বর্তমান পৃথিবীতে সবচেয়ে বর্বরতম ও আইন অমান্যের জাতি হিসেবে ইসরাইল আজ প্রতিষ্ঠিত।
সম্প্রতি গাজায় যেভাবে নারী ও শিশুদের উপর আগ্রাসী আক্রমণ চালাচ্ছে ইসরাইল, তা যে কোন সুস্থ মনের মানুষকে মর্মাহত করবে। নিরন্তর বোমাবর্ষণ করে ঘনবসতিপূর্ণ গাজা ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। সরকারি ভবন থেকে শুরু করে ঘরবাড়ি, হাসপাতাল থেকে মসজিদ, স্কুল থেকে বাজার কোন কিছুই রেহাই পাচ্ছে না।
হামাসের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক এ আক্রমণে এখন পর্যন্ত ২ হাজার ২১৫ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৭২৪ শিশু এবং ৪৫৮ জন নারী রয়েছেন। আহত হয়েছেন ৮ হাজার ৭১৪ জন। এ ছাড়াও পশ্চিম তীরে ৫৪ জন মারা গেছেন ও ১১০০ মানুষ আহত হয়েছেন। এ সংখ্যা এখনও ক্রমবর্ধমান।
গণমাধ্যমেরর বরাতে জানা যায়, বর্তমানে গাজায় ইসরাইলি বোমার আঘাতে প্রতি ১৫ মিনিটে একটি শিশু নিহত হচ্ছে। গত ১৭ অক্টোবর মঙ্গলবার রাতে ‘আল আহলি’ হাসপাতালে বর্বর হামলায় নিহতের সংখ্যা ৮০০ ছাড়িয়ে গেছে। স্মরণকালে ভয়াবহ এ হামলায় হতবাক বিশ্ব।
ইসরায়েল এই যুদ্ধে বিষাক্ত এবং নিষিদ্ধ ‘ফসফরাস গ্যাস’ ব্যবহার করেছে, যা আক্রান্তের অস্থিমজ্জা একেবারে ভিতর পর্যন্ত জ্বালিয়ে দেয়। এ ছাড়াও তারা ব্যবহার করেছে ‘ডেন্স ইনার্ট মেটাল এক্সপ্লোসিভ’ (উওগঊ) যা শুধু আক্রান্তদের ছিড়ে খুড়ে বিনাশই করে না, সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে থাকা মানুষের মধ্যে ভবিষ্যতে তৈরি করে ক্যান্সারের মত দুরারোগ্য রোগের বীজ।
অবশ্য ইসরাইলের এই বর্বরতা নতুন নয়, প্রায় এক শতক ধরেই তারা এভাবে ফিলিস্তিনের বুকে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে।
গত পাঁচ বছরে শুধু তাদের বিমানবাহিনী ৪০৮টি অপারেশনে ফিলিস্তিন ও প্রতিবেশী দেশের এক হাজার ২০০ অবস্থানে মোট ৫৫০০ বার হামলা চালিয়ে হত্যা করেছে হাজার হাজার মানুষ। কারও কারও পুরো পরিবারই বিনাশ করে দিয়েছে। অনেককে হত্যা করেছে ঘুমের মধ্যে।
জেনেভা কনভেনশন অনুসারে, যুদ্ধের সময় অসুস্থ এবং আহতদের পাশাপাশি চিকিৎসাকর্মী, হাসপাতাল ও মোবাইল চিকিৎসা সুবিধাগুলো সুরক্ষিত থাকে। কোনো অবস্থাতেই তারা আক্রমণের উদ্দেশ্য হতে পারে না এবং এ ধরনের লক্ষ্যবস্তু করা যুদ্ধাপরাধ হিসাবে বিবেচিত হবে। কিন্তু ইসরাইল বরাবরই এসবের কোন তোয়াক্কা না করে তাদের বর্বরতা চালিয়ে যাচ্ছে।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ আজ পর্যন্ত ইসরায়েল বরাবর ৮৯টি প্রস্তাব রেখেছে। কিন্তু এর কোনোটিই বাস্তবায়ন করেনি তারা। সাধারণ পরিষদ ২০০টি প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু এর একটিও তারা আমলে নেয়নি।
এতসব আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন, মানবতাবিরোধী অপরাধ, যাকে খুশি তাকে হত্যার নীতি দেখেও ফিলিস্তিন ইস্যুতে ইসরাইলকে নগ্ন সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে পশ্চিমা মোড়লরা। পশ্চিমাদের এই দ্বিমুখী আচরণ এখন আর গোপন নয়, সবার কাছেই তা স্পষ্ট। কাজেই তাদের ন্যায়পরায়ণতার বাণী, সভ্যতার বুলি, গণতন্ত্রের বার্তা ইত্যাদি সবই আজ শঠতা বলেই প্রমাণিত হচ্ছে। তবুও অর্থসম্পদ ও অস্ত্রশক্তির জোরে তারাই আজ বিশ্বের মানবতা, মানবাধিকার, গণতন্ত্র, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব আর ন্যায়পরায়ণতার সংজ্ঞা নির্ধারণ করে দেবে, যা অন্য সব দুর্বল দেশ, রাষ্ট্র ও জনতাকে মানতে হবে। এর চেয়ে লজ্জাজনক বিষয় আর কী হতে পারে!
সালাহ উদ্দীন তারেক
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, মাসিক হেফাজতে ইসলাম