শেক্সপিয়রের বিখ্যাত নাটক ‘Henry The Fourth’-এ আছে মৌমাছির প্রসঙ্গ। সেখানে শেক্সপিয়র জানান পুরুষ মৌমাছিরা মধু সংগ্রহ করে এবং তাদের একজন রাজা থাকে। এই রাজা মৌমাছির কাছে দিনশেষে সব সৈনিক মৌমাছিদের কৈফিয়ত দিতে হয়। জানাতে হয় সারাদিন কোন কোন কাজ করেছে তারা।
নাটকে উক্ত এ বক্তব্য কোনো কিছুকে স্পষ্টত প্রমাণ করে না। কিন্তু এতে প্রতিফলিত হয়েছে শেক্সপিয়রের সমকালীন মৌমাছি-জ্ঞান ও দৃষ্টিভঙ্গি।
১৯৭০ সালে অস্ট্রিয়ান বিজ্ঞানী কার্ল ভন ফ্রিশ মৌমাছি নিয়ে গবেষণায় দেখান, শেক্সপিয়র-যুগে মৌমাছি সম্পর্কে সাহিত্যিক ও বিজ্ঞানীরা যা জানতেন, তা ভুল। অষ্টাদশ শতকের সমাপ্তি লগ্নেও বিজ্ঞানীরা মৌমাছিকে জানতেন কেবল পুরুষ ও স্ত্রী মধুকর হিসেবে। পুরুষের কাজ হলো সন্তান উৎপাদন কাজে স্ত্রী মৌমাছিদের সহায়তা করা, গৃহ (মৌচাক) নির্মাণ করা, গৃহ পাহারা দেওয়া, ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করা ইত্যাদি। আর স্ত্রী মৌমাছিদের কাজ হলো শুধু সন্তান উৎপাদন করা।
১৯৭৩ সালে মৌমাছি গবেষণার জন্য নোবেল পান কার্ল ভন। তিনি প্রমাণ করেন মৌমাছি তিন প্রকার। একটি স্ত্রী মৌমাছি। তার কাজ সন্তান উৎপাদন। আরেকটি পুরুষ মৌমাছি। তার কাজ স্ত্রী মৌমাছির প্রজনন নিশ্চিত করা। তৃতীয় প্রকার হলো বন্ধ্যা মৌমাছি। এরা করে বিবিধ কাজ। প্রাকৃতিকভাবেই এরা হয় বন্ধ্যা। এই সব মেয়ে মৌমাছি সন্তান জন্ম দেবার ক্ষমতা রাখে না।
মধু সংগ্রহ করে মূলত তারা। ঘর বানায় মূলত তারা। সুরক্ষা-প্রতিরক্ষার কাজও করে মূলত তারা। এসব মৌমাছি যখনই কোনো ফুলের বাগান বা উদ্যানের সন্ধান পায়, সাথে সাথে জানিয়ে দেয় অন্য সব কর্মী মধুকরকে। তাদেরকে সে দেয় উদ্যানের দিকনির্দেশনা। কার্ল ভনের ভাষায় এ প্রক্রিয়ার নাম ‘Waggle Dance’। বিখ্যাত ‘The Dancing Bees’ গ্রন্থে তিনি মৌমাছিদের কাজ ও মধু সঞ্চয় প্রক্রিয়াকে ব্যাখ্যা করেছেন বিস্তৃতভাবে।
তার আবিষ্কার বৈজ্ঞানিক বাস্তবতা হিসেবে স্বীকৃত হয় এবং তা মিলে যায় আল কুরআনের বয়ানের সাথে। এর আগের বৈজ্ঞানিকেরা নিজেদের অবগতির সাথে আল কুরআনের মিল খুঁজে পাচ্ছিলেন না। এবার তারা বুঝলেন, নিজেদের সাবেক অবগতি ছিল ভুল এবং কুরআন কারীম মৌমাছি সম্পর্কে যা বলেছে, সেটাই অগ্রসর সত্য। আল-কুরআনে উল্লিখিত প্রাণীদের অন্যতম একটি হচ্ছে নাহল, মৌমাছি। নাহল নামে রয়েছে এক সূরা। আল কুরআনে রয়েছে তার চিত্র-চরিত্র ও মধুর মূলকথা। যারা মধু সংগ্রহ করে, তাদের প্রসঙ্গ এসেছে স্পষ্টভাবে।
মহান আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَاَوۡحٰی رَبُّکَ اِلَی النَّحۡلِ اَنِ اتَّخِذِیۡ مِنَ الۡجِبَالِ بُیُوۡتًا وَّمِنَ الشَّجَرِ وَمِمَّا یَعۡرِشُوۡنَ ۙ
অর্থ : আপনার পালনকর্তা মধু-মক্ষিকাকে আদেশ দিলেন- পর্বতগাত্রে, বৃক্ষ এবং উঁচু চালে গৃহ তৈরি করো।
এখানে মধুকরের জন্য গৃহ ও মৌচাক নির্মাণের কাজ নির্দেশ করা হচ্ছে। কিন্তু সন্তান জন্ম দেবার কথা এখানে নেই। কার্ল ভন প্রমাণ করেন মধুকরদের মধ্যে যে সব নারী মৌমাছি বন্ধ্যা, ঘর বানানোর কাজটি তারাই করে। আল-কুরআনে দেখা যায় গৃহনির্মাণের প্রশ্নে তাদেরকেই সম্বোধন করা হচ্ছে। গৃহ বানানোর আদেশ যদি পুরুষ মৌমাছিকে করা হতো, তাহলে আরবী ব্যাকরণের ভিত্তিতে বলা হতো ‘ইত্তাখিয’। কিন্তু আল-কুরআনে বলা হয় ‘ইত্তাখিযি’। যা নারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এর মানে পরিষ্কার। এ আয়াতে যে মৌমাছির প্রতি গৃহ নির্মাণের আদেশ দেয়া হচ্ছে, সে অবশ্যই স্ত্রী মৌমাছি। যদি এ আদেশ পুরুষ মৌমাছিকে দেওয়া হতো, তাহলে ‘ইত্তাখিযি’র বদলে বলা হতো ‘ইত্তাখিজ’। এমনটি হলে ব্যাকরণগত সমস্যা যেমন থাকত, তেমনি বৈজ্ঞানিক সত্যতাও তাকে সমর্থন করত না।
অনুরূপভাবে সূরা নাহলের ৬৯ নাম্বার আয়াতে মহান আল্লাহর ঘোষণা-
ثُمَّ کُلِیۡ مِنۡ کُلِّ الثَّمَرٰتِ فَاسۡلُکِیۡ سُبُلَ رَبِّکِ ذُلُلًا ؕ یَخۡرُجُ مِنۡۢ بُطُوۡنِہَا شَرَابٌ مُّخۡتَلِفٌ اَلۡوَانُہٗ فِیۡہِ شِفَآءٌ لِّلنَّاسِ ؕ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیَۃً لِّقَوۡمٍ یَّتَفَکَّرُوۡنَ
অর্থ : এরপর সর্বপ্রকার ফল থেকে ভক্ষণ করো এবং আপন পালনকর্তার সহজ পথে চলমান হও। তার পেট থেকে বিভিন্ন রঙে পানীয় নির্গত হয়। তাতে মানুষের জন্যে রয়েছে রোগের প্রতিকার। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শন রয়েছে।
এই আয়াতে ভক্ষণ করো (কুলী), চলমান হও (উসলুকী), তার পেট থেকে (বুতূনিহা) এ স্ত্রী-বাচক শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। যা প্রমাণ করছে এসব কাজ পুরুষ মৌমাছির নয়। এই আয়াতে মধুকে আখ্যা দেয়া সুপেয় পানীয় হিসেবে, যার রং বিচিত্র এবং যাতে মানুষের জন্য রয়েছে আরোগ্য। মধুর এই সব বৈশিষ্ট্য পরবর্তীতে বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে নানাভাবে। আধুনিক বৈজ্ঞানিক অভিমত হলো খাদ্য ও ঋতুর বিভিন্নতার কারণে মধুর রঙ নানারকম হয়ে থাকে। এ কারণেই কোনো বিশেষ অঞ্চলে কোনো বিশেষ ফল-ফুলের প্রাচুর্য থাকলে সেই এলাকার মধুতে তার প্রভাব ও স্বাদ অবশ্যই পরিলক্ষিত হয়। মধু সাধারণত তরল আকারে থাকে। তাই একে পানীয় (আল-কুরআনের ভাষায়- শারাব) বলা হয়।
মহানবী সা.-এর খাদ্যব্যবস্থায় মধুর গুরুত্ব রয়েছে বিশেষভাবে। মিষ্টি ও ঘন তরল পদার্থ মধু। তা তৈরি হয় মৌমাছি ও অন্যান্য পতঙ্গ ফুলের নির্যাস থেকে। মধু সুপেয় এবং উচ্চ ঔষধিগুণ সম্পন্ন একটি ভেষজ তরল। সে একই সাথে ওষুধ এবং খাদ্য উভয়ই। খাদ্য হিসেবে সে বলকারক এবং রসনার জন্য আনন্দ ও তৃপ্তিদায়ক। আবার রোগ-ব্যাধির জন্য ফলদায়ক ব্যবস্থাপত্র।
বিভিন্ন হাদীসের বর্ণনার মাধ্যমে জানা যায়, রাসূল সা. মধু ব্যবহারে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে হাদীসের এক বর্ণনায় এসেছে : আবদুলাহ্ ইবনু মাসঊদ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সা. বলেছেন, ‘তোমরা কুরআন ও মধু দিয়ে ব্যাধি নিরাময়ের ব্যবস্থা করবে।’ [ইবনু মাজাহ : ৩৪৫২]
রাসূল সা.-এর কাছে এক সাহাবী এসে তাঁর ভাইয়ের পেটের অসুখের কথা বললে রাসূল সা. তাঁকে মধু পান করানোর পরামর্শ দেন এবং এতে সে সুস্থ হয়ে ওঠে। [বুখারী শরীফ : ৫৩৬০]
মধুর মধ্যে রয়েছে অনেক রোগের প্রতিষেধক। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তাতে মানুষের জন্য রোগের প্রতিকার রয়েছে। [সূরা নাহল : ৬৯]
আর যেকোনো রোগীকে মধু পান করানো হলে সে সুস্থ হয়ে ওঠে। [বাইহাকী, আস-সুনানুস সুগরা : ৩৯৫৮]
মধুকরকে বলা যায় স্রষ্টার ভ্রাম্যমাণ মেশিন। সর্বপ্রকার ফল-ফুল থেকে বলকারক রস ও পবিত্র নির্যাস বের করে সে। তাকে সঞ্চিত রাখে সুরক্ষিত গৃহে। রোগ নিরাময়ের জন্য মধু কখনো এককভাবে, আবার কখনো ভেষজ দ্রব্যের সঙ্গে মিশ্রিত করে ব্যবহৃত হয়। এবং বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় সফলতার সঙ্গে পারঙ্গমতা প্রদর্শন করে। মধুর মধ্যে আছে শক্তিশালী জীবাণুনাশক ক্ষমতা। এ ক্ষমতার নাম ইনহিবিন। মধুর সঙ্গে কোনো তরল পদার্থ মিশ্রিত হলে তা তরলীভূত হয়ে পড়ে। গ্লুকোজ অক্সিডেজ নামের বিজারকের সঙ্গে মধুর বিক্রিয়া ঘটলে গ্লুকোনা ল্যাকটোন হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডে পরিণত হয়। এই বিক্রিয়ায় জীবাণু ধ্বংস হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া মধুতে ডুবিয়ে দিলে মারা যায়। মধু নিজে নষ্ট হয় না, অন্যকেও রক্ষা করে নষ্ট হওয়া থেকে। আধুনিক ফার্মাকোলজিক্যাল গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, মধু হৃদ-পেশির কার্যক্রম বাড়ায়, রক্তনালিকে করে প্রসারিত, এর মাধ্যমে রক্ত সঞ্চালনে সহায়তা করে এবং পেশির কার্যক্রমকে করে স্বাভাবিক, রোগ প্রতিরোধের জন্য যে স্বাভাবিকতা জরুরি। ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি স্নায়ু ও মস্তিষ্কের কলাকে সুদৃঢ় করে। নিউমোনিয়া, টাইফয়েড ও আমাশয়ের জন্য দায়ী জীবাণু ধ্বংস করতে পারে মধু।
ইউনানী চিকিৎসকেরা বিভিন্ন রোগে মধু ব্যবহার করেন। যেমন : পাকস্থলী ও অন্ত্রের রোগ, কোষ্ঠকাঠিন্য, অম্লাধিক্য, মুখের প্রদাহ, চোখের বিভিন্ন রোগ, স্নায়ুরোগ, রক্তপ্রবাহের অবরুদ্ধতাজনিত হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপ, ত্বকের বিভিন্ন রোগ ইত্যাদি।
নবীজির পছন্দের এই খাবার ও ঔষুধ ব্যবহৃত হতে পারে নানা মাত্রায়। প্রতিটি মাত্রায় রয়েছে বিচিত্র উপকারিতা। যেমন : চায়ের সাথে মধু ও আদার রস মিশিয়ে খেলে সর্দি ও শ্লেষ্মা রেগের উপশম হয় (১ চামচ মধু + ১ চামচ আদার রস)।
দুই চা চামচের সমপরিমাণ মধু ও বাসকপাতার রস মিশিয়ে খেলে সর্দি ও কাশি সেরে যায়। তুলসী পাতার এক চা চামচ রস ও সমপরিমাণ মধু মিশিয়ে খেলে অল্প সময়ের মধ্যেই কাশি দূর হয়।
সৈন্ধব লবণ, আমলকী, পিপুল, মরিচ ইত্যাদির সঙ্গে সমপরিমাণ মধু মিশিয়ে এক চা চামচ করে খেলে কফ ও স্বরভাঙ্গা ভালো হয়। খাঁটি মধুর সঙ্গে হরীতকী ও বচচূর্ণ মিশিয়ে লেহন করলে (চেটে খেলে) শ্বাসকষ্টের আশু উপকার পাওয়া যায়।
২ চা চামচ মধু ১ গ্লাস গরম দুধের সঙ্গে সকালে ও সন্ধ্যায় খেলে সর্দিকাশি দূর হয়। হালকা গরম জলসহ মধু মিশিয়ে গড়গড়া করলে গায়কদের গলার স্বর বৃদ্ধি পায়। অনেকের মতে, এটা টনিকের মতো কাজ করে।
এক চা চামচ আদার রস এবং এক চা চামচ মধু একসঙ্গে মিশিয়ে সকালে ও সন্ধেবেলা খেলে সর্দি সেরে যায় ও খিদে বৃদ্ধিপায়। কচি বেল ও আমগাছের কচি চামড়া (বাকল) বাটার সঙ্গে গুড় ও মধু মিশিয়ে খেলে আমাশয় ভালো হয়ে যায়। আমাশয়ের ঔষধ হিসেবে মধুকে কুল বা বড়ই গাছের ছাল চূর্ণের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যায়। এ পদ্ধতিও ফলপ্রসূ। আবার ৫০০ গ্রাম আতপ চাল ভেজে গুঁড়া করে এর সঙ্গে ১২৫ গ্রাম ঘি, ২৫০ গ্রাম খাটি মধু, ১২৫ গ্রাম চিনি এবং ২০টি সবরি কলা ভালোভাবে মিশিয়ে (চটকে) জ্বাল দিয়ে খাবার উপযোগী করে ৩/৪ দিন নিয়মিত খেলে যে কোনো ধরনের আমাশয়ের নিরাময়ের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
প্রতিদিন হাতের তালুতে অল্প পরিমাণ মধু নিয়ে চেটে খেলে হৃদরোগ কমতে থাকে।
শরীরের কোনো ক্ষতে মধুর প্রলেপ লাগালে অনেক সময় মলমের চেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যায়।
পানিতে অল্প মধু মিশিয়ে খেলে পাকস্থলীর ক্ষত সারে।
মৌরির পানিতে মধু মিশিয়ে পান করলে দূষিত বায়ু পেট থেকে বেরিয়ে যায়।
যারা খুব মোটা হচ্ছেন তাদের মেদ কমানোর জন্য মধুর সঙ্গে সামান্য পানি মিশিয়ে খেলে সুফল পাওয়া যায়।
দুর্বল শিশুকে এক ফোঁটা মধু দুধের সঙ্গে মিশিয়ে দিনে দুবার খাওয়ালে তার স্বাস্থ্য ভালো হয় ও শক্তি লাভ করে। এক কাপ দুধে এক চা চামচ মধু মিশিয়ে রোজ সকালে খেলে শক্তি বৃদ্ধি পায়।
মধুর সঙ্গে গুড়ের রস মিশিয়ে খেলে বমি বন্ধ হয়ে যায়। চক্ষু রোগে এক ফোঁটা করে মধু দিনে ৩ বার চোখে লাগাতে হবে।
শিশুদেও দৈহিক গড়ন, রুচি বৃদ্ধি, ওজন বৃদ্ধি ও পেট ভালো রাখার জন্য প্রত্যহ এক চা চামচ মধু গরম দুধ ও গরম পানির সঙ্গে নাশতা ও রাতের খাবারের সঙ্গে দিতে হবে।
যে বাচ্চারা স্কুলে পড়ে, সকালে যদি দুধের সাথে একটু মধু দেওয়া যায় বা তাদের খাবারে মধু যুক্ত করা যায়, তাহলে বাচ্চারা অনেকক্ষণ অ্যানার্জেটিক থাকে এবং তাদের যে পড়াশোনার মনোযোগ, সেটা কিন্তু অনেক বৃদ্ধি পায়।
যক্ষ্মা রোগে বাসক পাতার রস এক চা-চামচ পরিমাণ এক চা-চামচ মধু এবং এক চা-চামচ আদার রস মিশিয়ে কিছু দিন খেলে উপকার পাওয়া যাবে।
যক্ষ্মা রোগীদের জন্য আধাতোলা পেঁয়াজের রস, ২৫০ গ্রাম ঘি এবং ২৫০ গ্রাম মধু মিশিয়ে একটা পাত্রে রেখে দিয়ে প্রতিদিন সকাল-বিকাল খাওয়া এবং প্রতি রাতে শোয়ার সময় চিনি দিয়ে অল্প পরিমাণ গরম দুধ খাওয়া উপকারী।
ডায়রিয়া হলে খয়ের ও দারুচিনির গুঁড়া সমপরিমাণ সামান্য মধুর সঙ্গে মিশিয়ে দিনে ৩/৪ বার খেলে দ্রুত উপকার পাওয়া যায়।
পিপুল ও গোল মরিচের শুকনো গুঁড়ার সঙ্গে মধু মিশিয়ে কিছু দিন নিয়মিত খেলে পুরাতন উদরাময় ভালো হয়ে যায়। মধুতে থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান, যা আমাদের শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে উন্নত করতে সহায়তা করে। ফলে মধুর ব্যবহারে শরীর অনেক রোগ থেকে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সক্ষম হয়। ক্যানসারের রোগীদের অ্যানার্জির দরকার হয়, তখন মধু ব্যবহার করা হয়। গর্ভবতী মায়েদের অনেক বেশি ক্যালোরি দরকার, বাচ্চাদের অনেক ইনস্ট্যান্ট অ্যানার্জি দরকার হয়, তাঁদের জন্য মধুর জুড়ি নেই।
যাঁরা ওজন কমাতে চান, তাঁরা যদি প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস কুসুম গরম পানির সাথে এক চামচ মধু ও লেবু মিশিয়ে খান, তাহলে মেটাবলিজম বা বিপাক বাড়বে এবং ওজন কমবে।
তবে মধুর এই যে ব্যবহার, তা কিন্তু নির্বিচার নয়। এ ক্ষেত্রেও রয়েছে নানা রকম বিধিনিষেধ। যদিও মধুর অনেক গুণ ও স্বাস্থ্যকর, তবে এক বছরের নিচের বাচ্চাকে কখনোই মধু খাওয়াতে নেই। ডায়াবেটিক রোগীদের ব্লাডের ইনসুলিনের অ্যাকটিভিটিস কম এবং মধু খাওয়ার পর সেই সুগারকে কন্ট্রোল করতে পারবে না। ফলে তাদের জন্য অনেক সময় মধু খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ। তবে চিনির বিকল্প হিসেবে সীমিত পরিসরে মধু ব্যবহার করতে পারেন তারাও।
এই যে উপকারিতার ফিরিস্তি, এ কোনো অবৈজ্ঞানিক বক্তব্য নয়। এ হচ্ছে গ্রিক চিকিৎসা বিজ্ঞানী হিপোক্রেট, গ্যালন থেকে নিয়ে ইবনে সিনা, হাকিম আনতাকি, ইবনুল বায়তারসহ বহু মনীষীর গবেষণার উপসংহার। আধুনিক বিজ্ঞান এর সত্যতাকে সমর্থন করেছে নানাভাবে। জার্মান হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ড. ই কচ বলেছেন, ‘উপযুক্ত ঘাস খেয়ে ঘোড়া যেমন তেজী হয় তেমনি নিয়মিত সকালে এক চা-চামচ করে খাঁটি মধু খেলে হৃদপিণ্ড শক্তিশালী হয়। মধুর উপকারের জন্য এটাই তো যথেষ্ট যে, তার মাধ্যমে আয়ু বৃদ্ধি হয়!