IT