সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ। মানুষের এই শ্রেষ্ঠত্বের পিছনে অনেক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো তার মনুষ্যত্ব, মানবিকবোধ সম্পন্ন বিবেক ও বুদ্ধি। নৈতিক মূল্যবোধ ও মানবিক মূল্যবোধ মানুষকে ভালো চিন্তা করতে, অপরের মঙ্গল কামনা করতে এবং সমাজের জন্য ভালো কাজ করার অনুপ্রেরণা দেয়। আর এগুলোর উদ্ভব ঘটে ধর্ম, ঐতিহ্য, মানব আচরণ থেকে। সমাজের জন্য যা মঙ্গলজনক তা করায় নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ।
সময় যত গড়াচ্ছে, মানুষ তার এই চিরাচরিত মূল্যবোধ হারাতে বসেছে। নৈতিকতা ও মানবিকতাবোধের অধঃপতনের ফলে সমাজ আজ অবক্ষয়ের চরম পর্যায়ে। শিক্ষা, সংস্কৃতি, ধর্ম সব কিছু আজ কলুষিত। নিজ স্বার্থে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অপরের ক্ষতি ও ধ্বংস বর্তমানে কোনো ব্যাপার না।
আজ শিক্ষকের কাছে শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিয়ে ভাবতে হয়। দুর্নীতির অপচর্চার ফলে হতাশার কবলে পড়তে হয় মেধাবী যুবসমাজের একটি বড় অংশকে। আবার প্রতারণার কবলে পড়ে হারিয়ে যাচ্ছে অনেক সম্ভাবনাময় জীবন। মাদকের ছোবলে অনেক জীবন নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। অনিয়মই যেন চিরায়ত প্রথা, এমন একটি পরিস্থিতি বিরাজ করেছে চারদিকে।
আমরা জানি শিক্ষা মানুষকে মানবিকবোধ সম্পন্ন জ্ঞান অর্জনে সহায়তা করে। ব্যক্তিকে অজ্ঞতার অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে আসে। কিন্তু বর্তমানে দেখা যায় এই চিত্র সম্পূর্ণ বিপরীত। দুর্নীতিতে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছে এই শিক্ষিতরাই। সরকারি অফিস-আদালত, ব্যাংক, মন্ত্রণালয়, প্রশাসনিক ক্ষেত্রগুলোতে অন্যায়কারীরা সবাই বড় বড় ডিগ্রিদারী।
আসলে একজন মানুষ শিক্ষিত হওয়ার চেয়েও ভালো মানুষ হওয়া খুব বেশি প্রয়োজন। এজন্য সর্বপ্রথম এগিয়ে আসতে হবে আমাদের পরিবারকে।
পরিবার হলো মানবিক গুণাবলি অর্জনের প্রথম শিক্ষাগার। নৈতিক, মানবিক ও ধর্মীয় গুণাবলি বিকাশে পরিবারের ভূমিকাই প্রধান। কারণ পরিবারের মধ্যেই এসবের বীজ প্রোথিত হয়। পারিবারিক বন্ধনই নৈতিকতা ও মূল্যবোধ গড়ে তুলতে পারে। একটি সন্তানের জীবনে সবচেয়ে বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হলো তার পরিবার। যেখানে বাবা-মা, পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন প্রত্যেক সদস্যই শিক্ষকের ভূমিকা পালন করে। তাই সন্তানদের নৈতিকভাবে বিকশিত করতে হলে পরিবারের সদস্যদের নৈতিক গুণাবলিসম্পন্ন হওয়া খুবই জরুরি।
পরিবারের সদস্য ছাড়াও সন্তানের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জন হিসেবে বিবেচিত হন তার শিক্ষক। তাই শিক্ষার্থীদের মাঝে নৈতিক, মানবিক ও ধর্মীয় বিকাশ ঘটাতে হলে প্রথমে শিক্ষকদের নৈতিক, মানবিক ও ধর্মীয় গুণাবলি ধারণ ও লালন করতে হবে। শিক্ষার্থীদের নৈতিক, মানবিক ও সামাজিক বিকাশ ঘটাতে হলে সকল স্তরের শিক্ষাক্রমে নৈতিক, মানবিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ সংক্রান্ত বিষয়াদি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। বন্ধ করতে হবে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ। সর্বস্তরে শিক্ষার মান ও শিক্ষার্থীদের মূল্যবোধ অক্ষুন্ন রাখতে হবে।
একইভাবে এগিয়ে আসতে হবে সমাজের গুরুত্বপূর্ণ আসনে বসা সেই সকল মানুষদের, যারা যুবসমাজের অনুপ্রেরণা ও আদর্শ হতে পারেন। এজন্য সর্বাগ্রে তাদের কর্মজীবন থেকে ব্যক্তিজীবনে সততা, নৈতিকতা, মানবিকতা, পরমতসহিষ্ণতার চর্চা করতে হবে। মানুষের মধ্যে এগুলোর চর্চা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন অনুপ্রেরণামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করা যেতে পারে। এ বিষয়ে ধর্মীয় ও সামাজিক সংগঠনগুলো বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে। মানবতার কল্যাণে সমাজকে আলোকিত করতে নৈতিক ও মানবিক গুণ সম্পন্ন আলোকিত মানুষ তৈরির কারখানা তৈরি করতে হবে।
আলোকিত সমাজের জন্য আলোকিত শিক্ষক চাই, সৎ যোগ্য নৈতিক ও মানবিকগুণ সম্পন্ন অভিভাবক চাই। ভালো মানুষ চাই। তবেই নৈতিকতা, মানবিকতা ও ব্যক্তিসচেতনতার দৃঢ় অবস্থানের সঙ্গে একটি সুন্দর সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে।
-সালাহ উদ্দীন তারেক
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক