রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনন্য বৈশিষ্ট্য—১

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عنهُ قَالَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلّٰى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ ‏فُضِّلْتُ عَلَى الأَنْبِيَاءِ بِسِتٍّ أُعْطِيتُ جَوَامِعَ الْكَلِمِ وَنُصِرْتُ بِالرُّعْبِ وَأُحِلَّتْ لِيَ الْغَنَائِمُ وَجُعِلَتْ لِيَ الأَرْضُ طَهُورًا وَمَسْجِدًا وَأُرْسِلْتُ إِلَى الْخَلْقِ كَافَّةً وَخُتِمَ بِيَ النَّبِيُّونَ ‏

তরজমা : আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু সূ্ত্রে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, অন্য সব নবীর চাইতে আমাকে ছয়টি বিশেষ মর্যাদা দান করা হয়েছে। আমাকে সংক্ষিপ্ত অথচ ব্যাপক অর্থবোধক কথা বলার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। আমাকে অত্যন্ত প্রভাব দ্বারা সাহায্য করা হয়েছে। আমার জন্য গনীমতের (যুদ্ধলব্ধ) সম্পদ হালাল করা হয়েছে। আমার জন্য গোটা পৃথিবীর ভূমি বা মাটি পবিত্রতা হাসিলকার এবং মসজিদ করা হয়েছে। আমাকে সমগ্র সৃষ্টির জন্য (নবী হিসেবে) পাঠানো হয়েছে। আর আমাকে দিয়ে নবীদের আগমন-ধারা সমাপ্ত করা হয়েছে। [সহীহ মুসলিম, হাদীস-ক্রম : ৫২২]

ব্যাখ্যা

রাবী পরিচিতি : আলোচ্য হাদীসটির রাবী (বর্ণনাকারী) আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু। তাঁর প্রকৃত নাম কী ছিল এ সম্পর্কে হাদীস-বিশারদগণের একাধিক মতামত পাওয়া যায়। তবে প্রাধান্যশীল মত হলো, তাঁর প্রকৃত নাম ছিল ‘আবদুর রাহমান ইবনু সাখর।’

তাঁকে ‘আবু হুরাইরা’ কেন বলা হতো?

هرة (হিররাহ) আরবী শব্দ। এর অর্থ ‘বিড়াল।’ তার تصغير (ক্ষুদ্রতাজ্ঞাপক শব্দ) হচ্ছে هريرة (হুরাইরা)। এর অর্থ ‘বিড়ালছানা’।

কোনো একদিনের ঘটনা। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে আগমন করলেন। তখন তাঁর হাতে অথবা বাহুতে ছিল একটি বিড়ালছানা। নবীজি তাঁর এ দৃশ্য দেখে একবার বলেছিলেন, ‘হে আবু হুরাইরা।’ অতঃপর এ নামটি এতো প্রসিদ্ধ হয়ে গেল যে, সবাই তাঁকে এ নামেই চেনে। তাঁর প্রকৃত নাম অনেকেই জানে না।

আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু’র নাম আবদুর রাহমান। কুনিয়াত বা উপনাম ‘আবু হুরাইরা’। মানুষের উপনাম হয় ছেলের দিকে সম্বন্ধ করে। ছেলের নাম আবদুল্লাহ হলে পিতাকে ‘আবু আবদিল্লাহ’ (আবদু্লাহর বাবা) নামে ডাকা হয়। এভাবে ছেলের নাম আবদুর রাহমান হলে বাবাকে আবু আবদির রাহমান (আবদুর রাহমানের বাবা) নামে ডাকা হয়। কিন্তু আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু’র ‘হুরাইরা’ নামে তো কোনো ছেলে ছিল না, এতদসত্ত্বেও তাঁকে আবু হুরাইরা কেন বলা হয়, তা আমরা কিছুটা পরিস্কার করে নিয়েছি উপরের প্যারায়, কারণ, অনেক লোক আরবী না জানার কারণে ভুলের স্বীকার হয়ে থাকে। উপরন্তু ভুলটা অনেক ব্যাপক, তাই উপনাম-বিষয়ক ব্যাপারটা আরেকটু বিস্তৃত আলোচনার দাবি রাখে। নিচে সেদিকেই খানিকটা আলোকপাত করছি।

আমাদের ইমাম আবু হানীফা

ইমাম আবু হানীফা রাহিমাহুল্লাহ’র প্রকৃত নাম নুমান ইবনু সাবিত। ‘আবু হানীফা’ তাঁর উপনাম। এখন ইমাম আবু হানীফার সমালোচকরা (যারা তার তাকলীদ করে না) আমাদের উপর আপত্তি করে থাকে যে, তোমরা অদ্ভুত লোক, তোমরা একজন মেয়ের নামে তোমাদের মাযহাবের নামকরণ করেছ! কেননা, ‘হানীফা’ ছিল নুমান ইবনু সাবিতের মেয়ে। তাঁকে তাঁর মেয়ের নামে ‘আবু হানীফা’ নামকরণ করা হয়ে থাকে। আর এই মেয়ের দিকে সম্বন্ধ করেই তোমাদের মাযহাবের নামকরণ করা হয়েছে ‘হানাফী মাযহাব!’

পাঠক! লক্ষ করুন, প্রথমত ভিত্তি হয়েছে ভুলের উপর। দ্বিতীয়ত আমাদের উপর ভুল আপত্তি উত্থাপন করা হয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে ইমাম আবু হানীফার একমাত্র সন্তান ছিলেন ‘হাম্মাদ।’ তাঁর আর কোনো সন্তান ছিল না। না ছেলে না মেয়ে। [আল-খায়রাতুল হিসান]

সুতরাং যখন তার কোনো মেয়েই ছিল না, তখন আমাদের উপর এই আপত্তি উত্থাপন করা যে, ‘একজন মেয়ের নামে তোমাদের মাযহাবের নামকরণ করা হয়েছে’ এর চেয়ে জঘন্যতম মিথ্যাচার আর কী হতে পারে?

‘আবু হানীফা’ গুণবাচক উপাধি

অবশ্য প্রশ্ন জাগবে যে, যখন হানীফা নামে তাঁর কোনো মেয়েই ছিল না, তাহলে তাঁকে আবু হানীফা বলা হয় কেন? বস্তুত আরবী ভাষায় أب শব্দের একাধিক অর্থ রয়েছে। যেমন—পিতা, ওয়ালা (কোনো কিছুর সংশ্লিষ্টতা বোঝাতে)। কখনও এটি পিতার অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন আবুল কাসিম অর্থাৎ কাসিমের পিতা। আবু যুবায়ের তথা যুবায়েরের পিতা। আবার কখনও এটি ওয়ালা বা কোনো কিছুর সংশ্লিষ্টতা বোঝাতে আসে।

নাম আবদুল্লাহ, অথচ উপনাম আবু বকর। এর অর্থ এই নয় যে, তিনি বকরের পিতা। বরং তার অর্থ হলো বকর-ওয়ালা বা অগ্রগামী। আরবী ভাষায় বকর শব্দের অর্থ অগ্রগামিতা। যেহেতু সিদ্দীকে আকবর রাদিয়াল্লাহু আনহু প্রতিটি ক্ষেত্রে অগ্রগামী ছিলেন, তাই তাঁকে ‘আবু বকর’ বা অগ্রগামী উপনামে ডাকা হয়। এর অর্থ এই নয় যে, তিনি বকরের পিতা।

একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু’র বাড়িতে যান। আলীকে বাড়িতে না পেয়ে স্বীয় কন্যা ফাতিমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আলী কোথায়?’  ফাতিমা জবাব দিলেন, ‘তিনি মসজিদে।’

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদে গেলেন। আলী তখন মাটিতে শুয়ে ছিলেন। রাসূল তাঁকে দেখে বললেন—قم يا أبا تراب—হে আবু তুরাব! ওঠো।

এখানে আবু তুরাব শব্দের অর্থ মাটির বাবা নয়, বরং এর অর্থ মাটিতে শয়নকারী। অতএব أب শব্দের এক অর্থ হলো ‘ওয়ালা’। তদ্রূপ আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু’র প্রকৃত নাম ছিল আবদুর রাহমান ইবনু সাখর। কিন্তু তাঁকে আবু হুরাইরা উপনামে ডাকা হতো। এখানে আবু হুরাইরা অর্থ বিড়ালের বাবা নয়, বরং এর অর্থ হলো বিড়ালওয়ালা বা বিড়াল প্রতিপালনকারী।

আবু হানীফা উপনামের কারণ

প্রাসঙ্গিকভাবে পাঠকের মনে এ প্রশ্ন নিশ্চয় জেগেছে যে, তাহলে আবু হানীফা উপনামের কারণ কী? উত্তর হলো—ইমামে আযম আবু হানীফার নাম নুমান। উপনাম আবু হানীফা। এর অর্থ হানীফা-ওয়ালা। আরবী ভাষায় হানীফা শব্দের অর্থ দোয়াত বা কালি। ইমামে আযমের মজলিসে এতো বেশি দোয়াত ও কলম থাকত যে, তিনি একদিকে আলোচনা করতেন অপরদিকে ছাত্ররা তা লিখতে থাকত। সুতরাং তাঁর মজলিসে প্রচুর দোয়াত-কালি থাকার কারণে তাঁকে ‘আবু হানীফা’ তথা দোয়াত-ওয়ালা বলা হতো। অথবা তাঁকে আবু হানীফা এ কারণে বলা হয় যে, হানীফা শব্দের অর্থ বিশুদ্ধ ধর্ম, যাতে বিন্দুমাত্র ভ্রষ্টতা নেই। আবু হানীফা কেন বলা হতো? কারণ, ইমাম সুয়ূতী রচিত ‘তাবয়ীযুস সাহীফা’ গ্রন্থে তাঁর সম্পর্কে বর্ণিত আছে—

أول من دون علم الشريعة ورتبه أبوابا

অর্থাৎ তিনিই সর্বপ্রথম শরয়ী জ্ঞান সংকলন করেছেন। তাই এই বিশুদ্ধ দ্বীন লিপিবদ্ধ করার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অগ্রগামী। বিধায় তাঁকে আবু হানীফা বলা হয়।

এখন যারা আমাদের উপর আপত্তি উত্থাপন করে, তাদের মূলত ইতিহাস জানা নেই। এজন্যই তারা কোথাকার হানীফা মেয়েকে ইমাম আবু হানীফা’র মেয়ে বানিয়ে ফেলেছে! তাছাড়া আরবী ভাষা সম্পর্কেও তাদের জ্ঞান নেই। তাই أب শব্দের অর্থ নিয়েছে কেবলই ‘বাবা’। তারা যদি ইতিহাস এবং আরবী বুঝত, তাহলে আমাদের উপর এই অভিযোগ তুলত না।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মর্যাদা

আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন— فُضِّلْتُ عَلَى الأَنْبِيَاءِ بِسِتٍّ অর্থাৎ আমাকে ছয়টি বিষয়ে অন্যসব নবীর ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ আমাকে এমন ছয়টি পুরষ্কার দান করেছেন, যা অন্য কোনো নবিকে দান করেননি। সেগুলো হলো—

أُعْطِيتُ جَوَامِعَ الْكَلِمِ وَنُصِرْتُ بِالرُّعْبِ وَأُحِلَّتْ لِيَ الْغَنَائِمُ وَجُعِلَتْ لِيَ الأَرْضُ طَهُورًا وَمَسْجِدًا وَأُرْسِلْتُ إِلَى الْخَلْقِ كَافَّةً وَخُتِمَ بِيَ النَّبِيُّونَ

আমাকে সংক্ষিপ্ত অথচ ব্যাপক অর্থবোধক কথা বলার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। আমাকে অত্যন্ত প্রভাব দ্বারা সাহায্য করা হয়েছে। আমার জন্য গনীমতের (যুদ্ধলব্ধ) সম্পদ হালাল করা হয়েছে। আমার জন্য গোটা পৃথিবীর ভূমি বা মাটি পবিত্রতা হাসিলকার এবং মসজিদ করা হয়েছে। আমাকে সমগ্র সৃষ্টির জন্য (নবী হিসেবে) পাঠানো হয়েছে। আর আমাকে দিয়ে নবীদের আগমন-ধারা সমাপ্ত করা হয়েছে।

‘জাওয়ামিয়ুল কালিম কী?

أُعْطِيتُ جَوَامِعَ الْكَلِمِ—‘আমাকে জাওয়ামিয়ুল কালিম দান করা হয়েছে।’ জাওয়ামিয়ুল কালিম-এর অর্থ কী? বস্তুত جوامع (জাওয়ামি) শব্দটি جامع (জামি’)-এর বহুবচন। এর অর্থ ‘ব্যাপক অর্থবোধক’। আর كلم (কালিম) শব্দটি كلمة  (কালিমা)-এর বহুবচন। আরবী ভাষায় একক অর্থবোধক একক শব্দকে ‘কালিমা’ বলা হয়। আরবীতে একক শব্দ অথচ তার অর্থ কয়েকশো অথবা কয়েক হাজার এমন শব্দকে ‘কালিমা জামেয়া’ বলা হয়। নবীজি বলেন, আমাকে জাওয়ামিউল কালিম দেওয়া হয়েছে। এর অর্থ হলো, পূর্বেকার নবীগণকে বহু কালেমা বা কথা দেওয়া হয়েছে। তাঁদের যতটা মাসআলা-মাসাইলের প্রয়োজন ছিল, ততটা মাসাইলের জন্য কালিমা বা কথা দান করা হয়েছে। পক্ষান্তরে আমাদের নবীর যতটা মাসআলা-মাসাইলের প্রয়োজন পড়েছে, যদি আল্লাহ তাঁকে ততটা কথা দান করতেন, তাহলে বলুন তো কোন প্রেস এতসব কথা ছাপতে পারত, কোন কলম তা লিপিবদ্ধ করত, কোন বক্ষ তা সংরক্ষণ করে রাখত এবং কেই-বা তা পড়তে পারত? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রিসালাত কিয়ামত অবধি। কিয়ামাত পর্যন্ত তাঁর উম্মত লক্ষ লক্ষ মাসআলা-মাসাইলের সম্মুখীন হবে। যদি লক্ষ লক্ষ মাসআলা-মাসাইলের জন্য তাঁকে লক্ষ লক্ষ কথা দান করা হয়, তাহলে এতসব কথা কোন প্রেস ছাপতে পারত, কে লিখত এবং কেই-বা তা পড়ত?

আল্লাহ তাআলা অনুগ্রহ করেছেন যে, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে লক্ষ লক্ষ মাসআলা-মাসাইল দান করেছেন, কিন্তু এগুলোর জন্য তাঁকে অল্প কথা দান করেছেন। কথা অল্প, অথচ মাসআলা অনেক। এটা আমাদের নবীর বৈশিষ্ট্য।

আমি এর উদাহরণ দিলে আপনারা বুঝতে পারবেন যে, অল্প কথার ভেতর বহু মাসআলা কীভাবে থাকতে পারে।

শাইখুল হাদীস যাকারিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর শামায়েলে তিরমিযীর ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘খাসায়েলে নববী’-এর মধ্যে একটি চমৎকার উদাহরণ দিয়েছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এক সাহাবী আনাস ইবনু মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু। তিনি বাল্যকাল থেকেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খিদমাতে নিয়োজিত ছিলেন। ১০ বছর পর্যন্ত রাসূলের খিদমাত করেছেন। তাঁর এক ছোট ভাই ছিল। নাম আবু উমায়ের। একদা নবীজি আবু উমায়েরকে চিন্তিত দেখতে পান। তাঁর একটি চড়ুই-ছানা ছিল। তিনি খাঁচায় ওটা পুষতেন। চড়ুই-ছানাটি মরে যাওয়ায় তিনি চিন্তিত হয়ে পড়েন। তাঁকে চিন্তিত দেখে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন— يا أباعمير! ما فعل النغير—হে আবু ওমায়ের! নুগায়ের কী করছে?

‘নুগায়ের’ আরবী শব্দ। এর অর্থ চড়ুই-ছানা। আবু উমায়ের অর্থ উমায়েরের বাবা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম করে জিজ্ঞেস করেছেন, ‘আবু উমায়ের! চড়ুই-ছানাটির কী হয়েছে? ওটি কোথায় গেল?’ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ কথাটি কৌতুক করে বলেছেন।

শাইখুল হাদীস যাকারিয়া বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কৌতুক করে এ কথাটি বলেছেন, আর ফকীহগণ (ইসলামী আইন শাস্ত্রবিদগণ) এই একটিমাত্র কথা থেকে শ’খানেক মাসআলা উদ্ঘাটন করেছেন। সুবহানাল্লাহ।

এবার লক্ষ করুন, একটি বাক্যের ভেতর শ’খানেক মাসআলা। যদি প্রতিটি মাসআলার জন্য পৃথক পৃথক বাক্য হতো, তাহলে শ’খানেক হাদীস হয়ে যেত। এবার শ’খানেক মাসআলা, অথচ হাদীস একটি। এটা আল্লাহর নবীর বৈশিষ্ট্য।

ফকীহগণ শ’খানেক মাসআলা কীভাবে বের করেছেন, বুঝতে আমি এখানে দু-চারটি মাসআলা উল্লেখ করছি।

প্রথম মাসআলা : আবু উমায়ের এখনও কিশোর, বিবাহ করেননি এবং কোনো সন্তানের বাবাও নন। কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে আবু উমায়ের বলে সম্বোধন করেছেন। এবার মাসআলা বের হলো যে, যার কোনো সন্তান নেই তাকে উপনামে ডাকা যাবে কি-না। যেমন কারও খায়ের নামক কোনো ছেলে নেই; কিন্তু তার উপনাম আবুল খায়ের। অথচ তার এখনও বিবাহ হয়নি। তাহলে সে আবুল খায়ের কীভাবে হলো? এখন তো অনেক মেয়ের নাম উম্মে আয়মান রাখা হয়। অথচ তার কোনো সন্তান নেই । তাহলে সে আবার উম্মে আয়মান হলো কীভাবে? সুতরাং এরূপ উপনাম রাখা জায়েয হবে কি-না? উত্তর হলো, হ্যাঁ রাখা যাবে। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আনাস ইবনু মালিকের অবিবাহিত ভাইকে সম্বোধন করতে গিয়ে বলেছেন, ‘হে আবু উমায়ের।’ এতে প্রতীয়মান হয় যে, এরূপ উপনাম জায়েয আছে।

দ্বিতীয় মাসআলা : আবু উমায়ের ছিলেন অপ্রাপ্তবয়স্ক। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সঙ্গে কৌতুক করেছেন। এখন মাসআলা হলো, বড়রা ছোটদের সঙ্গে কৌতুক করতে পারবে কি-না? তো হাদীস দ্বারা প্রতীয়মান হলো যে, হ্যাঁ, পারবে।

তৃতীয় মাসআলা : আবু উমায়েরের চড়ুই-ছানাটি হারিয়ে যাওয়ার কারণে তিনি চিন্তিত হয়ে পড়েন। নবীজি তাঁর সঙ্গে কৌতুক করলেন। এর দ্বারা বোঝা গেল, চিন্তিত ব্যক্তির সঙ্গে কৌতুক করা জায়েয আছে।

চতুর্থ মাসআলা : চড়ুই-ছানা (অথবা অন্য যে কোনো পাখি) খাঁচায় পুষা জায়েয আছে। এই হাদীস দ্বারা তা প্রমাণিত।

এবার লক্ষ করুন, বাক্য একটি অথচ মাসআলা শ’খানেক। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘এটা আমার মর্যাদা। আল্লাহ আমাকে সংক্ষিপ্ত, অথচ ব্যাপক অর্থবোধক কথা বলার যোগ্যতা দিয়েছেন।

চলবে

সত্য ও সুন্দরের প্রহরায় ৪৮ বছর

প্রতিষ্ঠাতা : শায়খ আল্লামা লুৎফুর রহমান বর্ণভী রহ.
নিবন্ধন নম্বর : চ-৪৭৩/০৫

সত্য ও সুন্দরের প্রহরায় ৪৮ বছর

প্রতিষ্ঠাতা : শায়খ আল্লামা লুৎফুর রহমান বর্ণভী রহ.
নিবন্ধন নম্বর : চ-৪৭৩/০৫

কপিরাইট © ২০২৪ | মাসিক হেফাজতে ইসলাম, আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলামের মুখপত্র। Developed By Shabaka IT