তাফসীরে সূরা ফাজর [আয়াতক্রম : ২১-৩০]

 

کَلَّاۤ اِذَا دُکَّتِ الۡاَرۡضُ دَکًّا دَکًّا

২১. কখনও এরূপ নয়, যে সময় যমীনকে ভেঙে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেওয়া হবে।

وَّ جَآءَ رَبُّکَ وَ الۡمَلَکُ صَفًّا صَفًّا

২২. এবং (হে রাসূল!) যখন আপনার প্রতিপালক হাশরের মাঠে আগমন করবেন এবং কাতারে কাতারে ফেরেশতাগণও হাজির হবে।

وَ جِایۡٓءَ یَوۡمَئِذٍۭ  بِجَہَنَّمَ ۙ یَوۡمَئِذٍ یَّتَذَکَّرُ الۡاِنۡسَانُ وَ اَنّٰی لَہُ الذِّکۡرٰی

২৩. এবং সেদিন দোযখকে আনয়ন করা হবে এবং সেদিন মানুষ (সত্য) উপলব্ধি করবে, কিন্তু এ উপলব্ধি তার কি কাজে আসবে?

یَقُوۡلُ یٰلَیۡتَنِیۡ  قَدَّمۡتُ لِحَیَاتِیۡ

২৪. সে বলবে, ‘হায়! যদি আমি আমার এই জীবনের জন্যে কিছু (সৎকাজ) পূর্বেই করে পাঠাতাম!’

فَیَوۡمَئِذٍ لَّا  یُعَذِّبُ عَذَابَہٗۤ اَحَدٌ

২৫. সেদিন আল্লাহ পাকের শাস্তির ন্যায় শাস্তি কেউ দিতে পারবে না।

وَّ لَا یُوۡثِقُ وَ ثَاقَہٗۤ اَحَدٌ

২৬. আর তাঁর ন্যায় কেউ বাঁধতেও পারবে না।

یٰۤاَیَّتُہَا النَّفۡسُ الۡمُطۡمَئِنَّۃُ

২৭. হে প্রশান্ত আত্মা!

ارۡجِعِیۡۤ اِلٰی رَبِّکِ رَاضِیَۃً  مَّرۡضِیَّۃً

২৮. তুমি তোমার প্রতিপালকের নিকট এভাবে ফিরে চলো যে, তুমি তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট এবং তিনিও তোমার প্রতি সন্তুষ্ট।

فَادۡخُلِیۡ فِیۡ عِبٰدِیۡ

২৯. এরপর তুমি আমার বিশিষ্ট বান্দাদের মধ্যে শামিল হয়ে যাও।

وَ ادۡخُلِیۡ جَنَّتِیۡ

৩০. এবং আমার বেহেশতে প্রবেশ করো।

সংক্ষিপ্ত আলোচনা

মন্দলোকদের জঘন্য প্রকৃতির স্বরূপ উদ্ঘাটন করার পাশাপাশি পার্থিব ভোগ সামগ্রীর মঞ্জুরীর মূল রহস্য সম্পর্কে তাদের ভ্রান্ত ধারণার আলোচনা শেষ করা হয়েছে পূর্বের আয়াতে, এরপর মহা ভয়ংকর বিচার দিনের অবস্থা তুলে ধরে তাদেরকে চূড়ান্তভাবে সতর্ক করা হয়েছে।

বলা হচ্ছে, ‘কিছুতেই নয়, (সে দিনের কথা স্মরণ করো) যে দিন ধ্বংস করে দেওয়া হবে পৃথিবীকে প্রচণ্ড কম্পনের ওপর কম্পন দ্বারা এবং তোমার রব আসবেন, ফেরেশতারাও আসবেন সারিবদ্ধভাবে। আর যেদিন জাহান্নামকে এগিয়ে এনে সবার সামনে হাজির করা হবে, সেই দিন মানুষ অবশ্যই উপদেশ কবুল করবে (করতে চাইবে), কিন্তু কীই-বা কাজে লাগবে তার এই উপদেশ গ্রহণ।’ সেদিন বলবে, ‘হায় আফসোস! জীবদ্দশাতে আমি যদি (আজকের জন্য) কিছু প্রস্তুতি নিতাম! (কিন্তু সেদিন তার এই আক্ষেপ কোনো কাজেই আসবে না)। সেদিন তাঁর মতো কঠিন আযাব আর কেউ দেবে না, আর তাঁর মতো আর কেউই কাউকে বাঁধবে না।’

কিয়ামতের কিছু খণ্ড চিত্র

পৃথিবীর ধ্বংস বলতে বুঝায়, এর মধ্যে ঘরবাড়ি ও বিভিন্ন এলাকাকে চেনার জন্য যে সকল জিনিস রয়েছে তা জানার ও চেনার জন্য যতো প্রকার চিহ্ন আছে তা সব ধ্বংস হয়ে একাকার হয়ে যাবে। এটাই হবে প্রথম কিয়ামত, যার আগমনে সৃষ্টির সবকিছু লণ্ডভণ্ড হয়ে যাবে। কিন্তু ‘তোমার রব আসবেন, আরো আসবে ফেরেশতারা সারিবদ্ধভাবে’, এ এমন ব্যাপার যা মোটেই আমাদের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য নয়। এগুলো সম্পর্কে জানা তো দূরের কথা সম্যক উপলব্ধি করার মতো কোনো চেতনাশক্তিও আমাদের নেই। কোনো ব্যাখ্যার প্রয়াস না পেয়ে শুধু এতটুকু আমরা অনুভব করি যে, এ হবে এক গুরুগম্ভীর এবং চরম ভয়াবহ অবস্থা।

এ ধরনের অপর জিনিস হচ্ছে জাহান্নাম।

বলা হয়েছে- ‘এবং সেদিন দোযখকে আনয়ন করা হবে এবং সেদিন মানুষ (সত্য) উপলব্ধি করবে, কিন্তু এ উপলব্ধি তার কি কাজে আসবে?’

এ সম্পর্কে এতটুকু বুঝা যায় যে, এটা নিকটে এসে যাবে এবং যাদেরকে জাহান্নামে ফেলা হবে তাদেরই কাছে এসে যাবে জাহান্নাম।

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, ‘কিয়ামতের দিন জাহান্নামকে নিয়ে আসা হবে। তখন তার ৭০ হাজার লাগাম থাকবে আর প্রত্যেক লাগামে ৭০ হাজার ফেরেশতা থাকবে।’ তাহলে সর্বমোট ৭০০০০×৭০০০০=৪৯০০০০০০০০ জন ফেরেশতা জাহান্নাম টেনে নিয়ে আসবে। [মুসলিম, তিরমিযী]

বাস্তবে কী অবস্থা সংঘটিত হবে এবং কেমনভাবে তা সংঘটিত হবে তা একমাত্র আল্লাহ আলিমুল গায়বের জ্ঞানের মধ্যেই নিহিত রয়েছে। অন্য কারো পক্ষে তা জানা সম্ভব নয়। সে জ্ঞান ও রহস্য অনাগত সেই ভয়ংকর দিনেই প্রকাশিত হবে।

সেদিন মানুষ দুনিয়াতে তার কৃত ভাল-মন্দ আমলের কথা স্মরণ করতে পারবে কিন্তু সে স্মরণ কোনো কাজে আসবে না। আফসোস করে বলবে, ‘হায়! যদি আমি আমার এই জীবনের জন্যে কিছু (সৎকাজ) পূর্বেই করে পাঠাতাম।’

এ জন্য নবী ﷺ বলেছেন, পাঁচটি জিনিসের পূর্বে পাঁচটি জিনিসকে গনীমত মনে করো। তার প্রথম হলো মৃত্যুর পূর্বে জীবনকে। অর্থাৎ মারা যাওয়ার পূর্বে জীবনে আখিরাতের জন্য সৎ আমল করে পাথেয় গ্রহণ করে নাও। [ফাতহুল বারী]

এরপর বলা হয়েছে, কিয়ামতের দিন অবাধ্যতার শাস্তি আল্লাহ তাআলা যেভাবে দেবেন তার চেয়ে কঠিনভাবে শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা আর কারো নেই। দুনিয়ার কোনো শাস্তি আখিরাতের শাস্তির তুলনায় কিছুই নয়। পাপীদেরকে জাহান্নামের শেকল দ্বারা মজবুত করে বাঁধা হবে এবং মুখের ওপর দিয়ে হেঁচড়িয়ে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়া হবে।

এই আয়াতগুলোতে যে জাদুকরী বর্ণনা পেশ করা হয়েছে তাতে যে কোনো পাঠকের হৃদয়ে ওই কঠিন দিনের এক ভয়াল চিত্র ফুটে ওঠে। তার হৃদয় মন ভয়ে কাঁপতে থাকে। চোখগুলো আতংকে আড়ষ্ট হয়ে যায়। প্রকৃতপক্ষে, পৃথিবী সেই মহাপ্রলয়ের দিনে যেদিন সবকিছু চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে এবং সকল শক্তির মালিক, যিনি বল প্রয়োগের মাধ্যমে নিজ প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত করতে সম্পূর্ণরূপে সক্ষম, তিনি সরাসরি সেদিন সকল বিষয়কে নিয়ন্ত্রণ করবেন এবং সব কিছুর চূড়ান্ত ফায়সালা করে দেবেন। ফেরেশতারা মূক ও বধিরের মতো নির্ভীকভাবে সারিবদ্ধ হয়ে দাড়িয়ে থেকে সবকিছু অবলোকন করবে।

নাফসুল মুতমাইন্নাহর পরিচয়

‘ইয়া আইয়্যাতুহান নাফসুল মুত্বমাইন্নাহ’ অর্থ : হে প্রশান্ত প্রবৃত্তি!

বাক্যের পূর্বে অনুক্ত রয়েছে একটি ক্রিয়াপদ, একটি পৃথক বাক্য, যা একটি সম্ভাব্য প্রশ্নের জবাব। আর ওই প্রশ্নটি হচ্ছে- সত্যপ্রত্যাখ্যানকারীদের কী দুর্গতি হবে তা তো জানা গেল। বিশ্বাসীদের পরিণতি তাহলে কী হবে? ‘নাফসুল মুতমাইন্নাহ’ অর্থ ওই প্রবৃত্তি, যা আল্লাহর স্মরণে ও আনুগত্যে শান্তিপ্রাপ্ত, যেমন পানির ভেতরে শান্তি পায় মাছ। প্রবৃত্তি প্রশান্ত হতে পারে তখন, যখন তার মধ্যে অসুন্দর ও অশ্লীলতার প্রতি আকর্ষণ আর থাকেই না। আল্লাহপাকের গুণাবলির জ্যোতিচ্ছটা যখন তার উপরে পতিত হয়, তখনই সে কেবল হতে পারে যাবতীয় অপপ্ররোচনা মুক্ত। তখন তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য সেই জ্যোতিচ্ছেটার মধ্যে হয়ে যায় বিলীন। এটাই ফানা। আর এই অবস্থা যখন স্থায়ী হয়, তখনই তাকে বলে বাকা। নফসের এই ফানা-বাকার আগে হয় কলবের ফানা-বাকা। আর তা হয় আল্লাহর যিকিরের নিরবচ্ছিন্নতার মাধ্যমে। নফস মুতমাইন্নাহ বা প্রশান্ত যখন হয়, তখনই লাভ হয় প্রকৃত ঈমান। যেমন কুকুর একটি অপবিত্র প্রাণী, যা ভক্ষণ করা হারাম। তবে লবনের মধ্যে একে নিমজ্জিত করা হলে তার অপবিত্রতা উবে যায়। সম্পূর্ণটাই তখন হয়ে যায় লবন। তখন তা ভক্ষণ করা আর নিষেধ থাকে না।

আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট হলে তিনিও বান্দার প্রতি পরিতুষ্ট হন

পরের আয়াতে ‘রদ্বীয়াহ’ অর্থ সন্তুষ্ট এবং ‘মারদ্বিয়াহ’ অর্থ সন্তোষভাজন। বান্দা যখন আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট হয়, তখন আল্লাহও তার প্রতি পরিতুষ্ট হন এবং তখনই সে হয়ে যেতে পারে আল্লাহর সন্তোষভাজন। বরং আল্লাহর সিদ্ধান্তসমূহের প্রতি সন্তুষ্ট থাকাই তাঁর সন্তোষভাজন হওয়ার নিদর্শন। হাসান বসরী রহ. বলেছেন, ‘আল্লাহপাক যখন কোনো প্রশান্তহৃদয় প্রবৃত্তিকে গ্রহণ করতে চান, তখন তার হৃদয় ও প্রবৃত্তি হয় আরো অধিক প্রশান্ত। ফলে সে হয়ে যায় আল্লাহর পরিতোষভাজন।’

হযরত উবাদা ইবনে সামিত রাযি. বর্ণনা করেছেন, রাসূল ﷺ একবার বললেন, ‘যারা আল্লাহর সাক্ষাৎ পছন্দ করে, আল্লাহও তাদের সাক্ষাতে প্রীত হন।’ এ কথা শুনে আম্মাজান আয়েশা সিদ্দীকা রাযি. অথবা অন্য কোনো উম্মতজননী জিজ্ঞেস করলেন, ‘কিন্তু মৃত্যু তো কারো পছন্দ নয়।’ নবীজি তখন বললেন, ‘না। ব্যাপারটা ওরকম নয়। মৃত্যু যখন কারো কাছে মহাসৌভাগ্যের শুভসংবাদ নিয়ে উপস্থিত হয়, তখন পরকাল যাত্রা ছাড়া অন্য কোনো কিছুর প্রতি তার আকর্ষণ আর থাকে না। আর মৃত্যু যখন কারো কাছে মহাশাস্তির পূর্বাভাষ হয়ে আসে, তখন চিরতরে হারিয়ে যায় তার সকল স্বস্তি। পরকালযাত্রা করতে হয় তাকে বাধ্য হয়ে। [বুখারী, মুসলিম]

বান্দার প্রতি আল্লাহ তাআলার সন্তোষ মাখা আহ্বান

শেষোক্ত আয়াতদ্বয়ে ধ্বনিত হয়েছে, ‘এসো, প্রবেশ করো আমার প্রিয় বান্দাদের দলে (যারা আনুগত্যের মাধ্যমে আমার প্রিয়পাত্রে পরিণত হয়েছে)। এরা আমার অতি আপনজন, আমার অতি কাছাকাছি এদের স্থান। কাছে রাখার জন্য আমি নিজেই ওদেরকে বাছাই করে নিয়েছি। দাখেল হয়ে যাও, আমার বাগ-বাগিচায়, আরামে বসবাস করো যা চিরদিন সুজলা, সুফলা, শস্য-শ্যামলা, নির্ঝরিণী ও ফুলফলে শোভিত থাকবে। যেথায় আছে মায়াভরা সঙ্গিনীদের মধুমাখা কণ্ঠের গান ও পাখিদের প্রাণমাতানো তান। সেই চিরস্থায়ী জান্নাতে তোমাদেরকে আমার সাদর সম্ভাষণ জানাই। এসো আমার আলিঙ্গনে, এসো আমার রহমতের বাহুবন্ধনে, এ হচ্ছে এমন এক মহব্বত, যার সুবাস ছড়িয়ে রয়েছে জান্নাতের পাতায় পাতায়। যার সৌরভে সুরভিত এই ফুলবাগিচার প্রতিটি কলি। চিরস্থায়ী এ আনন্দমেলা হাসিখুশিতে ভরা প্রাণ মাতানো। এ মেলা প্রথম স্বাগত জানানোর দিন থেকে শুরু হওয়ার পর আর শেষ হবে না কোনো দিন। সেই জান্নাতেই এসো তোমরা, হে আমার পরম আদরের বান্দারা, এসো প্রশান্ত মনে।’

এভাবে যাদেরকে ডাকা হবে তারা নিশ্চিন্ত থাকবে। পাক পরওয়ারদেগারের কাছে আসতে পেরে তারা তাদের পথের মাধুরীতে নিশ্চিন্ত থাকবে। নিশ্চিন্ত থাকবে তারা আল্লাহ তাআলার আদরে, বেহেশতী বান্দারা আজ নিশ্চিন্ত, এদের মন সন্দিগ্ধ নয়। এই নিশ্চিন্ততায় মুমিন বান্দার মন এমনভাবে ছেয়ে রয়েছে যে, তার মনে কখনও দোদুল্যমান ভাব আসে না। এত নিশ্চিন্ত সে, যে, তার কোনো ভীতিকর দিনের ভয় থাকে না। তারপর গোটা প্রকৃতির মধ্যে দেখা যায় সবকিছু নিরাপদে, শান্তিতে ও পরিতৃপ্তির সাথে আল্লাহপ্রদত্ত ব্যবস্থায় কাজ করে যাচ্ছে। এটা আল্লাহ তাআলার ক্ষমতার বাস্তব নিদর্শন হিসাবে পরিদৃশ্যমান। এগুলোর পরস্পরের মধ্যে যেন রয়েছে পারস্পরিক সহযোগিতা, একতা, মিল ও মহব্বত এবং এক অত্যন্ত নিকটতম একটা সম্পর্ক, যার ফলে সর্বত্র অবিচ্ছিন্ন শান্তি বিরাজমান থাকে।

যে জান্নাতের সুসংবাদ এ আয়াতগুলোতে দেওয়া হয়েছে তা হচ্ছে এক সুবাসিত মনোরম বাগিচা, তার মধ্যেই বিরাজমান রয়েছে মহাসম্মানিত ও পরম করুণাময় আল্লাহ তাআলার রহমত ও বরকত।

সত্য ও সুন্দরের প্রহরায় ৪৮ বছর

প্রতিষ্ঠাতা : শায়খ আল্লামা লুৎফুর রহমান বর্ণভী রহ.
নিবন্ধন নম্বর : চ-৪৭৩/০৫

সত্য ও সুন্দরের প্রহরায় ৪৮ বছর

প্রতিষ্ঠাতা : শায়খ আল্লামা লুৎফুর রহমান বর্ণভী রহ.
নিবন্ধন নম্বর : চ-৪৭৩/০৫

কপিরাইট © ২০২৪ | মাসিক হেফাজতে ইসলাম, আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলামের মুখপত্র। Developed By Shabaka IT