তাফসীরে সূরা ফাজর [আয়াতক্রম : ১০-২০]

 

وَ  فِرۡعَوۡنَ ذِی الۡاَوۡتَادِ

(১০) আর ঐ পেরেকের অধিকারী ফেরাউনের সাথে।

الَّذِیۡنَ طَغَوۡا فِی الۡبِلَادِ

(১১) এরা সকলেই দেশের মধ্যে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল।

فَاَکۡثَرُوۡا فِیۡہَا الۡفَسَادَ

(১২) এবং তাতে অনেক ফিতনা-ফাসাদ সৃষ্টি করে রেখেছিল।

فَصَبَّ عَلَیۡہِمۡ رَبُّکَ سَوۡطَ عَذَابٍ

(১৩) তাই (হে রাসুল!) আপনার প্রতিপালক তাদের প্রতি আযাবের চাবুক বর্ষণ করেন।

اِنَّ رَبَّکَ لَبِالۡمِرۡصَادِ

(১৪) নিশ্চয় আপনার প্রতিপালক (নাফরমানদের শাস্তি বিধানের জন্যে) তাক করে আছেন।

فَاَمَّا الۡاِنۡسَانُ  اِذَا مَا ابۡتَلٰىہُ  رَبُّہٗ فَاَکۡرَمَہٗ  وَ نَعَّمَہٗ فَیَقُوۡلُ رَبِّیۡۤ اَکۡرَمَنِ

(১৫) (হে রাসুল!) আপনার প্রতিপালক যখন মানুষকে সম্মান ও অনুগ্রহ দান করেন, এমন অবস্থায় সে বলে, আমার প্রতিপালক আমাকে সম্মানিত করেছেন।

وَ اَمَّاۤ  اِذَا مَا ابۡتَلٰىہُ  فَقَدَرَ عَلَیۡہِ رِزۡقَہٗ فَیَقُوۡلُ رَبِّیۡۤ  اَہَانَنِ

(১৬) আর যখন তাকে তিনি পরীক্ষা করেন, তার জীবিকা সংকীর্ণ করে দেন, তখন মানুষ বলে আমার প্রতিপালক আমাকে অপমানিত করেছেন।

کَلَّا بَلۡ  لَّا تُکۡرِمُوۡنَ  الۡیَتِیۡمَ

(১৭) না, কখনও না; বরং তোমরা নিজেরাই এতীমদের সম্মান দিতে না।

وَ لَا تَحٰٓضُّوۡنَ عَلٰی طَعَامِ الۡمِسۡکِیۡنِ

(১৮) এবং তোমরা অভাবগ্রস্ত লোকদেরকে খাবার প্রদানে একে অন্যকে উৎসাহিত করতে না।

وَ تَاۡکُلُوۡنَ  التُّرَاثَ اَکۡلًا لَّمًّا

(১৯) এবং তোমরা উত্তরাধিকারীদের প্রাপ্য সম্পদ সম্পূর্ণরূপে গ্রাস করে নিতে।

وَّ  تُحِبُّوۡنَ الۡمَالَ حُبًّا جَمًّا

(২০) আর তোমরা ধন-সম্পদকে অত্যন্ত বেশি ভালবাসতে।

তাফসীর

আদ ও সামুদ জাতির পর আল্লাহ পাক আরেক অবাধ্য নাফরমান ফেরাউনের উল্লেখ করেছেন, তাকেও এই একই কারণে ধ্বংস করা হয়েছিল। পবিত্র কুরআনের বলা হয়েছে- ‘এবং কীলকওয়ালা ফেরাউনের প্রতি’। এখানে (الۡاَوۡتَادِ) শব্দটি (وتد)-এর বহুবচন। এর অর্থ কীলক বা পেরেক। ফেরাউনের জন্য ‘যুল আওতাদ’ (কীলকধারী) শব্দ এর আগে সূরা সোয়াদের ১২ নম্বর আয়াতেও ব্যবহার করা হয়েছে। ফেরাউনকে কীলকওয়ালা বলার বিভিন্ন কারণ তাফসীরবিদগণ বর্ণনা করেছেন। কারও মতে এর দ্বারা যুলুম নিপীড়ন বোঝানোই উদ্দেশ্য। কারণ, ফেরাউন যার উপর ক্রোধান্বিত হতো, তার হাত-পা চারটি পেরেকে বেঁধে অথবা চার হাত-পায়ে পেরেক মেরে রৌদে শুইয়ে রাখত বা কোনো গাছের সাথে পেরেক মেরে রাখত। অথবা পেরেক মেরে দেহের উপর সাপ-বিচ্ছু ছেড়ে দিত। কোনো কোনো তাফসীরবিদ বলেন, এখানে তার সেনাবাহিনীকেই কীলকের সাথে তুলনা করা হয়েছে এবং সেই অর্থে কীলকধারী মানে সেনাবাহিনীর অধিকারী। কারণ তাদেরই বদৌলতে তার রাজত্ব এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত ছিল যেমন কীলকের সাহায্যে তাবু মজবুতভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকে। তাছাড়া এর অর্থ সেনাদলের সংখ্যাধিক্যও হতে পারে। এ ক্ষেত্রে এর অর্থ হবে, তার সেনাদল যেখানে গিয়ে তাঁবু গাঁড়ত সেখানেই চারদিকে শুধু তাঁবুর কীলকই পোঁতা দেখা যেত। কারও কারও মতে, এর দ্বারা ফেরাউনের প্রাসাদ-অট্টালিকা বোঝানো হয়েছে। এসবের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। ফেরাউন মূলত এসবেরই অধিকারী ছিল।

বিশ্বাসীদের প্রতি ফেরআউনের অত্যাচারের বিবরণ

হযরত ইবনে আব্বাস রাযি. বলেছেন, ফেরআউনের অর্থসচিব হিযকীলের স্ত্রী ছিলেন বিশ্বাসবতী। দীর্ঘ দশ বছর ধরে তিনি তাঁর ঈমানকে গোপন রেখেছিলেন। ফেরাউনের কন্যার পরিচর্যাকারিণী ছিলেন তিনি। একদিন তিনি চিরুণী দিয়ে তার চুল আঁচড়িয়ে দেওয়ার সময় হঠাৎ করে হাত থেকে চিরুণীটি মাটিতে পড়ে গেল। চিরুণীটি উঠিয়ে নেওয়ার সময় তিনি আপন মনে উচ্চারণ করলেন, আল্লাহকে যারা অস্বীকার করে, তারা নিপাত যাক। ফেরাউনদুহিতা বলল, আমার পিতা ব্যতীত আর কোনো উপাস্য আছে নাকি? অর্থসচিবের স্ত্রী বললেন, নিশ্চয়। তোমার আমার, তোমার পিতার এবং আকাশ-পৃথিবীর অধিপতি যিনি, সেই আল্লাহই সকলের একমাত্র উপাস্য। ফেরাউনদুহিতা এ কথা সহ্য করতে পারল না। সঙ্গে সঙ্গে তার পিতার কাছে গিয়ে বলল, শুনেছেন, অর্থ সচিবের স্ত্রী তো আপনাকে প্রতিপালক বলে মানে না। বলে আকাশ-পৃথিবীসহ সকলের সৃষ্টিকর্তা নাকি একজন। আর তিনিই সকলের একমাত্র প্রতিপালক ও উপাস্য। ফেরাউন তৎক্ষণাৎ তলব করল অর্থসচিবের পত্নীকে। বলল, তুমি কি তাহলে মুসার অনুগামিনী? ভালো চাও তো এক্ষুণি পরিত্যাগ করো তার ধর্মবিশ্বাসকে। অর্থসচিবের স্ত্রী বললেন, না, তা হয় না। আপনি যদি আমাকে ৭০ বছর ধরে শাস্তি দান করতে থাকেন, তবুও আমি সত্য ধর্মবিশ্বাস থেকে এতটুকুও টলব না। সে তখন দুটি শিশুকন্যার বড়টিকে এনে তার মায়ের সামনেই জবাই করল। তারপর বলল, দ্যাখো হতভাগিনী! এখনো সময় আছে, মুসার ধর্ম পরিত্যাগ করো। নয়তো তোমার অপর কন্যাকেও আমি হত্যা করব। তিনি বললেন, সারা পৃথিবীর সকল মানুষকেও যদি তুমি আমার সামনে বধ করো, তবুও আমি আমার পরম আরাধ্যকে পরিত্যাগ করতে পারব না। ফেরাউন তাঁর ছোট মেয়েকে হত্যা করার হুকুম দিলো। জল্লাদ তাকে ধরে এনে মাটিতে শুইয়ে দিলো। শিশুকন্যাটি ছিল দুগ্ধপোষ্য। তবু তার কণ্ঠে কথা ফুটলো। মানুষের ইতিহাসে মাত্র চার জন দুগ্ধপোষ্য শিশু কথা বলেছিলো। তার মধ্যে ওই শিশুটিও একজন। সে বললো, মা! ধৈর্য ধারণ করো। বিচলিত হয়ো না। আল্লাহ তোমার বাসস্থান নির্ধারণ করে রেখেছেন জান্নাতে। সেখানে তোমার জন্য রয়েছে অভূতপূর্ব মর্যাদা। তার কথা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জল্লাদ তাকে কেটে টুকরো টুকরো করে ফেললো।

ফেরাউন এবার হিযকীলকে ধরে আনার জন্য লোক পাঠালো। লোকেরা ফিরে এসে জবাব দিলো, হিযকীল বাড়িতে নেই। সে নাকি এক পাহাড়ে গিয়ে উপাসনা শুরু করেছে। ফেরাউন দু জন শাস্ত্রীকে নির্দেশ দিলো, যেখানে পাও, তাকে ধরে আনো। শাস্ত্রীরা খুঁজতে খুঁজতে হিযকীলকে এক পাহাড়ের উপরে পেয়ে গেল। সবিস্ময়ে দেখলো, তিনটি সারিতে সারিবদ্ধ হয়ে বনের হিংস্র পশুরা তাঁকে ঘিরে রেখেছে। আর তিনি নিশ্চিন্ত মনে সেখানে নামায আদায় করছেন। তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে হিযকীল বললেন, হে শাস্ত্রীদ্বয়! ফিরে যাও। অগ্রসর হতে চেষ্টা করলে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে। তারা ফিরে গেলো। হিযকীল প্রার্থনা জানালেন, পরওয়ারদিগার আমার! বহু বছর ধরে আমি তো আমার ঈমানকে গোপন করে রাখলাম। এখন কেউ যদি তা প্রকাশ করে দেয়, তবে তুমি তাকে এ পৃথিবীতেই শাস্তি দিয়ো। আর পরবর্তী পৃথিবীতে তাকে নিক্ষেপ কোরো নরকে। শাস্ত্রী দুজন ফেরাউনের দরবার অভিমুখে যাত্রা করল। পথিমধ্যে তাদের একজনের ঘটল অন্তর্বিপ্লব। সে আল্লাহ ও নবী মুসার উপরে ঈমান আনলো। অপর জন রাজদরবারে গিয়ে বলে দিলো সব কথা। বলল, হিযকীল এখন আপনার নির্দেশবহির্ভূত। তিনি এখন এক আল্লাহর পূজারী। ফেরাউন তার সঙ্গীকে জিজ্ঞেস করল, এ কি সত্য কথা বলেছে? ঈমানদার শাস্ত্রী বলল, সে যা বলছে, আমি তো সে সম্পর্কে কিছু জানি না। ফেরাউন ক্রোধান্বিত হলো। নির্দেশ দিলো, সংবাদদাতা শাস্ত্রীকে প্রহার করে শূলে চড়ানো হোক।

ফেরাউনের স্ত্রী পরম রূপবতী মাননীয়া আসিয়াও ছিলেন বিশ্বাসবতী। অর্থ সচিবের স্ত্রীর দুর্গতি দেখে তিনি প্রমাদ গুণলেন। ভাবলেন, এই সত্যপ্রত্যাখ্যানকারীটির সঙ্গে আর কি ঘর করা সম্ভব! পথপ্রাপ্তির কোনো সম্ভাবনাই তো এর নেই। তিনি চরম বুঝাপড়ার জন্য প্রস্তুত হলেন। ফেরাউন এলো। পাশে বসল তার। অকস্মাৎ মহাপুণ্যবতী আসিয়া বলে উঠলেন, তুমি এত জঘন্য! নিষ্ঠুর! নিষ্পাপ শিশুকন্যা দুটিকে হত্যা করলে কোন আক্কেলে? ফেরাউন চমকে উঠল। বলল, তোমারও শেষে মতিভ্রম ঘটল নাকি? আসিয়া বললেন, মতিভ্রম আমার ঘটেনি, ঘটেছে তোমার। কেন তুমি এখনো এই মহাসত্যটি স্বীকার করতে চাইছ না যে, তোমার আমার সকলের একমাত্র প্রতিপালক আল্লাহ। তাঁর কোনো অংশীদার নেই। ফেরাউন ক্রোধান্ধ হলো। ডেকে পাঠাল আসিয়ার পিতা-মাতাকে। বলল, দ্যাখো, তোমাদের মেয়ের দশা হয়েছে হিযকীলের স্ত্রীর মতো। আসিয়া তেজোদীপ্ত কণ্ঠে বলে উঠলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, নিখিল বিশ্বের একমাত্র সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তা হচ্ছেন আল্লাহ। তিনি সমকক্ষতা ও অংশীবাদিতা থেকে সতত পবিত্র। পিতা বলল, আসিয়া! তুমি কি আমালেকা সম্প্রদায়ের সবচেয়ে অভিজাত রমণী নও? তোমার স্বামী কি আমালেকাদের প্রতিপালক নয়? আসিয়া জবাব দিলেন, আমি এরকম অপবিশ্বাস থেকে আল্লাহর আশ্রয় যাচনা করি। পিতা! তুমি যা বলছ, তা যদি সত্যি হয়, তবে ফেরাউনকে বলো, আমাকে যেন সে এমন একটি মুকুট বানিয়ে দেয়, যার সামনে থাকবে সূর্য এবং পেছনে থাকবে চন্দ্র। আর পুরো মুকুটটি শোভিত থাকবে নক্ষত্রপুঞ্জ দিয়ে। ফেরাউন বিষয়টিকে আর দীর্ঘায়িত করতে দিলো না। বিদায় করে দিলো আসিয়ার পিতা-মাতাকে। তারপর তাঁকে মাটিতে শুইয়ে দিয়ে কীলক দিয়ে তাঁর হাত-পা টান করে পেরেক বিদ্ধ করে দিল মাটিতে। আল্লাহপাক তাঁর দৃষ্টির সামনের অন্তরাল অপসারিত করলেন। আসিয়া তাকিয়ে রইলেন জান্নাতের অসংখ্য সুখপোকরণসমূহের দিকে। ফেরাউনের দেওয়া শাস্তির কষ্ট তাঁর অনুভূতিকে স্পর্শই করতে পারল না। তিনি জান্নাতের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রার্থনা জানালেন, হে আমার পরম দয়াময় প্রেমময় প্রভুপালয়িতা। পৃথিবী আমি আর চাই না। চাই কেবল তোমার সকাশ। দয়া করে আমার অভিলাষ পূর্ণ করো। আল্লাহপাক আসিয়ার প্রার্থনা গ্রহণ করলেন। আসিয়ার পবিত্র প্রাণপাখিকে স্থান দিলেন তাঁর একান্ত সন্নিধানে।

আল্লাহর আযাব

অহংকারী বিদ্রোহী শ্রেণি যখন গোটা পৃথিবীকে অশান্তিতে ভরে দিলো, তখন পৃথিবীকে ফাসাদমুক্ত করে মানবতার মুক্তি ঘোষণার প্রয়োজন অবধারিত হয়ে গেল। ঐ সমাজব্যধির একমাত্র চিকিৎসাই ছিল তখন পূর্ণ সমাজসংস্কার বা চরম ধোলাই। আর এ কারণেই ‘তোমার রব তাদের উপর বর্ষণ করলেন আযাবের চাবুক, কারণ তোমার রব, তো সব কিছু পর্যবেক্ষণ করতে থাকেন।’

অর্থাৎ তোমার রব তাদের সকল অবস্থার পর্যবেক্ষক হিসেবে সদা সচেতন এবং তাদের সকল কাজই তার নথিতে রেকর্ডভুক্ত বা রেজিস্ট্রি হয়ে যাচ্ছে। সুতরাং তা হারিয়ে বা মুছে যাওয়ার মতো নয়, যেমন করে সরকারি রেজিস্ট্রি অফিসে কিছু রেজিস্ট্রি হয়ে গেলে তা আর হারিয়ে যায় না। মানব সরকারের কোনো রেকর্ড খোয়া গেলেও যেতে পারে, কিন্তু আল্লাহ তাআলার যে দফতর, তার থেকে কোনো কিছু খোয়া যাওয়া সম্ভব নয়, তার কর্মচারীরা অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে দিনরাত পূর্ণ আনুগত্য সহকারে কাজ করে যাচ্ছেন। তারপর যখন অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা চরমভাবে ছড়িয়ে পড়ল, তখন তাদের উপর আযাবের চাবুক বর্ষণও বেড়ে গেল। চাবুক শব্দটি ব্যবহার করে আযাবের সর্বগ্রাসী চরিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। যেহেতু তরল পদার্থ কারো উপর দিয়ে ঢেলে দিলে যেমন তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সবকিছুতে সে পদার্থ ছড়িয়ে পড়ে, তেমনি ছিল ওই চরম অহংকারী জাতির উপর আসা আযাব। যেহেতু তারা সারাদেশে চরম অশান্তি সৃষ্টি করে রেখেছিল। এ কারণে ওই দুর্নীতিবাজ শাসক ও তাদের তল্পীবাহকদের ওপর ভীষণ যন্ত্রণাদায়ক আযাব নেমে এলো।

মুমিন ও অবাধ্যদের প্রতি আল্লাহ পাকের দৃষ্টি

আযাবপ্রাপ্তরা ছাড়া এক দল লোক মানসিক শান্তি লাভ করবে, তারা হচ্ছে মুমিন শ্রেণি। এরা সর্বকালে, সবদেশে বিদ্রোহীদের হাতে নিপীড়িত হয়। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহর বাণী, ‘নিশ্চয়ই তোমার রব ওঁৎ পেতে প্রত্যক্ষ করছেন সবাইকে।’ মুমিন ব্যক্তি বিশেষভাবে শান্তি লাভ করে। যেহেতু তোমার রব সেখানে এমনভাবে তার দেখাশোনা করছেন যে, তাঁর নযর থেকে কোনো কিছুই বাদ পড়ছে না, কোনো কিছু হারিয়েও যাচ্ছে না বা কোনো কিছু গোপনও থাকছে না। এর ফলে মুমিন ব্যক্তি শান্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে, কেননা সে সদা সর্বদা আল্লাহর রহমতের দৃষ্টিতে আছে। অন্যদিকে বিদ্রোহী, অন্যায়কারী ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের জন্য তিনি গোপন স্থানে থেকে তাদের পাকড়াও করার জন্য ওঁৎ পেতে আছেন।

সর্বাবস্থায় আল্লাহ পাকের কৃতজ্ঞতা অপরিহার্য

পরের (১৫ ও ১৬ নম্বর) আয়াতদ্বয়ের মর্মার্থ হচ্ছে- মানুষ সাধারণত অকৃতজ্ঞই হয়। যখন আল্লাহ তাদেরকে স্ত্রী-পুত্র-পরিজন সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য বিত্ত-বৈভব-খ্যাতি দান করে পরীক্ষায় নিপতিত করেন, তখন সে বলতে থাকে, দেখো, আমার কতো সম্মান। সবাই কি এরকম সম্মান লাভের যোগ্য? এভাবে সে কৃতিত্ব যাহির করে নিজের। আবার যখন আল্লাহ তাদেরকে অভাব-অনটনে-পরীক্ষায় নিপতিত করেন, তখন তারা তাঁর বিরুদ্ধে উত্থাপন করে অভিযোগ। বলে, দেখো, এতো লোক থাকতে আল্লাহ আমাকেই করলেন বিপদ কবলিত।

হযরত ইবনে আব্বাস থেকে বুখারী ও মুসলিম বর্ণনা করেছেন, রাসূল সা. বলেছেন, কেবল দু ধরনের লোকের প্রতি হিংসা সিদ্ধ। এক. ঐ ব্যক্তি, আল্লাহ যাকে কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন এবং সে সারাক্ষণ তা পাঠ করতে থাকে। দুই. ঐ ব্যক্তি যাকে আল্লাহ দান করছেন প্রতুল বিত্ত; আর সে তা অহরহ ব্যয় করতে থাকে আল্লাহর সন্তোষকামনায়। এই হাদীসের বক্তব্য দৃষ্টে এ কথাই প্রতীয়মান হয় যে, বিত্ত-সম্পদ হচ্ছে আল্লাহর দান। এর মাধ্যমে পরজগতেও প্রভূত কল্যাণের অধিকারী হওয়া যায়। এর জন্য যথাকৃতজ্ঞতা প্রকাশ অপরিহার্য।

এতীম ও অভাবগ্রস্তদের ব্যাপারে সতর্কতা

পরের আয়াতসমূহে (১৭ থেকে ২০) বলা হয়েছে- ‘না, কখনও না; বরং তোমরা নিজেরাই এতীমদের সম্মান দিতে না এবং তোমরা অভাবগ্রস্ত লোকদেরকে খাবার প্রদানে একে অন্যকে উৎসাহিত করতে না এবং তোমরা উত্তরাধিকারীদের প্রাপ্য সম্পদ সম্পূর্ণরূপে গ্রাস করে নিতে। আর তোমরা ধন-সম্পদকে অত্যন্ত বেশি ভালবাসতে।’

এখানে ‘کَلَّا’ অর্থ- না, কখনো নয়। অর্থাৎ অকৃতজ্ঞ ও ধৈর্যহীনেরা যেমন ভেবেছে, সেরকম কিছুতেই নয়। অকৃতজ্ঞতা ও অধৈর্য কখনো সফলতার পথ নয়। সফলতার অবলম্বন হচ্ছে কৃতজ্ঞতা ও সহিষ্ণুতা।

আল্লাহ তাআলা এখানে মূল যে কথাটি বলতে চেয়েছেন তা হচ্ছে, পরীক্ষায় ফেলার তাৎপর্য তোমরা বুঝো না, আর এই কারণেই তোমরা পরস্পরকে এতীমদের মর্যাদা দেয়ার ব্যাপারে এবং মিসকীনদেরকে খাওয়ানো সম্পর্কে উৎসাহ দেয়ার চেষ্টাটুকু পর্যন্ত করো না, বরং এর বিপরীত ওরা মীরাসী সূত্রে যে ধন-সম্পদ পায় তা নিকৃষ্ট লোভী ব্যক্তির ন্যায় মেরে খাও। মাল সম্পদকে তোমরা মাত্রাতিরিক্ত ভালবাসো। এ সময়ে কারো উপকার করা বা অভাবগ্রস্তদেরকে মানসম্মান ও খাদ্য খাবার দিয়ে মর্যাদা দেয়ার কথা তোমাদের অন্তরের মধ্যে কিছুতেই ঠাঁই পায়নি।

হযরত মাসআব ইবনে সা‘দ বর্ণনা করেছেন, আমার পিতা সা‘দ নিজেকে অন্যদের চেয়ে অধিক সম্মানিত জন বলে মনে করতেন। একদিন রাসূল সা. তাঁকে ডেকে বললেন, মনে রেখো, তোমাদের রিযিক দেওয়া হয় দরিদ্র জনসাধারণের ওসীলায়।

সত্য ও সুন্দরের প্রহরায় ৪৮ বছর

প্রতিষ্ঠাতা : শায়খ আল্লামা লুৎফুর রহমান বর্ণভী রহ.
নিবন্ধন নম্বর : চ-৪৭৩/০৫

সত্য ও সুন্দরের প্রহরায় ৪৮ বছর

প্রতিষ্ঠাতা : শায়খ আল্লামা লুৎফুর রহমান বর্ণভী রহ.
নিবন্ধন নম্বর : চ-৪৭৩/০৫

কপিরাইট © ২০২৪ | মাসিক হেফাজতে ইসলাম, আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলামের মুখপত্র। Developed By Shabaka IT