সম্পাদকীয়, জুন ২০২৩ সংখ্যা

বর্তমান সময়ে আমরা এমন এক ভয়াবহ পরিণতির দিকে ধাবিত, যেখানে ব্যক্তি থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের কোথাও সুনীতি নেই। ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত, হত্যা, লুণ্ঠন, যুলুম-অত্যাচার আর পাপাচারে সমাজ আজ অবক্ষয়ের প্রান্তসীমায় পৌঁছে গেছে। জাতির ভাগ্যাকাশে এখন শুধু দুর্যোগের ঘনঘটা। একদিকে সামাজিক অবক্ষয়, সাংস্কৃতিক দেউলিয়াত্ব, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও অর্থনৈতিক সংকটে জাতীয় জীবন সংকটাপন্ন। অন্যদিকে সামাজিক জীবনে আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি জাহেলিয়াতের যুগকেই স্মরণ করিয়ে দেয় বার বার।

জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে সাধারণ মানুষ তাকিয়ে আছে এমন একদল যুবকের প্রতি, যারা হবে মানবতার মুক্তির দূত, শান্তি পথের দিশারী, ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠায় আপোষহীন মহামানব রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পদাংক অনুসারী এবং নির্ভেজাল তাওহীদের প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় নিজেদের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিতে দ্বিধাহীন।

আমরা জানি, সমাজ পরিবর্তনের জন্য যে শক্তি ও ক্ষমতা প্রয়োজন তা একমাত্র যুবকরাই সরবরাহ করতে পারে। ভাঙ্গা গড়ার আঘাত হজম করার সামর্থ্য শুধু তাদেরই আছে। সামাজিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন যুবকদের দ্বারাই সম্ভব। দুনিয়ার যে কোন আন্দোলন সংগ্রামের মূল চালিকা শক্তিই হচ্ছে এই যুব সম্প্রদায়। যুবকগণ তাদের সাহসী আচরণ দিয়ে সমাজ পরিবর্তন করতে পারে। পবিত্র কুরআনের সূরায়ে কাহাফে আল্লাহ তাআলা বলেছেন- ‘যুবকগণ সত্যের প্রতি নিবেদিত এবং তারা তাদের রবের প্রতি বিশ্বস্ত। তাদের প্রতি আল্লাহ সোবহানাহু ওয়া তাআলা তত্ত্বাবধান বাড়িয়ে দেন, তাদের হৃদয়ে শক্তি দান করেন।’

দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আজকের মুসলিম যুবসমাজ ইসলামের মহান আদর্শ থেকে দূরে সরে গিয়ে নিজেদের খেয়াল-খুশিমতো জীবন পরিচালনা করছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাহকে ছেড়ে মুসলিম কৃষ্টি-কালচারের পরিপন্থি বিজাতীয় সংস্কৃতির দ্বারা নিজেদের চরিত্রকে প্রভাবিত করছে। ফলে তারা আত্মার সৌন্দর্য হারিয়ে বহুবিধ পাপাচারে লিপ্ত হচ্ছে। ভালো-মন্দের সংমিশ্রণকেও তারা ইবাদত হিসাবে মনে করছে। যা একান্তই পরিত্যাজ্য।

সমাজ সংশোধনের জন্য প্রথমেই আমাদের যুবসমাজ থেকে অজ্ঞতা, দ্বীনতা, হীনতা, জরাজীর্ণতা, খুন-খারাবী, হিংসা-বিদ্বেষ, অশিক্ষা-কুশিক্ষা, নগ্নতা ও বেহায়াপনার মত নির্লজ্জতা দূর করেতে হবে। ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। সব ধরনের অশ্লীলতা ও অশ্লীল কার্যকলাপের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে। এজন্য সমাজ ও রাষ্ট্রকে বাস্তবসম্মত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সেই সাথে পরিবারকে ইসলামী পরিবার হিসাবে গড়ে তুলতে হবে। আমাদের দায়ীদেরকে যুবকদের কাছাকাছি থাকতে হবে। তাদের অন্তরে ঈমানের বীজ বপন করতে হবে। ঈমানের সাথে আমলে সামঞ্জস্যতা নিশ্চিত করতে হবে। তবেই জাহেলিয়াতের সাথে আপোষহীন একদল যুবক তৈরি হবে, যারা সমাজের প্রতিটি স্তরে শান্তির সুমহান বার্তা পৌঁছে দেবে।

পরিশেষে যুবক ভাইদের বলবো- আসুন, আমরা আমাদের যৌবনের মূল্যবান সময়কে আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করার চেষ্টা করি। বার্ধক্য আসার আগে এর সঠিক ব্যবহার করতে শিখি। ইসলামের সুমহান আদর্শকে বুকে ধারণ করে সমাজ, দেশ ও জাতির কল্যাণে অবদান রাখি। তবেই আমাদের এ যৌবনকাল সার্থক হবে। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। আমীন।

 

-সালাহ উদ্দীন তারেক

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক

সত্য ও সুন্দরের প্রহরায় ৪৮ বছর

প্রতিষ্ঠাতা : শায়খ আল্লামা লুৎফুর রহমান বর্ণভী রহ.
নিবন্ধন নম্বর : চ-৪৭৩/০৫

সত্য ও সুন্দরের প্রহরায় ৪৮ বছর

প্রতিষ্ঠাতা : শায়খ আল্লামা লুৎফুর রহমান বর্ণভী রহ.
নিবন্ধন নম্বর : চ-৪৭৩/০৫

কপিরাইট © ২০২৪ | মাসিক হেফাজতে ইসলাম, আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলামের মুখপত্র। Developed By Shabaka IT