রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের সওগাত নিয়ে আবারো আমাদের সামনে উপস্থিত পবিত্র মাহে রমযান। রমযান মাস মানেই নেকী অর্জনে প্রতিযোগিতা করার মাস। এ মাসেই মহান আল্লাহ তাআলা শয়তানকে শৃঙ্খলিত করেন এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে জান্নাতের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করে দেন। রমযান মাসের জন্য শুধু দুনিয়াবাসীই নয়; অনেক কবরবাসীই উদগ্রীব হয়ে থাকেন। অন্ধকার মাটির ঘরে শুয়ে তারা আফসোস করেন- ইশ! মাত্র একটি বারের জন্য হলেও যদি আবার রমযান পেতাম। সেই সাথে আমরা যারা রমযান পেয়েছি, আমাদের মধ্যেও অনেকেই রমযানের সদ্ব্যবহার না করার জন্য পরে আফসোস করতে হবে।
তাকওয়া অর্জনের এ মুবারক মাসে আমাদের উপর অর্পিত হয়েছে সিয়াম পালনের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। তারাবিহ, সেহরি-ইফতার ও লাইলাতুল কদরের সৌরভে সৃষ্টি হয়েছে পূণ্য অর্জনের বিশাল সুযোগ। এ অর্পিত দায়িত্ব পালন এবং সুবর্ণ সুযোগের সদ্ব্যবহার করে আমাদের উচিত চারিত্রিক অধ:পতন থেকে নিজেকে রক্ষা করা। নেতিয়ে পড়া চেতনাকে জাগ্রত করা এবং সকল প্রকার অনাহুত শক্তির বলয় থেকে মুক্ত হয়ে হক প্রতিষ্ঠার প্রতিজ্ঞাকে সুদৃঢ় করা। যাতে করে আমরা রিসালাতের পবিত্র দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারি এবং কুরআন নাযিলের এ মাসে কুরআনের মর্ম অনুধাবন করতে পারি। কুরআন থেকে হিদায়াত লাভ করে জীবেনের সর্বক্ষেত্রে একেই অনুসরণের একমাত্র মত ও পথ রূপে গ্রহণ করতে পারি।
রমযান মাস আমাদেরকে কঠোর ত্যাগ, ধৈর্য, উদারতা ও সততা প্রদর্শনের নির্দেশ দিলেও পরিতাপের বিষয় হলো- এ মাসেই দেশের একশ্রেণির ব্যবসায়ী সততা আর ন্যায়নীতি ভুলে অতি মুনাফা লাভের আশায় যথেচ্ছভাবে দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে বাজারে অস্থিরতা তৈরি করে। এবারও ক্রেতাসাধারণ দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়ার দৌরাত্ম্য দেখতে পাচ্ছে। রমযানের শিক্ষা অনুসরণের বদলে সুযোগসন্ধানী অসৎ ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্য বাড়িয়ে তুলছে। সরকার দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসার প্রতিশ্রম্নতি দিলেও তা রক্ষিত হচ্ছে না। রমযানে দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে বাজার মনিটরিং আরও জোরদার করা দরকার। নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে আনতে সরকার ইতিমধ্যে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, বাজারে এর প্রতিফলন দেখতে চাই আমরা।
রমযান শারীরিক ইবাদত, একই সাথে মানসিকও। মানুষ তার চতুর্দিকে ছড়িয়ে থাকা যৌন আকর্ষণসহ অন্যান্য ইন্দ্রীয় লিপ্সা থেকে নিজেকে বাঁচাতে যে মানসিক প্রস্তুতি রমযান আমাদের শিক্ষা দেয়, তা আমাদের অতিআনুষ্ঠানিকতার ডামাডোলে হারিয়ে যায়। একশ্রেণির মানুষ সংযম ও কৃচ্ছ্রসাধনের পরিবর্তে ভোগবিলাসে মেতে ওঠে। সম্পদশালীদের ভেতর চলে ইফতার পার্টির প্রতিযোগিতা। অথচ গরিব-দুঃখীদের বিপদে তাদের সহায়তা দান রমযানের অন্যতম শিক্ষা। রমযানের প্রকৃত শিক্ষাকে গুরুত্বদিয়ে দেশবাসী ত্যাগ ও কৃচ্ছ্রসাধনের মাধ্যমে ভ্রাতৃত্ব ও শান্তির আদর্শকে সমুন্নত রাখতে সচেষ্ট হবে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
-সালাহ উদ্দীন তারেক
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক