২০২৩ এর ৮ এপ্রিল দৈনিক আনন্দবাজার প্রকাশ করে একটি রিপোর্ট। Mental Health Tips হিসেবে প্রকাশিত এই রেপোর্টের শিরোনাম হলো- ‘ব্যাঙের ছাতা থেকে তৈরি ওষুধে বদলে যেতে পারে মানসিক অবসাদের রোগীর ভাগ্য, ইঙ্গিত গবেষণায়।’ রিপোর্টে ব্রিটেনের বিজ্ঞান পত্রিকা ‘নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন’ এ প্রকাশিত একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। গবেষণা পরিচালনা করেন ‘কম্পাস পাথওয়ে’ নামের একটি স্বাস্থ্য পরিষেবা সংস্থার বিজ্ঞানীরা। তাদের গবেষণা ছিল ‘ম্যাজিক মাশরুম’ নিয়ে। তাদের গবেষণায় প্রমাণিত হয় ‘ম্যাজিক মাশরুম’ বলে পরিচিত এক ছত্রাক থেকে তৈরি ওষুধে মুক্তি মিলতে পারে মানসিক অবসাদ থেকে। এই মাশরুম থেকে পাওয়া এক ধরনের সাইকোডেলিক উপাদান ও সাইকোথেরাপির যুগ্ম চিকিৎসায় চমকপ্রদ ফলাফল তারা পান। ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার বাইশটি শহরে পরীক্ষামূলকভাবে ‘সাইলোসাইবিন’ নামের একটি উপাদান থেকে তৈরি ওষুধ প্রয়োগ করে দেখেন গবেষকরা। ১ মিলিগ্রাম, দশ মিলিগ্রাম ও পঁচিশ মিলিগ্রাম- এই তিন প্রকার ওষুধ রোগীদের উপর প্রয়োগ করে দেখা হয়। দেখা যায়, যারা পঁচিশ মিলিগ্রাম ওষুধ ব্যবহার করেছেন, তাদের প্রায় ২৯ শতাংশই ৩ সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ বোধ করতে শুরু করেছেন। দশ ও ১ মিলিগ্রাম ওষুধ ব্যবহারের ক্ষেত্রে এই হার ৯ শতাংশ ও ৮ শতাংশ। ‘সাইলোসাইবিন’ নামের এই উপাদানটিই পাওয়া যায় মাশরুমে। বিজ্ঞানীদের উদ্বৃতি দিয়ে আনন্দবাজার জানায়, এই উপাদানটি দেহের ভিতরে প্রবেশ করার পর সাইলোসিন নামের একটি উপাদানে ভেঙ্গে যায়। এই উপাদানটি স্নায়ু সংবেদন পরিবহণকারী পদার্থ বা নিউরোট্রান্সমিটারের ঢেউ তোলে। ফলে মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ সক্রিয় হয়ে ওঠে। বিষয়টি কিছুটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মতো লাগলেও গবেষকদের দাবি এতে উপকারই হয় মস্তিষ্কের। নতুন নতুন স্নায়ুপথ তৈরি হয়। বৃদ্ধি পায় সামগ্রিক কার্যকারিতা। ফলে চিকিৎসায় অনেক বেশি সাড়া দেয় মস্তিষ্ক। মূলত মাশরুমে নিহিত উপাদানসমূহ কাজে লাগিয়ে মানসিক চিকিৎসা শুধু নয়, শারিরিক চিকিৎসাও বহুদূর এগিয়েছে। মাশরুমের এই উপকারিতা সম্পর্কে সাম্প্রতিক গবেষণা আমাদেরকে জানাচ্ছে। কিন্তু মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদীস থেকে এর চিকিৎসাগত উপকার আরো সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত। বিশেষত চোখের রোগের কথা সুনির্দৃষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। সাঈদ ইবনে যায়দ ইবনে আমর ইবনে নুফাইল রাযিআল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাশরুম সম্পর্কে বলেন- وَمَاؤُهَا شِفَاءٌ لِلْعَيْنِ ‘তার রসের মধ্যে রয়েছে চোখের রোগের চিকিৎসা।’ (সহীহ মুসলিম, হাদীস-ক্রম : ৫১৬৯) তার বহুমাত্রিক উপকারের দিকটি খোলাসা হয় হাদীসের বাক্যধারায়। কারণ আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একে পবিত্র খাবার ‘মান্ন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। সাঈদ ইবনে যায়দ রাযিআল্লাহু আনহু বলেন- سَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ “ الْكَمْأَةُ مِنَ الْمَنِّ ‘আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জবানে শুনেছি, মাশরুম হলো ‘মান্ন’ (উপাদেয় পবিত্র খাবার) এর অন্তর্গত। (সহীহ মুসলিম, হাদীস-ক্রম : ৫১৬৯) ফলে এর মধ্যে কল্যাণের বহুমাত্রিকতা থাকবে, এটা অবধারিত। আমরা তার উপকারিতার কিছু দিক দেখাবো, ইনশাআল্লাহ।
আধুনিক বিজ্ঞানে এটা স্বীকৃত যে, মাশরুম হচ্ছে পুষ্টিকর এক সবজি। সাধারণ সবজি যেভাবে মাটিতে জন্মায়, মাশরুম তেমন নয়। এ মূলত ছত্রাক জাতীয় পরজীবী উদ্ভিদ। জীবন ধারনের জন্য এরা জৈবিক বস্তু (Organic mattor) থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি গ্রহণ করে। বেশির ভাগ মাশরুমই বিষাক্ত। গ্রামে-গঞ্জে ‘ব্যাঙের ছাতা’ নামে মাশরুমের প্রসিদ্ধি। এগুলো মূলত ছত্রাক; ছত্রাকের ফুল বা ফল। ছত্রাকের দেহ মূলত সুতার মতো ‘আণুবীক্ষণিক মাইসেলিয়াম’ দ্বারা গঠিত। এই দেহকাঠামো আমাদের অগোচরেই জৈববস্তুসমৃদ্ধ মাটিতে, উদ্ভিদের জীবিত বা মৃত কাঠের ভেতর জন্মাতে থাকে। বছরের বিভিন্ন আবহাওয়ায় অনুকূল সময়ে নিজেদের বংশবিস্তারের জন্য ছত্রাকগুলো এই মাশরুমের উৎপাদন করে। বৃষ্টির সময় ব্যাঙ এর ছাতার মতো অংশের নিচে আশ্রয় নেয় বলে মানুষ এই ছত্রাককে ব্যাঙের ছাতা বলে। ভেজা মাটিতে, মাঠে-ময়দানে, গোবর বা খড় ইত্যাদি পচনশীল জৈব পদার্থের উপর এদের জন্ম হয় সাধারণত। বিষাক্ত ব্যাঙের ছাতাকে বলা হয় ‘টোড স্টুল’ (toadstool)। কোন কোন প্রজাতি কচি অবস্থায় খাদ্যযোগ্য থাকলেও পরিণত বয়সে বা পচতে শুরু করলে বিষাক্ত বা খাবার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। মাশরুম প্রধানত মৃত বস্তুতে গজিয়ে উঠে; সে মৃতজীবী। তবে উদ্ভিদকে আশ্রয় করে বাঁচে বহু মাশরুম। তারা উদ্ভিদের জন্য ক্ষতিকর পরজীবী। কিছু মাশরুম বিভিন্ন উদ্ভিদের শিকড়ের সঙ্গে উপকারী সহাবস্থান করে বেড়ে ওঠে। কিছু মাশরুম অপর মাশরুমের ওপর পরজীবী হিসেবে বেড়ে উঠতেও দেখা যায়। প্রাণীর মৃতদেহ থেকেও মাশরুম গজিয়ে ওঠে। উদ্ভিদ ও প্রাণীর মধ্যে যেমন বৈচিত্র্য আছে, তেমনি এই মাশরুমের মধ্যেও রয়েছে অনেক বৈচিত্র্য। আনুমানিক দশ হাজার প্রজাতির মাশরুমের উপকার-অপকার নিয়ে গবেষণা হয়েছে। এর মধ্যে উপকারী মাশরুমের প্রজাতি দুই হাজার। এদের মধ্যে বিভিন্ন প্রজাতিকে খাবার হিসেবে গ্রহণ করা হয়। আমেরিকার মাশরুম বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি বলেছেন, শুধু উত্তর আমেরিকাতেই ১০ হাজার প্রজাতির মাশরুম আছে। এসব মাশরুমের বেশির ভাগই এখনো অনাবিষ্কৃত। এসব মাশরুমের শতকরা ৫০ ভাগ খাওয়ার যোগ্য। তবে এর ২০ ভাগ মানুষকে অসুস্থ করে দেবে, ৪ ভাগ চমৎকার রকমের সুস্বাদু, আর ১ ভাগ যে কাউকে মেরে ফেলার জন্য যথেষ্ট। বাংলাদেশে বিদ্যমান প্রায় ২০ প্রজাতির মাশরুমের মধ্যে ৫-৬টি বিষাক্ত। বনজ কিছু মাশরুম পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীরা খায়। অতি সম্প্রতি কয়েকটি ছোট খামারে মাশরুমের চাষ চলছে।
এদেশে খামারে চাষ হওয়া মাশরুমের মধ্যে আছে ঋষি মাশরুম, গুটি বা বাটন মাশরুম, মিল্ক হোয়াইট মাশরুম, ওয়েস্টার মাশরুম ইত্যাদি। ঋষি মাশরুম বিশ্বে ঔষধি মাশরুম হিসেবে পরিচিত। ক্যান্সার, টিউমার, হৃদরোগসহ বিভিন্ন জটিল ও কঠিন রোগের ওষুধ তৈরি করা হয় এ মাশরুম দিয়ে। এ ছাড়া কসমেটিকস শিল্পে পেস্ট, সাবান, লোশন, শ্যাম্পু, ম্যাসেজ ওয়েল, এমনকি চা, কফি, চকলেট তৈরিতেও এর ব্যবহার হয় বিশ্বে প্রচুর। বাটন মাশরুম ভারতে চাষ করা প্রধান ফসল। কিন্তু এখন এটি সমতলভূমিতেও সফলভাবে চাষ করা হয়। খেতে সুস্বাদু ছাড়াও এটি স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। মাশরুমের ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে এর চাষীরা অল্প সময়ে ভালো মুনাফা অর্জন করতে পারে।
মিল্ক হোওয়াইট মাশরুমের রয়েছে ব্যাপক পুষ্টিগুণ। এতে পর্যাপ্ত আমিষ, চর্বি, আঁশ, শর্করা এবং ভিটামিন থাকে। এতে থায়ামিন, রিবোফ্লাবিন, নিকোটিনিক এসিড, পাইরিডক্সিন, বায়োটিন, অ্যাসকরবিক এসিড থাকায় সম্পূরক খাবার হিসাবে এর ঐতিহাসিক ব্যবহারের কথা জানা যায়।
ওয়েস্টার মাশরুম অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর খাবার। এতে ‘পেনিসিলিন’ নামক অ্যান্টিবায়োটিক থাকে যা মানুষের জন্য বেশ উপকারী এবং এটি খেতে খুবই সুস্বাদু। এতে আছে প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল, অ্যামাইনো এসিড, অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।
বস্তুত যে মাশরুমগুলো বিষাক্ত নয়, যাদের খাদ্যস্বীকৃতি রয়েছে, আধুনিক গবেষণা প্রমাণ করেছে যে, খাদ্য হিসেবে তারা অতুলনীয়। একটি পরিপূর্ণ প্রোটিনের পূর্বশর্ত হলো মানব দেহের অত্যাবশ্যকীয় ৯টি অ্যাসিডের উপস্থিতি। মাশরুমে অতীব প্রয়োজনীয় এ ৯টি অ্যামাইনো অ্যাসিড বিদ্যমান। অন্যান্য প্রাণিজ আমিষ যেমন- মাছ, মাংস, ডিম অতি নামি-দামি খাবার হলেও এতে চর্বি সম্পৃক্ত অবস্থায় থাকায় নানা সমস্যা দেখা দেয়। কারণ তা অতি মাত্রায় গ্রহণ করলে শরীরে কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পায়। ফলে মেদ-ভুঁড়ির সৃষ্টি, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ প্রভৃতি জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বহুগুণে বৃদ্ধি পায়।
মাশরুমের প্রোটিনে-ফ্যাট এবং কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ অতি স্বল্প এবং কোলেস্টেরল ভাঙ্গার উপাদান- লোভস্ট্রাটিন, অ্যান্টাডেনিন, ইরিটাডেনিন ও নায়াসিন থাকায় শরীরের কোলেস্টেরলস জমতে পারে না বরং মাশরুম খেলে শরীরে বহু দিনের জমানো কোলেস্টেরল ধীরে ধীরে বিনষ্ট হয়ে যায়। ১০০ গ্রাম শুকনো মাশরুমে ২৫-৩৫ গ্রাম প্রোটিন রয়েছে। পক্ষান্তরে আমরা যা অতি নামি-দামি খাবার হিসেবে মাছ, মাংস, ডিম খেয়ে থাকি তার মধ্যে ১০০ গ্রাম মাছ, মাংস ও ডিমে প্রোটিনের পরিমাণ হলো ১৬-২২ গ্রাম, ২২-২৫ গ্রাম ও ১৩ গ্রাম মাত্র।
ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে মাশরুম। মাশরুম রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। উচ্চ ফ্যাট সমৃদ্ধ লাল মাংসের পরিবর্তে মাশরুম গ্রহণ করলে ওজন কমানো সহজ হয়।
মাশরুম হচ্ছে ল-ক্যালোরির খাবার। নিম্ন শক্তিসম্পন্ন হওয়ায় এতে নেই কোলেস্টরল। এতে চর্বির মাত্রাও নিতান্তই কম। তবে যে চর্বি আছে, তা হলো ফ্যাটি এসিড, লিনোলোয়িক এসিড, যা শরীরের জন্য উপকার বয়ে আনে। ফলে তা হৃদরোগীদের জন্য খুবই উপাদেয়, কল্যাণকর। মাশরুমে ইরিটাডেনিন, লোভাস্টটিন এবং এনটাডেনিন নামে একধরনের উপাদান থাকে, যেটি শরীরের কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। এতে থাকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ গ্লাইকোজেন, তাই এটি শক্তিবর্ধক হিসেবে কাজ করে শরীরে।
এতে থাকে প্রচুর পরিমাণে ফলিক এসিড ও লোহা, যা শরীরের রক্তশূন্যতা পূরণে সাহায্য করে।
মাশরুমে এডিনোসিন থাকাতে এটি ডেঙ্গু জ্বরের প্রতিরোধক হিসেবেও কাজ করে। মাশরুমে নিয়াসিন ও রিবোফ্লাবিন থাকে যা ত্বকের জন্য উপকারী। এই ছত্রাকের ৮০-৯০ ভাগই হচ্ছে পানি, যা ত্বককে নরম ও কোমল রাখে। সূর্যের আলোর সংস্পর্শে যে মাশরুম উৎপন্ন হয় তাতে প্রচুর ভিটামিন ডি থাকে, যা ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের শোষণ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। মাশরুমের ভিটামিন বি স্নায়ুর জন্য উপকারী এবং বয়সজনিত রোগ যেমন- ‘আলঝেইমাস’র্ রোগ থেকে রক্ষা করে।
মাশরুমে রয়েছে ভিটামিন সি, বি কমপ্লেক্স, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ফসফরাস ও কমমাত্রায় ক্যালসিয়াম ও লৌহ। রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বজায় রাখতে মাশরুম সহায়তা করে। এতে থাকে পলিফেনল ও সেলেনিয়াম নামের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এর পাশাপাশি মানুষের শরীরের জন্য অত্যাবশ্যকীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সালফারও থাকে। এগুলো হচ্ছে অত্যাবশ্যকীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা মারাত্মক কিছু রোগ প্রতিরোধ করে। এসব রোগের মধ্যে আছে স্ট্রোক, স্নায়ুতন্ত্রের রোগ এবং ক্যান্সার ইত্যাদি। নিয়মিত মাশরুম খেলে ব্রেস্ট ক্যান্সার ও প্রোস্টেট ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে। মাশরুমের লিংকজাই-৮ নামক উপাদানটি হেপাটাইটিস-বি জন্ডিসের প্রতিরোধক। মাশরুমে আছে ফাইটোকেমিক্যাল। যা টিউমারের বৃদ্ধিতে বাঁধার সৃষ্টি করে।
গর্ভবতী মাকে নিয়ম করে মাশরুম খেতে দিন, এতে প্রাকৃতিকভাবেই নবজাতকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
নার্ভ ও স্পাইনাল কর্ডের সুস্থতার জন্য খেতে পারেন মাশরুম।
এতে নিউক্লিক অ্যাসিড ও অ্যান্টি এলার্জেন থাকায় অ্যালার্জি রোগের প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে মাশরুম। এতে থাকে ইলুডিন এস নামক এক ধরনের উপাদান যা আমাশয় রোগীদের জন্য কার্যকর।
নিয়মিত মাশরুম খেলে হৃদ্রোগ ও উচ্চ রক্তচাপের মতো রোগগুলো এড়ানো যায়। এতে প্রচুর পরিমাণে হজম সহায়ক এনজাইম থাকে, যেটি হজমে সহায়তা করে এবং খিদেবর্ধক হিসেবে কাজ করে। এর ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ভিটামিন ডি-শিশুদের দাঁত ও হাড় গঠনের জন্য প্রয়োজন।
মাশরুমে শর্করার পরিমাণ কম। ফলে বহুমূত্র রোগীদের জন্য তা আদর্শ খাবার। এতে থাকে পরিমিত পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট ও যথেষ্ট আঁশ (৮-১০%)। যা স্বাস্থ্যের জন্য আশীর্বাদ। এই ফাইবার বা আঁশ পাকস্থলি দীর্ঘক্ষণ ভরা রাখতে সাহায্য করে। মাশরুমে সোডিয়ামের পরিমাণ কম থাকে এবং প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম থাকে। যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং হৃদপিণ্ডের কাজে সহায়তা করে। দৈনন্দিন কিছু অসুখের সাথেও সে লড়াই করে। যার মধ্যে আছে কফ, ঠান্ডাজনিত রোগ বালাই। এতে থাকা ফাইবার ও এনজাইম হজমের জন্য সহায়ক। এটি অন্ত্রে উপকারি ব্যাকটেরিয়ার কাজ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং কোলন এর পুষ্টি উপাদান শোষণকেও বাড়তে সাহায্য করে। তবে মাশরুমে পিউরিন নামে একধরনের উপাদান থাকায়, যাঁদের গেটে ব্যথা আছে, তাঁদের তা না খাওয়াই ভালো।
মানবদেহের প্রতি মাশরুমের সবচেয়ে বড় সহায়তা হলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি। এই রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা সৃষ্টি করাই ভিটামিন ও মিনারেলের প্রধান কাজ। প্রতিদিন শরীরের চাহিদামতো ভিটামিন ও মিনারেল খেতে না পারলে শরীরের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা ক্রমশ দুর্বল হয়। নানারূপ জটিল রোগ শরীরকে কামড়ে ধরে। এক্ষেত্রে মাশরুম অত্যন্ত সহায়ক বন্ধু। কারণ প্রাকৃতিকভাবে মাশরুমেই সবচেয়ে বেশি ভিটামিন ও মিনারেল বিদ্যমান। মাশরুমে আছে প্রচুর ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাসিয়াম ও সেলেনিয়াম। সেলেনিয়াম উপাদানটি খুবই বিরল, অন্য কোনো সবজিতেই তা পাওয়া যায় না। মাশরুমে আছে এরগোথিওনেইন নামে এক ধরনের শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা নানা রোগের বিরুদ্ধে মানব দেহের জন্য ঢালের মতো কাজ করে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খাদ্যব্যবস্থাপনায় মাশরুমের রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব, আধুনিক বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান যাকে নতুন বাস্তবতায় ব্যাখ্যা করছে।