সম্পাদকীয়, আগস্ট-২০২৩ সংখ্যা

বর্তমান সমাজব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে তথ্য ও প্রযুক্তি। যোগাযোগব্যবস্থায় এনেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। শহুরে জীবন থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল, সব জায়গাতেই এর প্রভাব লক্ষণীয়। তথ্যপ্রযুক্তির গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার ইন্টারনেট। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ইন্টারনেটের ব্যবহার অপরিহার্য। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস—আদালতে গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলি সম্পন্ন করতে ইন্টারনেটের ব্যবহার ক্রমশ বেড়েই চলছে। ইন্টারনেটের কল্যাণে পুরো পৃথিবী পরিণত হয়েছে বৈশ্বিক গ্রামে।

বিজ্ঞানের যেমন আশীর্বাদ রয়েছে, তেমনি রয়েছে এর অভিশাপও। তথ্যপ্রযুক্তির আশীর্বাদে আমরা ঘরে বসেই সবকিছু মুহূর্তের মধ্যে পেয়ে যাচ্ছি, কিন্তু একইসঙ্গে হারাতে বসেছি আমাদের ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য।

আমাদের পরিবারগুলোতেও প্রযুক্তির মন্দ প্রভাবটা পড়ছে মারাত্মকভাবে। পরিবারের অভিভাবকরা বুঝে হোক বা না বুঝে হোক, অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানদের হাতে মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট সুবিধাসহ ল্যাপটপ ইত্যাদি তুলে দিচ্ছেন। শুধু সন্তানদের কথাই বা কেন বলবো, অনেক বাবা—মাও স্মার্টফোন নিয়ে মেতে থাকায় সন্তানের দিকে যথাযথ নজর দিচ্ছেন না।

বিশেষজ্ঞদের মতে, স্মার্টফোন আসক্তির ফলে সন্তানদের প্রতি বাবা—মায়ের আচরণ বদলে যাচ্ছে। সন্তানরা উপেক্ষার শিকার হচ্ছে। স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, ইন্টারনেট, ফেসবুক ইত্যাদি মাদকের মতো আমাদের সমাজকে গ্রাস করে নিচ্ছে। আগের দিনে অর্থাৎ যে সময় এসবের আধিক্য ছিল না, তখন পরিবারের মধ্যে একটা নিবিড় বন্ধন ছিল। বাবা—মা, ভাই—বোন, চাচা—চাচি, দাদা—দাদি, নানা—নানিসহ পরিবারের অন্যদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় ছিল। সবাই নিজেদের মধ্যে সুখ—দুঃখ ভাগাভাগি করত। একজনের বিপদে অন্যজন পাশে গিয়ে দাঁড়াত। কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন আমাদের সুকুমার প্রবৃত্তিগুলো, বিশেষ করে মানবিক মূল্যবোধগুলো কেড়ে নিয়ে আমাদেরকে যান্ত্রিক করে তুলছে।

আমি এ কথা বলতে চাই না যে প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের অগ্রগতি আমাদের সমাজের জন্য অপ্রয়োজনীয়। সভ্যতার উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তির অবদান অপূরণীয়। কিন্তু আমরা কি কখনো অনুধাবন করে দেখেছি যে প্রযুক্তির অকল্যাণকর দিকগুলো আমাদের অবস্থান কোথায় নামিয়ে দিচ্ছে? অবশ্য এর জন্য আবিষ্কার ও আবিষ্কারক কোনোটিই অপরাধী নয়, অপরাধী হচ্ছে এর অপব্যবহারকারীরা।

ইন্টারনেটের অপব্যবহারের ফলে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ ধ্বংসের দিকে এগুচ্ছে। এমনকি কোমলমতি শিশু—কিশোররাও এ থেকে মুক্ত নয়। তারা পর্নোগ্রাফির মতো ভয়াবহ ফাঁদে আটকা পড়ে নিজেদেরকে ঠেলে দিচ্ছে এমন এক অন্ধকার জগতে, যা থেকে সহজে ফিরে আসা সম্ভব নয়।

তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার থেকে সমাজকে বাঁচাতে হলে এখনই আমাদের পরিবারগুলোকে সচেতন হতে হবে। সুদৃঢ় করতে হবে পারিবারিক বন্ধন। সেই সাথে প্রধান্য দিতে হবে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খোলাখুলি আলোচনা করতে হবে প্রযুক্তির কুপ্রভাব নিয়ে। সরকারিভাবে পর্নোগ্রাফি ও অশ্লীল ভিডিও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তা করতে না পারলে দেশ এবং সমাজের উন্নয়ন হলেও পারিবারিক ও সামাজিক অবক্ষয় আমাদের ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাবে। জাতি হিসেবে এটা আমাদের কখনোই কাম্য নয়।

 

সালাহ উদ্দীন তারেক

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক

সত্য ও সুন্দরের প্রহরায় ৪৮ বছর

প্রতিষ্ঠাতা : শায়খ আল্লামা লুৎফুর রহমান বর্ণভী রহ.
নিবন্ধন নম্বর : চ-৪৭৩/০৫

সত্য ও সুন্দরের প্রহরায় ৪৮ বছর

প্রতিষ্ঠাতা : শায়খ আল্লামা লুৎফুর রহমান বর্ণভী রহ.
নিবন্ধন নম্বর : চ-৪৭৩/০৫

কপিরাইট © ২০২৪ | মাসিক হেফাজতে ইসলাম, আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলামের মুখপত্র। Developed By Shabaka IT