আত্মশুদ্ধির মাস রমযান সমাগত। এ মাস নেকী অর্জনে প্রতিযোগিতা করার মাস। সিয়াম, তারাবিহ, সেহরি-ইফতার ও লাইলাতুল কদর ইত্যাদির মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জনের সুযোগ মেলে এ মাসে। কিন্তু পরিতাপের বিষয়ে হলো, প্রচলিত কিছু মন্দ প্রথা ও নিন্দিত কাজ ক্ষুণ্ণ করে রমযানের মাহাত্ম্যকে। রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের পরিবর্তে পূর্ণ করে গোনাহের ভাণ্ডার। রমযানে প্রচলিত মন্দ প্রথা ও নিন্দিত কাজসমূহের মধ্যে ‘মেয়েদের শ্বশুরালয়ে ইফতারি প্রেরণ’ অন্যতম। দরিদ্রদের জন্য এটা এক মহাআতঙ্কের নাম ও ধনবানদের জন্য এক বিলাসী প্রথা। দেশের বিভিন্ন এলাকায় এই প্রথার প্রচলন রয়েছে। আমাদের সিলেট বিভাগে এর প্রচলনটা একটু বেশি। একজন দরিদ্র দিনমজুর পিতা, নুন আনতে যার পান্তা ফুরায়, সেই পিতাকেও মেয়ের মান ইজ্জত রক্ষা করতে, সংসার টিকিয়ে রাখতে ইফতারি দিতে বাধ্য করা হয়। অনেক সময় দেখা যায়, সুদের টাকা এনে হলেও মেয়ের বাড়িতে ইফতারি পাঠানো লাগে। আবার যেনতেনভাবে পাঠালেও চলবে না, সন্তোষজন ইফতারসামগ্রী পাঠাতে হবে। কারণ ইফতারির পরিমাণ, আইটেম ও বৈচিত্র্যের সাথে জড়িত থাকে উভয়পক্ষের মান-মর্যাদার প্রশ্ন। যদি সন্তোষজন ইফতারি পাঠানো না হয়, তাহলেও দেখা যায় কনেকে বিভিন্ন মানসিক যন্ত্রণা পোহাতে হয়। এমনকি বিভিন্নভাবে লজ্জিতও হতে হয়। এটি কোনোভাবেই শরীয়ত সম্মত নয়। কেননা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কারো সম্পদ ভক্ষণ করা জায়েয নয় তার সন্তুষ্টি ব্যতীত।’
অনেকে জ্ঞান দিতে আসবেন যে, যে ব্যক্তি বিত্তবান তার তো ইফতারি দিতে কষ্ট হয় না। সে দিলে কোনো অসুবিধা নেই। আপনার এই যুক্তি ভুল। কারণ, বিত্তশালীরা যদি স্বেচ্ছায়ও দিয়ে থাকে; তবুও এতে লুকিয়ে থাকে লৌকিকতা। আর লৌকিকতাকে সূক্ষ্ম শিরক আখ্যা দিয়ে হাদীসে ইরশাদ হয়েছে, শাদ্দাদ ইবনে আওস রাযিায়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যামানায় রিয়াকে ছোট শিরক গণ্য করতাম।’ (মুসনাদে উমার)
তাই মেয়েদের শ্বশুরালয়ে ইফতারি প্রেরণের এই জঘন্য প্রথাকে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে হবে। এক্ষেত্রে সমাজের সর্বশ্রেণির মানুষ একসঙ্গে কাজ করতে হবে। বিশেষ করে তরুণদের এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। যারা লেখালেখি করেন, আপনারা এর বিরুদ্ধে কলম ধরবেন। যারা মসজিদে খতিবের দায়িত্ব পালন করছেন, আপনারা জুমার খুতবায় এ বিষয়ে আলোচনা করবেন। যারা বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে অংশগ্রহণ করে থাকেন, আপনারা সেখানে এ বিষয়গুলো উত্থাপন করবেন। রমযানে তারাবিহ নামাযের পর বিভিন্ন মসজিদে নসিহতমূলক আলোচনা হয়ে থাকে, সেখানেও এ বিষয়গুলো উঠানো যেতে পারে। কেননা এই প্রথা পালন করতে গিয়ে অনেক পিতার চোখের অশ্রু ঝরে। অনেক মায়ের মন বিষাদে ভরে যায়। অনেক মেয়েকে অসম্মানিত হতে হয় তার শ্বশুরবাড়িতে। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এ সকল মন্দ প্রথা ও নিন্দিত কাজ থেকে হেফাজত করুন এবং রমযানের পবিত্রতা রক্ষা করার তাওফিক দান করুন। আমীন।
-সালাহ উদ্দীন তারেক
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, মাসিক হেফাজতে ইসলাম