সম্পাদকীয়, জানুয়ারি ২০২৩ সংখ্যা

বিশ্বায়নের যুগে বিস্ময়করভাবে বেড়েছে স্মার্ট (অ্যান্ড্রোয়েড) ফোনের ব্যবহার। দৈনন্দিন জীবনের এমন কোনো ক্ষেত্র ও সময় নেই যেখানে স্মার্ট ফোনের ব্যবহার হচ্ছে না। কিন্তু কখনও কি ভেবে দেখেছেন স্মার্ট ফোনের এই বহুল ব্যবহার কতটা ভয়াবহতা ডেকে আনছে নিজেদের রোজকার জীবনাচারে?

গ্লোবাল সিস্টেম ফর মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনের ভাষ্যমতে, বিশ্বে বর্তমানে একক মোবাইলসংযোগ-সংখ্যা ৫০০ কোটির ওপরে, এর মধ্যে ৮০ শতাংশের মতো রয়েছে স্মার্টফোন সংযোগ। অন্যদিকে বিশ্বে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫০০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে; যেখানে বিশ্বের মোট জনসংখ্যাই ৮০০ কোটি! বাস্তবিক অর্থেই জ্যামিতিক হারে বেড়ে চলছে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা। সে সঙ্গে সমহারে বাড়ছে নৈতিক পদস্খলন, হতাশা, কর্মবিমুখতা, মানসিক রোগ ও আসক্তির পরিমাণ।

সব ধর্মের সাধারণ মানুষ তো বটেই, বিশেষ করে ধর্মপ্রাণ মুসলিম, যারা শরিয়ত-বহির্ভূত ভিজ্যুয়াল কন্টেন্ট পরহেয করে চলতেন, টিভি/রেডিও ইত্যাদি থেকে নিজেদের আবাস ও কর্মস্থলকে সচেতনভাবে মুক্ত রাখতেন, স্মার্টফোনের বহুল ব্যবহারের কারণে তাঁদের আবাস-কর্মস্থল এমনকি কোর্তার পকেটও এখন ভিজ্যুয়াল কন্টেন্টের গুদামে পরিণত হয়েছে। টিভি/রেডিওতে শরিয়ত-বহির্ভূত যা যা কন্টেন্ট প্রচার হতো, তা এখন প্রত্যেকেই নিজেদের পকেটে নিয়ে ঘুরছেন। প্রয়োজনীয় যোগাযোগ রক্ষা ও দেশ-জাহানের খবরাখবর রাখার উদ্দেশ্যে স্মার্টফোনের ব্যবহার তারা করলেও এগুলোর পাশাপাশি নিজেদের অজান্তে অনেক হারাম কন্টেন্ট উপভোগ করতে তাঁদের বড় একটি অংশ অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন। অভ্যস্ত না হলেও একসময় টিভি/রেডিওতে তারা যা কিছু অপছন্দ করতেন নিজের স্মার্টফোনে সেসবকে তাঁরা স্বাভাবিক হিসাবেই নিচ্ছেন। দ্বীন-ঈমানের মুহাফিজ ও সংরক্ষক যারা তাদের কাছেই বদদ্বীনী ও শালীনতাবর্জিত বিষয়-আশয় এখন স্বাভাবিক হয়ে উঠছে! নৈতিক ও আমলী অধঃপতনের দিক চিন্তা করলে এটা অত্যন্ত ভয়াবহ একটি ব্যাপার।

এ ছাড়া স্মার্টফোনে যাঁরা বেশি সময় কাটান, গ্রহণযোগ্য বিভিন্ন গবেষণা বলছে- তাঁদের মস্তিষ্কে রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটার ফলে স্মার্টফোনের ওপর তাঁরা আসক্ত হয়ে যান। এ আসক্তি থেকে তাঁদের মধ্যে তৈরি হয় হতাশা ও উদ্বেগ। স্মার্ট ফোনে থাকা ফেসবুক, মেসেঞ্জার, টুইটার, হোয়াটস্যাপ, ইউটিউব এবং বিভিন্ন অনলাইন গেমস ইত্যাদি অতি সহজেই ব্যবহারকারীকে কাবু করে ফেলতে পারে। বর্তমানকার অধিকাংশ তরুণ-তরুণী স্মার্টফোনের এসব গেমস/সফটওয়্যারে আসক্ত। দিনের অধিকাংশ সময়ই তারা এসবে ব্যয় করার করণে বাস্তব জীবন সম্পর্কে ক্রমশ তারা অনভিজ্ঞ ও অনভ্যস্ত হয়ে পড়ছে, তাদের মাঝে নেতৃত্বগুণ, সহযোগিতা, সহমর্মিতা, সহিষ্ণুতা ও নিয়মশৃঙ্খলা লোপ পাচ্ছে। ফলে নৈতিক, সামাজিক ও মানবিক জীবন থেকে তারা হয়ে পড়ছে বিচ্ছিন্ন।

স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে সময় অপচয় ছাড়াও স্বাস্থ্যের ওপর পড়ছে অনেক নেতিবাচক প্রভাব। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘুমকে গভীর করার জন্য শরীর থেকে মেলাটোনিন নামক এক প্রকার হরমোনের নিঃসরণ ঘটে কিন্তু মোবাইল ফোন থেকে যে রেডিয়েশন নির্গত হয় তা ওই মেলাটোনিন হরমোন নিঃসরণে বাধা দেয়, ফলে ঘুমের দফারফা, যা শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব বিস্তার করে। মাত্রাতিরিক্ত স্মার্ট ফোন ব্যবহারের ফলে উচ্চ রক্তচাপ, এ্যানজাইনা, তীব্র মাথাধরাসহ দেখা দিতে পারে চোখ ও কানের বিভিন্ন সমস্যা। আমেরিকান ম্যাকিউলার ডিজেনারেশন এ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, মোবাইল ফোনের নীল আলো রেটিনার স্থায়ী ক্ষতি করে অন্ধত্বের দিকে ঠেলে দিতে পারে। শুধু তাই নয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানাচ্ছে- মোবাইল থেকে নির্গত ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন ব্রেন টিউমারের সবচেয়ে বড় কারণ।

সুতরাং, মোবাইল- বিশেষত স্মার্ট ফোনের মাত্রাতিরিক্ত ও অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার নিয়ে আমাদের প্রত্যেককেই নতুন করে ভাবা দরকার।

 

হামমাদ রাগিব

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক

সত্য ও সুন্দরের প্রহরায় ৪৮ বছর

প্রতিষ্ঠাতা : শায়খ আল্লামা লুৎফুর রহমান বর্ণভী রহ.
নিবন্ধন নম্বর : চ-৪৭৩/০৫

সত্য ও সুন্দরের প্রহরায় ৪৮ বছর

প্রতিষ্ঠাতা : শায়খ আল্লামা লুৎফুর রহমান বর্ণভী রহ.
নিবন্ধন নম্বর : চ-৪৭৩/০৫

কপিরাইট © ২০২৪ | মাসিক হেফাজতে ইসলাম, আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলামের মুখপত্র। Developed By Shabaka IT