তাফসীরে সূরা মুতাফফিফীন [আয়াত-ক্রম : ৭ থেকে ১৭]

 

کَلَّاۤ اِنَّ کِتٰبَ الۡفُجَّارِ لَفِیۡ سِجِّیۡنٍ ـ  وَ مَاۤ اَدۡرٰىکَ مَا سِجِّیۡنٌ ـ کِتٰبٌ مَّرۡقُوۡمٌ ـ وَیۡلٌ یَّوۡمَئِذٍ لِّلۡمُکَذِّبِیۡنَ ـ  الَّذِیۡنَ یُکَذِّبُوۡنَ بِیَوۡمِ الدِّیۡنِ ـ وَ مَا یُکَذِّبُ بِهٖۤ اِلَّا کُلُّ مُعۡتَدٍ اَثِیۡمٍ ـ  اِذَا تُتۡلٰی عَلَیۡهِ اٰیٰتُنَا قَالَ اَسَاطِیۡرُ الۡاَوَّلِیۡنَ ـ کَلَّا بَلۡ رَانَ عَلٰی قُلُوۡبِهِمۡ مَّا کَانُوۡا یَکۡسِبُوۡنَ ـ کَلَّاۤ اِنَّهُمۡ عَنۡ رَّبِّهِمۡ یَوۡمَئِذٍ لَّمَحۡجُوۡبُوۡنَ ـ ثُمَّ اِنَّهُمۡ لَصَالُوا الۡجَحِیۡمِ ـ ثُمَّ یُقَالُ هٰذَا الَّذِیۡ کُنۡتُمۡ بِهٖ تُکَذِّبُوۡنَ

তরজমা : ৭. কখনো নয়, নিশ্চয় পাপিষ্ঠদের আমলনামা রয়েছে সিজ্জীনে। ৮. তুমি কি জানো সিজ্জীন কী? ৯. চিহ্নিত আমলানামা। ১০. যেদিন মিথ্যুকদের ধ্বংস নিশ্চিত। ১১. যারা বিচার দিবসকে অস্বীকার করে। ১২. কেবল সীমালঙ্ঘনকারী পাপিষ্ঠই সেদিনকে অস্বীকার করে। ১৩. যখন তার সামনে আমার আয়াত পাঠ করা হয় তখন সে বলে, এটা তো পূর্ববর্তীদের রূপকথা। ১৪. কখনো নয়! বরং তাদের কৃতকর্মই তাদের অন্তরে জং ধরিয়েছে। ১৫. কখনো নয়! নিশ্চয় সেদিন তারা তাদের রবের দর্শন থেকে বিমুখ থাকবে। ১৬. অতঃপর নিশ্চয় তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে। ১৭. অতঃপর বলা হবে এটাই সে বস্তু, যা তোমরা অস্বীকার করতে।

তাফসীর

পূর্ববর্তী আয়াতের সাথে সম্পর্ক

সূরাটির প্রথম ছয় আয়াত, যার তাফসীর আমরা গত সংখ্যায় করে এসেছি, এগুলো পাপিষ্ঠদের পাপের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। আর উল্লিখিত ৭ থেকে ১৭ নম্বর আয়াতে পাপিষ্ঠদের পাপের শাস্তি ও শেষ ঠিকানা কোথায় কীভাবে হবে, তার বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে।

আমলনামা বলতে কী উদ্দেশ্য

সাকালাইন তথা সুস্থ মস্তিষ্ক প্রাপ্তবয়স্ক মানব-দানবের নিত্যদিনের কৃতকর্মই হচ্ছে আমলনামা। বিশুদ্ধ বর্ণনামতে শিশু বা বালকদের সৎকর্মগুলো তাদের আমলনামার অন্তর্ভুক্ত। সাধারণত পাগল, শিশু, ঘুমন্ত ও বেহুঁশ ব্যক্তিদের কৃতকর্ম তাদের আমলের অন্তভুর্ক্ত নয়। প্রকাশ্যে গোপনে লোকালয়ে বা মরুভূমিতে আমরা যে কাজ করি, হোক তা অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মাধ্যমে বা কথাবার্তায়, অন্তরে কিংবা ইশারায়-সবই লেখক ফেরেশতাদ্বয়ের নথিতে সংরক্ষণ করা হয়। সম্মানিত এ দুই ফেরেশতা রাতদিনের ২৪ ঘণ্টাই মানবদানবের কৃতকর্ম লেখার কাজে নিমগ্ন থাকেন। তবে স্ত্রীসহবাস, ইস্তিঞ্জা ও গোসলের সময় আড়ালে থাকেন। আড়ালে থাকলেও বান্দার এ সময়কার কৃতকর্মও কিন্তু তাঁরা আল্লাহ তাআলার বিশেষ ব্যবস্থাপনায় তাঁরা সঠিকভাবে নথিভুক্ত করতে পারেন।

কয়েকটি বর্ণনামতে, সম্মানিত এ দুই ফেরেশতা ছাড়াও বান্দার বিশেষ কিছু আমল নথিভুক্ত করার জন্য বিশেষ কিছু ফেরেশতা নিযুক্ত রয়েছেন।

আমলনামা চিহ্নিত থাকবে

আমাদের আমলনামা যে লেখা হচ্ছে, তা অনর্থক কোনো কাজ নয়। বরং এগুলো সংরক্ষিতও রাখা হচ্ছে। শেষ বিচারের দিন হাশরের মাঠে এই আমলানামাগুলো আমাদের প্রত্যেকের সামনে দলীল হিসাবে উপস্থাপন করা হবে। নেককারদের আমলনামা থাকবে ডান হাতে, আর বদকারদের আমলনামা থাকবে বাম হাতে। আমলনামার নথি উপস্থাপন করা মাত্রই বোঝা যাবে বান্দা সফল না বিফল।

তবে আমলনামার বিস্তারিত ফাইলপত্র খোলার প্রয়োজন পড়বে না, বরং তাতে এমন কিছু চিহ্ন থাকবে যার দ্বারা বুঝে ফেলা যাবে বান্দা সফল নাকি বিফল। ব্যাপারটা আধুনিক পৃথিবীর বিভিন্ন কোম্পানির পণ্যের মতো, পণ্য দেখলেই বোঝা যায় যে, এটা কোন মানের পণ্য এবং এর মূল্যমান কী। আমলনামার ফাইলপত্রও অনুরূপ, চিহ্নের সাহায্যে বুঝে ফেলা যাবে বান্দা জান্নাতী নাকি জাহান্নামী।

লেখক দুই ফেরেশতার অবস্থান কোথায়

আল্লামা আলুসী রহ. বলেন, বিশুদ্ধ মতানুযায়ী লেখক দুই ফেরেশতার একজন হলেন বান্দার সৎকর্মের লেখক, অপরজন বদ আমলের। প্রথমজন বান্দার ডান কাঁধে থাকেন, দ্বিতীয়জন থাকেন বাম কাঁধে। ডান কাঁধের জন হলেন উভয়ের সরদার বা আমীর।

একজন মানুষের সাথে কয়জন ফেরেশতা থাকেন

ইমাম মাহদাওরী রহ. ফয়সাল গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, আমলনামা-লেখক ফেরেশতা ছাড়াও মানুষের হেফাজত ও নিরাপত্তার জন্য আরও অনেক ফেরেশতা নিযুক্ত রয়েছেন।

হযরত উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণিত, তিনি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘একজন মানুষের সাথে কয়জন ফেরেশতা থাকে?’ আল্লাহর রাসূল উত্তেও জানালেন, ২০ জন।

আরেক বর্ণনামতে প্রত্যেক মাতৃজাত সন্তানের সাথে মাতৃগর্ভে থাকাকাল থেকে পৃথিবীতে আগমন ও মৃত্যু পর্যন্ত ৪০০ ফেরেশতা নিযুক্ত থাকেন।

মানুষ মারা যাওয়ার পর ফেরেশতারা কী করেন

বান্দা যদি নেককার অবস্থায় মারা যায় তাহলে তার সাথের দায়িত্বশীল ফেরেশতারা তার কবরের পাশে দাঁড়িয়ে সুবহানাল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার-এই তাসবীহ পড়তে থাকেন। আর যদি বদকার হয়, তাহলে সাথের ফেরেশতারা তার কবরের পাশে দাঁড়িয়ে অভিশাপ দিতে থাকেন। আর তা চলতে থাকবে কেয়ামত পর্যন্ত।

যুক্তির আলোকে লেখক দুই ফেরেশতার অবস্থান

শরয়ী বিধিবিধানকে যুক্তির আলোকে জানা ও বোঝার চেষ্টা করা দোষণীয় নয়। তবে যুক্তি বা বাস্তবতার সাথে অমিল হলে সেটাকে অবিশ্বাস বা অস্বীকার করা কুফরী। বিষয়টি বর্তমান সময়ের ভয়ংকর ফিতনা। মূলত নাস্তিক্যবাদী মতবাদই এ ফিতনার মূল উৎস। এখানে কেউ প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারে যে, আমাদের সাথে যে লেখক দুই ফেরেশতা আছেন, তার যৌক্তিক দলীল কী? কারণ, ফেরেশতা যদি আমাদের সাথে থেকে থাকেন, তাহলে দুটি রূপের যেকোনো একটি তাঁরা অবশ্যই ধারণ করবেন। হয়তো বাতাস বা আগুনের মতো সূক্ষ্ম আকৃতির হবেন, অথবা আমাদের মতো স্বাভাবিক আকৃতির হবেন। যদি প্রথমটি হয়, তাহলে বাতাস, আগুন বা এ ধরনের সূক্ষ্ম আকৃতি বিশিষ্ট বস্তু প্রচণ্ড নড়াচড়া বা প্রবলবেগে প্রবাহিত হবার কারণে যেমন ছিটকে পড়া সম্ভব ঠিক তেমনিভাবে মানুষের সাথে থাকা ফেরেশতারাও প্রচণ্ড নড়াচড়ার কারণে বা প্রবলবেগে প্রবাহিত হবার কারণে ছিটকে পড়ার কথা। আর যদি আমাদের মতো স্বাভাবিক আকৃতিতে থেকে থাকেন তাহলে তো আমাদেও দৃষ্টিগোচর হবার কথা! কিন্তু তেমনটা আমরা দেখছি না!

উত্থাপিত এ প্রশ্নের জবাব বুঝতে হলে আগে দুটি মূলনীতি ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে।

১. জীবন ধারণের জন্য বিশেষ কোনো আকৃতির দরকার নেই, বরং আকৃতিহীন বস্তুর মধ্যেও আল্লাহ তাআলা জীবন ধারণের শক্তি দান করতে পারেন।

২. ইন্দ্রিয় শক্তি সুস্থ-সবল হওয়া সত্ত্বেও সকল সূক্ষ্ম আকৃতিকে দৃষ্টিগোচর হওয়া আবশ্যক নয়।

এবার প্রথম মূলনীতির আলোকে আমরা বলতে পারি, পরিবর্তনশীল আকৃতি নিয়ে ফেরেশতারা আমাদের সাথে রয়েছেন। এতে তাঁদের জীবন ধারণে কোনো অসুবিধা হয় না। বরং তারা মানুষের শিরাউপশিরায় বিচরণ করতে পারেন, তাই তাঁদেও ছিটকে পড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।

আর দ্বিতীয় মূলনীতির আলোকে এর উত্তর হলো, তাঁরা এমন সূক্ষ্ম আকৃতি বিশিষ্ট যা আমাদের চর্মচোখে দেখা সম্ভব নয়। যেমন : অণুবিক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে এমন সূক্ষ্ম বস্তু দেখা যায় যা চর্মচোখে দেখা সম্ভব না।

সিজ্জীন কী? তার অবস্থান কোথায়?

আরবী সিজ্জীন শব্দটির মূল উৎসশব্দ সিজনুন। শাব্দিকভাবে ‘স্থায়ী’, ‘কঠিন’, ‘জাহান্নামের স্থান’, ‘বিশেষ কাফের ও পাপিষ্ঠদের আমলনামা সংরক্ষণের স্থান’ ইত্যাদি অর্থে ব্যবহৃত হয়।

তবে সিজ্জীন দ্বারা কী উদ্দেশ্য এ বিষয়ে তাফসীরকারদের নানা মত রয়েছে। যথা-

১. আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, সিজ্জীন হচ্ছে জাহান্নামের গর্তবিশেষ।

২. ইমাম কালবী ও মুজাহিদ রহ. বলেন, সপ্তম যমীনের নিচে অবস্থিত বিশাল ও কঠিন পাথর।

৩. ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, সিজ্জীন হচ্ছে সপ্তম যমীনের তলদেশ।

৪. কেউ বলেন, সপ্তম যমীন, সপ্তম যমীনের তলদেশ, জাহান্নামের গর্ত-সিজ্জীন দ্বারা যা-ই উদ্দেশ্য হোক না কেন, এর অবস্থান ভূমণ্ডলের নিম্নদেশে। ইবলীস ও তার বংশধর সেখানে অবস্থান করে।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, সিজ্জীনের অবস্থান হলো সাত যমীনের তলদেশে।

আবার আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণিত এক হাদীসে দেখা যায়, রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলছেন, সিজ্জীন হলো জাহান্নামের একটি উপত্যকা।

সিজ্জীনের বাস্তবতা ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ

আমরা যে সবুজ-শ্যামল সুন্দর পৃথিবীতে বসবাস করছি, এটা আল্লাহ তাআলার অপরিসীম দয়া ও মমতার প্রমাণ। কারণ, পৃথিবী নামক গ্রহের ভেতরের অবস্থাটা কল্পনা করলে উপরিভাগে বসবাস অসম্ভব মনে হয়। আশ্চর্যেও বিষয় হচ্ছে মানুষের তৈরি মহাকাশযান পৃথিবী ছাড়িয়ে চাঁদ বা মঙ্গলগ্রহে এমনকি সৌরজগতের বাইরে ছুটে যাওয়ার শক্তি থাকলেও মানুষ কিন্তু ভূপৃষ্ঠের গভীরে বেশি দূর যেতে পারেনি। এ পর্যন্ত মানুষ ভূপৃষ্ঠ থেকে খনির সন্ধানে মাত্র আট কিলোমিটার পর্যন্ত কূপ খনন করতে পেরেছে। আর কয়লার সন্ধানে শ্রমিক ও প্রকৌশলীরা সর্বোচ্চ ৭০০ ফুট যেতে পেরেছে। ভূপৃষ্ঠ থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত পৃথিবীর সর্বমোট ব্যাসার্ধ হচ্ছে ৬ হাজার ৪ শত ৩৬ কিলোমিটার বা ৪ হাজার মাইল। পৃথিবীর ভেতরটা সাংঘাতিক গরম। মাটির তলায় প্রতি ৬০ ফুটে ১ ডিগ্রি করে তাপমাত্রা বাড়ে। সেই হিসেবে ৪০ নিচে যেখানে পৃথিবীর খোলসটা শেষ হয়েছে, সেখানকার তাপমাত্রা ৩৫০০ ডিগ্রিরও বেশি। আর পৃথিবীর একেবারে কেন্দ্রে ৪০০০ মাইল নিচের তাপ এর চেয়ে ১০০ গুণ বেশি। তাই সেখানে কোনোদিন যাওয়া তো সম্ভব নয়ই, এমনকি কোনো যন্ত্র পাঠানোও সম্ভব নয়।

পৃথিবী নামক গ্রহের গঠনপ্রকৃতি অনেকটা আধাসিদ্ধ ডিমের মতো। যদি একটা ছুরি দিয়ে ডিমটা সমান ভাগে ভাগ করা হয় তাহলে ডিমের উপরের খোসাটা আমরা তুলনা করতে পারি ভূ-ত্বকের সাথে। এর পুরত্ব হচ্ছে ৬৪ কিলোমিটার। ভূ-ত্বকের নিচের স্তরটি হচ্ছে গুরুমণ্ডল। এর পুরত্ব ২৯০০ কিলোমিটার। গুরুমণ্ডলটি দুটি স্তেও বিন্যস্ত। উচ্চ গুরুমণ্ডল আর নিম্ন গুরুমণ্ডল। প্রথমটি ৬০০ কিলোমিটার আর দ্বিতীয়টি ১৯৩৫ কিলোমিটার পুরত্ব।

ভূ-পৃষ্ঠের সবচেয়ে নিচের অংশের নাম কেন্দ্রমণ্ডল। এর পুরত্ব ৩৪৫৪ কিলোমিটার। এর দুটি স্তর। যথা : ১. আন্তকেন্দ্র মণ্ডল (১৩৮০ কিলোমিটার পুরত্ব), ২. বহিঃকেন্দ্র মণ্ডল (২১৯০ কিলোমিটার পুরত্ব)।

পৃথিবীর ভেতরে শুধু মাটি নয়, বরং পাথর বালি কয়লা গ্যাস আগুনসহ অনেক খনিজ-সম্পদ রয়েছে। আমাদের অদেখা পৃথিবীর উপরের দিকটা যেমন ঠাণ্ডা, ভেতরের অংশটা কিন্তু একটি আগুনের গোলা। তাছাড়া পৃথিবীর ভেতরে যে তাপমাত্রা তা কিন্তু কমছে না, বরং কেবল বেড়েই চলেছে। কারণ, পৃথিবীর অভ্যন্তরে যে তেজষ্ক্রিয়া পড়ে রয়েছে এগুলো ক্রমাগত নতুন নতুন তাপের সৃষ্টি করছে। অন্য দিকে মধ্যাকর্ষণ শক্তির ফলে পৃথিবীর বাইরের অংশটাকে ভেতরের দিকে টানছে। আর পৃথিবী ঘুরছে বলে আরেকটা শক্তি যা ভেতরটাকে বাইরে ছিটকে ফেলার চেষ্টা করছে। দুই বিপরীত শক্তির কারণে পৃথিবী অস্থির হয়ে আছে। পৃথিবী থেকে আপনি যতটুকু উপরের দিকে যাবেন প্রশস্ততা ততই বাড়বে। কিন্তু নিচের দিকে তার বিপরীত। অর্থাৎ খুবই সংকীর্ণ। মোটকথা, আলোচনার সারসংক্ষেপ হলো, পৃথিবীর ভেতরটা সংকীর্ণ উত্তপ্ত ও কঠিন পাথুরে স্থান। আর এ দিকে পবিত্র কুরআন ও হাদীসের আলোকে আমরা সিজ্জীনের যে ব্যাখ্যা জানতে পারলাম সেটা হলো-কঠিন উত্তপ্ত সংকীর্ণ ও স্থায়ী নিবাস। অথবা প্রচণ্ড শিলা বা পাথুরে স্থান যা ভূপৃষ্ঠের নিচে অবস্থিত।

পৃথিবীর ভেতরের অদেখা বস্তুগুলোর ব্যাপারে বৈজ্ঞানিকদের সম্ভাব্য গবেষণার ফলাফল যদি সঠিক হয় তাহলে সিজ্জীনের বাস্তবতা কিছুটা হলেও আমরা যুক্তির নিরিখে অনুমান করতে পারব।

জং বা মরিচা দ্বারা কী উদ্দেশ্য? কেন কীভাবে মরিচা ধরে?

কোনো বস্তুকে যথেচ্ছা ব্যবহার বা সঠিক পরিচর্যার অভাবে জং বা মরিচা ধীরে ধীরে বস্তুটিকে অকেজো করে দেয়। যেমন লোহা পানিতে থাকলে মরিচা ধরে। মরিচা পরিস্কারের ব্যবস্থা না নিলে তা আস্তে আস্তে ক্ষয়ে নষ্ট হয়ে যায়।

মানুষের কলব বা অন্তর একটি গোশতের টুকরা। দুনিয়ার ভালোবাসা, পাপের আধিক্য, গাফলত ও উদাসীনতা অন্তরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে নেক কাজের পরিবর্তে অসৎ কাজের দিকে ধাবিত করে। তওবার পথ না ধরলে ধ্বংস অনিবার্য হয়ে পড়ে। আর তওবার পথ ধরলে তা কৃতপাপের প্রতিষেধক হিসাবে কাজ করে।

সুতরাং অন্তরের জং বা মরিচা পরিস্কারের একমাত্র পথ হচ্ছে পাপ বর্জন করা, কৃত পাপের উপর তাওবা করা এবং বেশি বেশি ইস্তেগফার ও লা ইলাহা ইল্লাহর যিকির করা।

সত্য ও সুন্দরের প্রহরায় ৪৮ বছর

প্রতিষ্ঠাতা : শায়খ আল্লামা লুৎফুর রহমান বর্ণভী রহ.
নিবন্ধন নম্বর : চ-৪৭৩/০৫

সত্য ও সুন্দরের প্রহরায় ৪৮ বছর

প্রতিষ্ঠাতা : শায়খ আল্লামা লুৎফুর রহমান বর্ণভী রহ.
নিবন্ধন নম্বর : চ-৪৭৩/০৫

কপিরাইট © ২০২৪ | মাসিক হেফাজতে ইসলাম, আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলামের মুখপত্র। Developed By Shabaka IT