তাফসীরে সূরা ফাজর [আয়াত-ক্রম : ০১-৯]

 

وَ الۡفَجۡرِ

(১) শপথ প্রভাতের।

وَ لَیَالٍ عَشۡرٍ

(২) এবং শপথ (জিলহজের) দশ রাত্রির।

وَّ الشَّفۡعِ وَ الۡوَتۡرِ

(৩) শপথ জোড়া ও বেজোড়ের (জিলহজের দশম ও নবম তারিখের)।

وَ الَّیۡلِ  اِذَا یَسۡرِ

(৪) আর শপথ রাত্রির, যখন তা গত হতে থাকে।

ہَلۡ فِیۡ ذٰلِکَ قَسَمٌ  لِّذِیۡ حِجۡرٍ

(৫) নিশ্চয় এতে বুদ্ধিমান লোকদের জন্যে রয়েছে নির্ভরযোগ্য শপথ।

اَلَمۡ  تَرَ  کَیۡفَ فَعَلَ  رَبُّکَ بِعَادٍ

(৬) (হে রাসূল!) আপনার কি জানা নেই যে, আপনার প্রতিপালক আদ জাতির সাথে কি ব্যবহার করেছিলেন?

اِرَمَ ذَاتِ الۡعِمَادِ

(৭) ইরাম জাতির সাথে, যাদেও দৈহিক কাঠামো খুঁটির ন্যায় (দীর্ঘ, সুদৃঢ়)।

الَّتِیۡ  لَمۡ یُخۡلَقۡ مِثۡلُہَا فِی الۡبِلَادِ

(৮) যাদের মতো কোনো মানুষ (শক্তি ও দৈহিক গঠনে) কোনো শহরেই সৃষ্টি হয় নাই।

وَ ثَمُوۡدَ  الَّذِیۡنَ جَابُوا الصَّخۡرَ بِالۡوَادِ

(৯) আর সামুদ জাতির প্রতি, যারা উপত্যকায় পাথর কেটে গৃহ নির্মাণ করেছিল।

সূরার নামকরণ

الْفَجْرِ ফজর বলতে প্রভাতের সময়কে বুঝানো হয়েছে। সূরার প্রথম আয়াতে উল্লিখিত الْفَجْرِ শব্দ থেকেই সূরার নামকরণ করা হয়েছে।

সংক্ষিপ্ত আলোচনা

আলোচ্য সূরাটি আমপারার অন্যান্য সূরার মতোই এমন এক হৃদয়স্পর্শী সূরা যা মানুষকে ঈমান, তাকওয়া, জাগ্রত হওয়া ও প্রকৃতির সবকিছু সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করার আহ্বান জানায়। শুধু তাই নয় এ সূরার মধ্যে অন্যান্য সূরার তুলনায় বিশেষ আরও একটি দিক রয়েছে। এতে অত্যন্ত মনমাতানো ছন্দের মাধ্যমে বিভিন্ন ঘটনাবলি তুলে ধরে আলোচ্য বিষয়টাকে এমনভাবে হৃদয়গ্রাহী করে তোলা হয়েছে যে, এ সূরাটি পাঠকের হৃদয়কে সৎকাজের প্রতি দারুণভাবে উৎসাহিত করে।

এখানে এমন কিছু দৃশ্যের অবতারণা করা হয়েছে যেগুলোতে একাধারে প্রাকৃতিক দৃশ্যের ছবি এবং মহাশূন্যলোকের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ রহস্যের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। যদিও বাহ্যিক দৃষ্টিতে সেগুলো পরস্পর বিচ্ছিন্ন মনে হয় কিন্তু সেগুলোর মধ্যে যে একই সুরের মূর্ছনা বর্তমান তা সূরাটি একটু খেয়াল করে পড়লেই বুঝা যায়।

সূরাটিতে আদ ও সামুদ জাতি এবং ফেরাউন ও তার দলবলের ধ্বংসের কথা বর্ণনা করে অবাধ্য নাফরমানদের উদ্দেশ্যে এই মর্মে সতর্কবাণী উচ্চারণ করা হয়েছে যে, এ পৃথিবীতে যে কেউ অন্যায়-অনাচার, জুলুম-অত্যাচারে লিপ্ত হবে, যে কোনো সময় তাদের প্রতি আযাব আপতিত হতে পারে, কেননা আল্লাহ পাক তাঁর সৃষ্টির প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখেন। এ সূরায় আখেরাতের অবস্থা, কেয়ামতের কঠিন দিনের বিষয় এবং নেককার মুমিনদের শুভ-পরিণতির কথা বর্ণিত হয়েছে।

তাফসীর

‘শপথ প্রথম প্রভাতের এবং শপথ দশটি রাতের, আরো শপথ জোড় (সৃষ্টি) ও বে-জোড় (আল্লাহ পাক)-এর। আবার রাতেরও শপথ যা সহজে অতিবাহিত হয়। নিশ্চয় এতে বুদ্ধিমান লোকদের জন্যে রয়েছে নির্ভরযোগ্য শপথ।’

আল্লাহর শপথ বাক্য : এ সূরার শুরুতে প্রাকৃতিক বিভিন্ন দৃশ্য এবং সৃষ্টিলোকের সেই সব জিনিসের কসম খাওয়া হয়েছে, যা অত্যন্ত সূক্ষ্ম, মনোরম এবং যার মধ্যে প্রচুর প্রাণ প্রবাহের অস্তিত্ব রয়েছে বলে আমরা অনুভব করি। ‘কসম প্রভাতবেলার’। এ এমন একটি মুহূর্ত যখন জীবন যেন শ্বাস ছাড়ে অত্যন্ত কোমল, মধুর এবং ধীর হাসিমাখা গতিতে। এ এমন এক সময় যখন তনুমন সজীব হয়ে যায় এবং আশেপাশের সব কিছু যেন এক মুগ্ধ আবেশে আলিঙ্গন করে। দেহমন পুলকিত হয়ে উঠে যেন অদেখা, অজানা কোনো বন্ধুর মধুর স্পর্শে। যেন মৃদু মন্থর গতিতে সে বলতে থাকে, ওঠো বন্ধু ওঠো, আর কত ঘুমাবে, এবার উঠে পড়ো।

এই মধুমাখা ডাকে সাড়া দিয়ে জেগে উঠে ধীরে ধীরে প্রকৃতির সবকিছু এবং শ্রদ্ধা জানায় পরম পুলকে মালিকের দরবারে।

‘আর দশটি রাতের কসম’- কুরআনে পাকে এতটুকু কথা বলেই এ প্রসঙ্গে ইতি টানা হয়েছে। এর ব্যাখ্যায় বিভিন্ন ব্যক্তি বিভিন্ন অভিমত ব্যক্ত করেছেন। হযরত ইবনে আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, এখানকার ‘দশ রজনী’ অর্থ জিলহজ মাসের প্রথম দশ রাত্রি। কাতাদা, মুজাহিদ, জুহাক, সুদ্দী এবং কালবীও এরকম বলেছেন। হযরত আবু হুরায়রা রাযিআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, জিলহজ মাসের প্রথম দশদিনের ইবাদত অপেক্ষা অন্য কোনো দিনের ইবাদত আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয় নয়। এ সময়ের এক দিনের রোযা সারা বছরের রোযার সমান। এক রাতের ইবাদত শবে কদরের ইবাদতের সমান।

আবু ওয়ারাক সূত্রে জুহাক বর্ণনা করেছেন, এখানকার ‘দশ রজনী’ অর্থ রমযান মাসের প্রথম দশ রাত্রি। আবু জুবিয়ানের বর্ণনায় এসেছে রমযান মাসের শেষ দশদিনের কথা।

হযরত আবু হুরায়রা রাযিআল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসূল সা. বলেছেন, রমযানের রোযার পর আল্লাহ পাকের নিকট সর্বোৎকৃষ্ট রোযা হচ্ছে মহররমের রোযা। আর ফরয নামাযের পরে সর্বোত্তম নামায তাহাজ্জুদ।

এরপর বলা হয়েছে- ‘শপথ জোড় ও বেজোড়ের’- অর্থাৎ শপথ (সৃষ্টির সকল) জোড় জিনিসের আর বেজোড় সেই মহান সত্ত্বার যাঁর দ্বিতীয় বলতে আর কেউ নেই। এখানে وَّ الشَّفۡعِ অর্থ সৃষ্টি, যা হয় যুগ্ম। যেমন এক আয়াতে বলা হয়েছে ‘আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি জোড়ায় জোড়ায়। আর বেজোড় হলেন আল্লাহপাক স্বয়ং। এ রকম অর্থ করেছেন হযরত আবু সাঈদ, আতিয়া এবং আউফি। মুজাহিদ ও মাসরুকও এরকম বলেছেন। তাঁরা আরো বলেছেন, সকল সৃষ্টি যুগল। তাদের একজনের বিপরীতে আছে আর একজন। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা এরূপ বৈপরিত্য-বিবর্জিত। তিনি বৈপরিত্যবিবর্জিত চির একক। তিনি ব্যতীত অন্য সকল কিছুই বিভিন্নভাবে বৈপরিত্যধারী, যৌগ। যেমন বিশ্বাস-অবিশ্বাস, সুপথ-বিপথ, সৌভাগ্য-দুর্ভাগ্য, রাত-দিন, আকাশ-পৃথিবী, জল-স্থল, চন্দ্র-সূর্য, জিন-মানব, নারী-পুরুষ। আল্লাহপাক সকল প্রকার বিপরীতার্থকতা থেকে সতত পবিত্র।

পরের আয়াতে বলা হয়েছে- ‘আর শপথ রাত্রির, যখন তা গত হতে থাকে’- এখানে یَسۡرِ-এর অর্থ রাত্রিতে চলা। অর্থাৎ রাত্রির শপথ, যখন সে চলতে থাকে। এই পাঁচটি শপথ উল্লেখ করার পর আল্লাহ তাআলা গাফিল মানুষকে চিন্তা-ভাবনা করার জন্য বলেছেন-

ہَلۡ فِیۡ ذٰلِکَ قَسَمٌ  لِّذِیۡ حِجۡرٍ

এখানে حِجۡرٍ শব্দটির শাব্দিক অর্থ বাধা দেওয়া। মানুষের বিবেক মানুষকে মন্দ ও ক্ষতিকর বিষয়াদি থেকে বাধাদান করে। তাই حِجۡرٍ-এর অর্থ বিবেকও হয়ে থাকে। এখানে তাই বোঝানো হয়েছে। আয়াতের অর্থ এই যে, বিবেকবানের জন্য এসব শপথও যথেষ্ট নয় কী? এই প্রশ্ন প্রকৃত পক্ষে মানুষকে গাফলতি থেকে জাগ্রত করার একটি কৌশল। অর্থাৎ এ কসমগুলো কোন সাধারণ ব্যাপার নয়, নির্ভরযোগ্য এবং অতীব গুরুত্বপূর্ণ। আর জ্ঞানী ব্যক্তিরা বুঝতে পারেন যে, বক্তব্যকে জোরদার করার জন্য এগুলো তে বিরাট মূল্য আর মর্যাদা নিহিত রয়েছে।

ইতিহাসে অহংকারী জাতির পরিণতি

পরবর্তী আয়াতে আল্লাহ তায়ালা অতীত ইতিহাসের পাতা থেকে কয়েকটি চরম অহংকারী ও অত্যাচারী জাতির ভয়াবহ পরিণতির কথা বর্ণনা করেছেন।প্রথমে বলা হয়েছে- ‘আলাম তারা’। এর অর্থ তুমি কি দেখোনি? প্রশ্নটিতে প্রকাশ পেয়েছে না-সূচকতার অস্বীকৃতি, যার পরিণতি দাঁড়ায় হ্যাঁ-সূচক। অর্থাৎ তোমরা তো দেখেছো। কথাটিতে প্রকাশ পেয়েছে বিস্ময়ও। এরপর বলা হয়েছে- ‘তোমার প্রতিপালক কী করেছিলেন আদ বংশের ইরাম গোত্রের প্রতি।’ এ কথার অর্থ- হে আমার রাসুল! মক্কার অধিবাসীরা তো জানেই, কী নিদারুণ পরিণতি ভোগ করতে হয়েছিল আদ জাতিকে, যাদের পিতৃপুরুষ ছিল ইরাম। প্রচণ্ড দৈহিক শক্তিমত্তার অধিকারী ছিল তারা। ছিল সত্যপ্রত্যাখ্যানকারী ও গর্বোন্মত্ত। মহা তুফানের আঘাতে আল্লাহ ধ্বংস করে দিয়েছিলেন তাদেরকে। তাহলে মক্কার মুশরিকেরা কীভাবে নিশ্চিন্ত হতে পারে যে, সত্যদ্রোহিতা করা সত্তে্বও তারা আত্মরক্ষা করতে পারবে?

ইরাম গোত্রের পরিচয়

ইরাম আদ জাতির পূর্বপুরুষদের একজন। অথবা ইরাম আদের একটি শাখাগোত্র। আদ জাতির শাসন ক্ষমতা ছিল এই ইরাম গোত্রের হাতে। প্রকৃত কথা হচ্ছে, ইরাম ছিল আদ ইবনে শাম ইবনে নুহের পুত্র। তার নামানুসারেই তার গোত্রের নাম হয়েছে ইরাম। মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক বলেছেন, ইরাম ছিল আদের পিতামহ। তাই বলা যায়, আদ ইরাম গোত্রের একটি শাখা। কালবী বলেছেন, আদ, সুয়াদে ইরাকের অধিবাসী। আরব উপদ্বীপের জনসাধারণের ঊর্ধ্বতন বংশই ইরাম বংশ। এ জন্যই বলা হয় আদে ইরাম, ছামুদে ইরাম। আল্লাহ্পাক আদ ও ছামুদ জাতিকে গজবে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। অবশিষ্ট ছিলো কেবল সুয়াদে ইরাক ও আরব উপদ্বীপের অধিবাসীবৃন্দ। এ সকল বর্ণনা দৃষ্টে প্রতীয়মান হয় যে, ইরাম ছিল একটি বৃহৎ জাতিগোষ্ঠী।

আদ জাতির পরিণতি

ইতিহাসের শক্তিশালী গোত্রগুলোর মধ্যে একটি ছিল আদ গোত্র। আদ সম্প্রদায়ের লোকেরা ছিল দীর্ঘদেহী ও অত্যন্ত বলিষ্ঠ। তারা নির্মাণ করতো বিরাট বিরাট অট্টালিকা। এ কারণে তারা গর্বও করতো খুব। হযরত ইবনে আব্বাস বলেছেন, তাদেও দৈর্ঘ্য ছিল খুঁটির মতো। মুকাতিল বলেছেন, তাদের দৈর্ঘ্য ছিল রাসূল সা.-এর হাতের মাপে বারো হাত। কেউ কেউ বলেছেন, তারা ছিল আরো লম্বা। তাদেরকে স্তম্ভবিশিষ্ট বলা হতো এ কারণে যে, বসন্তকালে তারা তাদের তাঁবু, তাঁবুর খুঁটি ও অন্যান্য আবশ্যকীয় সামগ্রী বেঁধে নিয়ে পশুপালসহ বেরিয়ে পড়ত চারণভূমির দিকে। সেখানকার তৃণ-গুল্ম যখন শেষ হয়ে যেত, তখন তারা ফিরে আসতো স্বগৃহে। তারা চাষাবাদ করতো, বাগান করতো। তাদের বসতবাটি ছিল কুরা উপত্যকায়। কেউ কেউ বলেছেন, তারা নির্মাণ করতো সুউচ্চ প্রাসাদ। বড় বড় এবং মজবুত স্তম্ভের উপরে প্রতিষ্ঠিত ছিল প্রাসাদগুলো। তাই তাদেরকে বলা হতো ‘স্তম্ভবিশিষ্ট’।

আদ জাতি ছিল মূর্তিপূজারী। মূর্তিপূজাসহ তারা আরো নানা অপকর্মে লিপ্ত ছিল। হযরত হুদ আলাইহিস সালাম তাদের মূর্তিপূজা ছেড়ে আল্লাহর একত্ববাদের অনুসরণ করতে এবং সব ধরনের অত্যাচার-উৎপীড়ন বর্জন করে ন্যায় ও সুবিচারের পথ ধরতে বলেছিলেন। কিন্তু তারা নিজেদের অহংকার ও ধনৈশ্বর্যের মোহে নিমজ্জিত হয়ে তাঁর (হুদ আলাইহিস সালাম) আদেশ অমান্য করে। আদ জাতি তাদের নবী হযরত হুদ আলাইহিস সালামের কথা অমান্য করে পাপাচারে লিপ্ত থাকার কারণে আল্লাহ তাআলা আদ জাতিকে ধ্বংস করে দেন। তাদের প্রতি প্রথম আযাব ছিল অনাবৃষ্টি। তিন বছর তাদের এলাকায় বৃষ্টি বন্ধ ছিল। এতে তাদের সব ফসল জ্বলে-পুড়ে ছারখার হয়ে যায়। ফলে দেশে অভাব দেখা দেয়। এরপরও তারা শিরক ও মূর্তিপূজা ত্যাগ করেনি। তারপর আট দিন সাত রাত তাদের উপর দিয়ে বয়ে যায় প্রবল ঘূর্ণিঝড়। এতে তাদের বাড়ি-ঘর, বাগ-বাগিচা, জীবজন্তু সব ধ্বংস হয়ে যায়। তারা নিজেরাও শূন্যে উড়তে থাকে। রাতে তারা মরে উপুড় হয়ে মাটিতে পড়ে থাকে।

সামুদ জাতির পরিণতি

পরের আয়াতে বলা হয়েছে- ‘এবং সামুদের প্রতি? যারা উপত্যকায় পাথর কেটে গৃহ নির্মাণ করেছিল।’

আদ জাতির পর পৃথিবীতে শিল্প ও সংস্কৃতিতে অপ্রতিদ্বন্দী ছিল সামুদ জাতি। সমৃদ্ধশালী এই জাতি জীবনযাপনে যতটানা উন্নত ছিল, মানবতা ও নৈতিকতার প্রশ্নে ছিল এর চেয়ে বহুগুণে জঘন্য।

একদিকে উন্মুক্ত প্রান্তরে পাথর খোদাই করে করে প্রাসাদের পর প্রাসাদ তৈরি করছিল, অন্যদিকে সমাজে কুফর, শিরক ও পৌত্তলিকতার প্রসার ঘটিয়েছিল। এমন সময়ই হযরত সালেহ আলাইহিস সালাম তাদের প্রতি প্রেরিত হলেন সত্যের দাওয়াত নিয়ে। তাঁর দাওয়াতে কেবল নিম্ন শ্রেণির লোকেরাই সাড়া দিলো। সালেহ আলাইহিস সালাম সারা জীবন তাদের হেদায়েতের পথে আনার চেষ্টা করেছেন। এতে অল্প কিছু সঙ্গী ছাড়া গোটা জাতি তার অবাধ্যই থেকে যায়। তারা দাম্ভিকতা নিয়ে বলেছিল, আমরা কি আমাদেরই একজনের অনুসরণ করব? তবে তো আমরা বিপথগামী ও বিকারগ্রস্তরূপে গণ্য হব। একপর্যায়ে তারা দাবি করে, আপনি যদি সত্যি নবী হয়ে থাকেন, তাহলে আমাদের ‘কাতেবা’ নামের পাথরময় পাহাড়ের ভেতর থেকে একটি ১০ মাসের গর্ভবতী, সবল ও স্বাস্থ্যবতী মাদি উট বের করে দেখান। এটি দেখাতে পারলে আমরা আপনার উপর ঈমান আনব।

সালেহ আলাইহিস সালাম আল্লাহর কাছে দুআ করেন। আল্লাহর কুদরতে পাহাড় থেকে একটি অদ্ভুত রকমের মাদি উট বের হয়। তা দেখে কিছু লোক ঈমান আনে। কিন্তু তাদের সর্দাররা ঈমান আনেনি, বরং তারা সে মাদি উটকে হত্যা করে ফেলে। এতে সালেহ আলাইহিস সালাম তার জাতির উপর আল্লাহর আজাব নেমে আসার ঘোষণা দেন। তিনি তাদের সতর্ক করে দেন যে তিন দিন পরই আল্লাহর আজাব তোমাদের ধ্বংস করে দেবে। নির্ধারিত সময়ে আসমানি আযাব ও গযব এসে অবিশ্বাসীদের চিরতরে নিশ্চিহ্ন করে দেয়। যেন তারা কখনোই সেখানে বসবাস করেনি। উদ্ধত সামুদ জাতির প্রতি হযরত সালেহ আলাইহিস সালামের হুঁশিয়ারি সত্যি বাস্তবায়িত হয়েছে। হঠাৎ একদিন প্রচণ্ড শব্দে ভূমিকম্প তাদের নাস্তানাবুদ করে ফেলে। বজ্রপাতের ভয়ংকর শব্দে মানুষ ভীতসন্ত্রস্ত ও আতঙ্কিত হয়ে যায়। অবশেষে তাদের অপমৃত্যু ঘটে।

সত্য ও সুন্দরের প্রহরায় ৪৮ বছর

প্রতিষ্ঠাতা : শায়খ আল্লামা লুৎফুর রহমান বর্ণভী রহ.
নিবন্ধন নম্বর : চ-৪৭৩/০৫

সত্য ও সুন্দরের প্রহরায় ৪৮ বছর

প্রতিষ্ঠাতা : শায়খ আল্লামা লুৎফুর রহমান বর্ণভী রহ.
নিবন্ধন নম্বর : চ-৪৭৩/০৫

কপিরাইট © ২০২৪ | মাসিক হেফাজতে ইসলাম, আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলামের মুখপত্র। Developed By Shabaka IT