সম্পাদকীয়, এপ্রিল-২০২৪ সংখ্যা

প্রাচীনকাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত জীবনযাপনে অর্থব্যবস্থা মানুষের জীবনধারাকে প্রভাবিত করছে। সমাজব্যবস্থা, নীতি-নৈতিকতা, ধর্ম, শিক্ষা-সর্বত্রই অর্থনীতি প্রভাব বিস্তার করে আসছে। এক কথায়, মানব জীবনের কোনো দিক ও বিভাগ অর্থনীতির আওতাবহির্ভূত নয়। এই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সবসময় কোনো না কোনো নীতি বা আদর্শকে অবলম্বন করে গড়ে উঠেছে। অর্থনৈতিক ধারা বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখতে পাই, তিনটি উল্লেখযোগ্য অর্থব্যবস্থা সমাজে প্রচলিত ছিল এবং আজও বর্তমান আছে। এগুলো হলো- পুঁজিবাদী অর্থনীতি, সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি এবং ইসলামী অর্থনীতি।

পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থার মূল কথা হলো- প্রত্যেক ব্যক্তিই হবে নিজের উপার্জিত ধন-সম্পদের মালিক। এতে অন্যের কোনো অধিকার নেই। ইচ্ছেমতো ভোগ-ব্যয় করতে পারবে। সমাজবাদী অর্থ ব্যবস্থার মূল কথা হলো- এখানে ব্যক্তি মালিকানার কোনো সুযোগ নেই। রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে সকল কিছু। ফলে এ ব্যবস্থায় জনগণের চিন্তা, মত ও কর্মের সমস্ত স্বাধীনতা রহিত হয়েছে এবং মানুষ যন্ত্র-মানবে পরিণত হয়েছে। এ দু’টি মতবাদের বিপরীতে ইসলাম মানব জাতির জন্য একটি সুন্দর ভারসাম্য মূলক কল্যাণময় ব্যবস্থা দিয়েছে। এখানে ব্যক্তিকে স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। ফলে মানুষ এ স্বাধীনতা একটি নৈতিক মানের ভেতর দিয়েই কেবল ভোগ করতে পারে। এ স্বাধীনতা মোটেও অনিয়ন্ত্রিত নয়। কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রিত।

ইসলামী অর্থনীতিতে ধনী ও দরিদ্রের অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণে যাকাত নামক একটি চমৎকার কর্মসূচির বিধান রয়েছে। যে কর্মসূচির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো- সমাজের বিত্তবান ও সচ্ছল লোকদের বাড়তি সম্পদের একটি নির্দিষ্ট অংশ নিয়মিত আদায় করে দরিদ্র ও বঞ্চিত লোকদের মধ্যে যথাযথ বণ্টন করে দেওয়া। বলাবাহুল্য, এটি যেমন একটি রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম, তেমনি ইসলামের একটি মৌলিক বিধানও। তাই পবিত্র কুরআনের বহুতর স্থানে নামায প্রতিষ্ঠার সাথে সাথে যাকাত প্রদানেরও আদেশ করা হয়েছে এবং আল্লাহর অনুগত বান্দাদের জন্য অশেষ সাওয়াব, রহমত ও মাগফিরাতের পাশাপাশি আত্মশুদ্ধিরও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, “তোমরা সালাত আদায় কর এবং যাকাত প্রদান কর। তোমরা যে উত্তম কাজ নিজেদের জন্য অগ্রে প্রেরণ করবে তা আল্লাহর নিকটে পাবে। নিশ্চয়ই তোমরা যা কর আল্লাহ তা দেখছেন।” (সূরা বাকারা, আয়াতক্রম : ১১০)

আল্লাহ তাআলা আরও বলেন, “তোমরা সালাত আদায় কর, যাকাত দাও এবং রাসূলের আনুগত্য কর, যাতে তোমরা অনুগ্রহভাজন হতে পার।” (সূরা নূর, আয়াতক্রম : ৫৬)

হাদীস শরীফে একে ইসলামের সেতুবন্ধন বলা হয়েছে। কারণ, এটি ধনী ও গরিবের মাঝে অর্থনৈতিক সেতুবন্ধন।

সমাজ থেকে দরিদ্রতা দূরীকরণে এবং সমাজে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনয়নে যাকাতের ভূমিকা অপরিসীম। কিন্তু দুঃখের বিষয় যে, যাকাত সম্পর্কে স্পষ্টতর ধারণার অভাবে এবং এর বণ্টন পক্রিয়ায় অবহেলার কারণে এই কল্যাণময় ব্যবস্থাটি থেকে আমাদের সমাজ যথোচিতভাবে উপকৃত হতে পারছে না।

আমাদের দেশে গড়ে আদায়যোগ্য যাকাতের পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকারও অধিক। যা দ্বারা প্রতিবছর দুই লাখ লোকের পুনর্বাসন সম্ভব। পরিকল্পিতভাবে কাজ করলে এভাবে ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে সম্পূর্ণরূপে দেশের দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব।

আসুন, আমরা ব্যক্তিগত, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে যাকাতভিত্তিক অর্থব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করি এবং যাকাত প্রদানে বিত্তবানদের উৎসাহিত করি। মানবতার কল্যাণ সাধন করে শান্তির সমাজ কায়েম করি। সবাই মিলে পরকালে জান্নাতের পথে এগিয়ে যাই। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সঠিক দায়িত্ব পালনে তাওফিক দান করুন। আমীন।

 

-সালাহ উদ্দীন তারেক

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, মাসিক হেফাজতে ইসলাম

সত্য ও সুন্দরের প্রহরায় ৪৮ বছর

প্রতিষ্ঠাতা : শায়খ আল্লামা লুৎফুর রহমান বর্ণভী রহ.
নিবন্ধন নম্বর : চ-৪৭৩/০৫

সত্য ও সুন্দরের প্রহরায় ৪৮ বছর

প্রতিষ্ঠাতা : শায়খ আল্লামা লুৎফুর রহমান বর্ণভী রহ.
নিবন্ধন নম্বর : চ-৪৭৩/০৫

কপিরাইট © ২০২৪ | মাসিক হেফাজতে ইসলাম, আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলামের মুখপত্র। Developed By Shabaka IT