فَمَا لَهُمْ لَا يُؤْمِنُونَ ـــ وَإِذَا قُرِئَ عَلَيْهِمُ ٱلْقُرْءَانُ لَا يَسْجُدُونَ ــــ
بَلِ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ يُكَذِّبُونَ ـــ وَٱللَّهُ أَعْلَمُ بِمَا يُوعُونَ ـــ فَبَشِّرْهُم بِعَذَابٍ أَلِيمٍ إِلَّا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَعَمِلُوا۟ ٱلصَّـٰلِحَـٰتِ لَهُمْ أَجْرٌ غَيْرُ مَمْنُونٍ ـــ
তরজমা
২০. তাদের কী হলো তারা ঈমান আনে না?
২১. যখন তাদের সামনে কুরআন তেলাওয়াত করা হয় তারা সেজদা করে না।
২২. বরং যারা কাফের তারা অস্বীকার করে।
২৩. আল্লাহ অধিক জ্ঞাত তারা যা অন্তরে গোপন রাখে।
২৪. তাদেরকে ‘সুসংবাদ’ দাও মর্মন্তুদ শাস্তির।
২৫. তবে যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে তাদের জন্য রয়েছে নিরবিচ্ছিন্ন প্রতিদান।
ভূমিকা
সূরা ইনশিকাকের ২০-২৫ নম্বর আয়াতে কাফেরদেরকে সতর্ক করে কুফর ত্যাগ করে ঈমানের পথে ফিরে আসার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। অন্যথায় মর্মন্তুদ কঠিন শাস্তির ঘোষণা রয়েছে। পাশাপাশি যারা মুমিন সৎকর্মশীল তাদেরকে উৎসাহ প্রদান করে আখিরাতে তাদের জন্য মহা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
মানবজাতি ও ছয় মঞ্জিল
‘অবশ্যই তোমরা এক স্তর থেকে অন্যস্তরে আরোহণ করবে।’
সূরা ইনশিকাকের ১৯ নম্বর আয়াতে মানবজাতিকে তাদের আদি-অন্তের প্রতি ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে। বহু ধাপ-উপধাপ অতিক্রম করে মানুষ যেভাবে দুনিয়াতে আসে, ঠিক তেমনি পরকালীন জীবনেও রয়েছে বহু স্তর। পর্যায়ক্রমে সকলেই স্তরগুলো পাড়ি দিতে হবে। যেভাবে পশ্চিমাকাশে সন্ধ্যা-লালিমা অস্ত যাওয়ার পর রাতের সূচনা হয়, তেমনি মানুষ মারা যাওয়ার পর আলমে বরযখ বা কবর-জগতের সূচনা। গভীর রজনীর পিনপতন নীরবতার সাথে রয়েছে কবর-জগতের সাদৃশ্য। আবার পূর্ণিমার রাতের চন্দ্রের আলোতে আলোকিত পৃথিবী কবর-জগত-পরবর্তী কিয়ামাত-দিবসের সূচনার ইঙ্গিত। মহান রাব্বুল আলামীন সূরাটির ১৬ থেকে ১৯ নম্বর আয়াতে বস্তু-ক’টির শপথ খেয়ে এভাবে দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছেন, মূলত মানবজীবনের আদিঅন্তে ছয়টি মঞ্জিল পাড়ি দিতে হয়। (১) আলমে আরওয়াহ বা রূহ জগৎ (২) আলমে আরহাম বা মাতৃজগৎ (৩) আলমে আজসাদ বা দুনিয়ার জগৎ (৪) আলমে বারযাখ বা কবর-জগৎ (৫) আলমে ক্বিয়ামাত বা কিয়ামাত-দিবস (৬) আলমে আখিরাত বা বিচার-দিবস। (তাফসীরু কাবীর)
কুফর–এর সংজ্ঞা
রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আনীত অকাট্য বিষয়াবলির কোনো একটি অস্বীকার করা।
মুমিন হওয়ার জন্য অকাট্য সব বিষয়ের প্রতি ঈমান আনয়ন করা জরুরি কিন্তু কাফির হওয়ার জন্য অকাট্য কোনো একটি বিষয় অস্বীকার করাই যথেষ্ট। (ফতহুল মুলহিম)
কাফির সাত প্রকার
১. মুনাফিক : যে বাহ্যিক ঈমান প্রকাশ করে কিন্তু ভেতরে কুফর গোপন করে।
২. মুরতাদ : ধর্মত্যাগী।
৩. মুশরিক : বহু ইলাহে বিশ্বাসী।
৪. কিতাবী : পূর্ববর্তী মানসুখ তথা রহিত আসমানী কিতাবের প্রবক্তা।
৫. দাহরিয়া : যুগবাদী। যারা কাল বা সময়কে সৃষ্টিকর্তা হিসেবে বিশ্বাস করে।
৬. নাস্তিক : যারা সৃষ্টিকর্তায় অবিশ্বাসী।
৭. যিনদিক : যে ব্যক্তি কুফরী আকীদা-বিশ্বাসকে মুসলমানদের আঙ্গিকে উপস্থাপন করে ইসলামের দিকে সম্বন্ধ করে। (দরসে মুসলিম, রাফী উসমানী দা.বা. কৃত)
ঈমানে অর্থ
ঈমান শব্দটি আমনুন মূলধাতু থেকে নির্গত। আমনুন মানে নিরাপদ হওয়া। আর ঈমান শব্দের শাব্দিক অর্থ নিরাপদ করা।
ঈমানের পারিভাষিক অর্থ
রাসুলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আনীত অকাট্য বিষয়াবলির প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। বিস্তারিত বিষয়গুলোকে বিস্তরভাবে জানা আর সংক্ষিপ্ত বিষয়াবলিকে সংক্ষিপ্তাকারে জানা। (ফতহুল মুলহিম)
সেজদায়ে তিলাওয়াত আদায় ও শয়তানের ক্রন্দন
আলোচ্য সূরা ইনশিকাকের ২১ নম্বর আয়াতটি সেজদার আয়াত। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, যখন বনী আদম সেজদার আয়াত তিলাওয়াত করার পর ‘সেজদায়ে তিলাওয়াত’ আদায় করে, তখন শয়তান ক্রন্দন করতে করতে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং আক্ষেপ করে করে বলে, ‘হায় আফসোস! বনী আদমকে সেজদার নির্দেশ প্রদান করায় সে সেজদা আদায় করেছে তাই তার জন্য জান্নাত নির্ধারিত আর আমাকে সিজদার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে কিন্তু আমি তা অস্বীকার করায় আমার জন্য জাহান্নাম নির্ধারিত।’ (ইবনু হিবান, সহীহ মুসলিম)
সেজদায়ে তিলাওয়াতের মাসআলা
১. কুরআন শরীফে মোট ১৪টি সেজদায়ে তিলাওয়াত আছে। কোরআন শরীফের হাশিয়ার উপর যেখানে (سجد) লেখা আছে সেই জায়গা পাঠ করলে বা শুনলে সেজদা করা ওয়াজিব।
২. এক জায়গায় বসে একটি সেজদার আয়াত বার বার পাঠ করলে একটি সেজদাই ওয়াজিব হবে। তবে স্থান পরিবর্তন করলে যতবার পাঠ করবে ততটা সেজদা আবশ্যক হবে। (বেহেশতী জেওর)
৩. সেজদায়ে তিলাওয়াত আদায়ের পদ্ধতি : পবিত্র অবস্থায় দাঁড়িয়ে আল্লাহু আকবার বলে একটি সেজদা আদায় করা এবং তিনবার সেজদার তাসবীহ পাঠ করে আবার আল্লাহু আকবার বলে দাঁড়ানো। বসে সেজদা আদায় করাও বৈধ আছে। (বেহেশতী জেওর)