শিক্ষা ব্যবস্থায় ‘শিক্ষা কারিকুলাম’ হলো আয়নাস্বরূপ। যার মধ্যে দেশে ও জাতির ভবিষ্যৎ দেখা যায়। এজন্য একটি নিখুঁত শিক্ষা কারিকুলাম প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়নের কাজটি দেশের সরকার এবং নাগরিকদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একটি নিখুঁত আয়না যেমন একজন ব্যক্তির একটি নিখুঁত প্রতিবিম্ব তৈরি করতে পারে, ঠিক সেভাবে একটি নিখুঁত শিক্ষা কারিকুলাম অনায়াসে একটি জাতিকে তার কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছে দিতে পারে।
দুঃখজনক হলেও সত্য, স্বাধীনতার পর থেকে এ যাবত যতগুলো শিক্ষা কারিকুলাম প্রণয়ন করা হয়েছে, এর সবগুলোই চরমভাবে সমালোচিত হয়েছে। ডিসেম্বর মাস এলেই শুরু হয় নতুন শিক্ষা কারিকুলাম নিয়ে তর্কবিতর্ক। এবারও এর ব্যতিক্রম নয়।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া শিক্ষকদের অশ্লীল নাচ, সাইকেল চালানোর বিকৃত অঙ্গভঙ্গি, ব্যাঙের লাফ, হাঁসের ডাককে নতুন শিক্ষা কারিকুলামে অন্তর্ভুক্তির আভাস পাওয়া যাচ্ছে। যদি এগুলো সত্য হয়, তবে আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ রয়েছে। একটি দেশের এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে যদি সংশয় থাকে, সন্দেহ থাকে কিংবা অস্পষ্টতা থাকে, তবে সেটা নিঃসন্দেহে সে দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে হুমকির মুখে ফেলবে।
এখানে লক্ষণীয় হলো, মানুষকে যারা আত্মাবিহীন জড় পদার্থ মনে করে এবং শুধু বস্তুগত প্রয়োজনের দিকেই লক্ষ্য রাখে, তারাই সময়ে সময়ে শিক্ষা কারিকুলাম প্রণয়নের দায়িত্ব হাতে নেয়। যার ধরুন এখানে মানুষকে বানরের উন্নত সংস্করণ প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয়, বিলুপ্তি পায় ইসলামী জীবনাদর্শ ও নীতি-নৈতিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তাই বস্তুবাদে বিশ্বাসী তথাকথিত এই সকল শিক্ষাবিদদের তৈরিকৃত কারিকুলাম দিয়ে মনুষ্যত্বের বিকাশ অসম্ভব।
আবার এটাও সত্য যে, যারা মানুষকে আত্মসর্বস্ব মনে করেন অথবা তারা জৈবিক প্রয়োজনের দিকে মনোযোগ না দিয়ে কেবল আধ্যাত্মিক উন্নতির উদ্দেশ্যে শিক্ষার প্রচরণ করেন, তাঁরাও মানুষের উপযোগী প্রকৃত শিক্ষা দিতে অক্ষম। এ শিক্ষা মানুষকে যতই খোদাভীরু ও ধর্মপ্রাণ হওয়ার অনুপ্রেরণা দান করুক, বাস্তবজীবনে বস্তুগত প্রয়োজনের তাগিদ তাকে ঈমানের বিপরীত পথে যেতে উদ্বুদ্ধ করবে। তাই এই প্রকার শিক্ষাও মানুষের স্বভাবের বিপরীত। যে শিক্ষা মানুষের আত্মা ও দেহকে এক সুন্দর সামঞ্জস্যময় পরিণতিতে পৌঁছিয়ে এ জগতের রূপ-রস-গন্ধকে নৈতিকতার সীমার মধ্যে উপভোগ করার যোগ্যতা দান করে, সেই শিক্ষাই মানুষের প্রকৃত শিক্ষা। যে শিক্ষা প্রাকৃতিক শক্তিসমূহকে মানবতার উন্নতি ও নৈতিকতার বিকাশে প্রয়োগ করতে উদ্বুদ্ধ করে, তাই মানুষের উপযোগী শিক্ষা। আর জ্ঞান-বিজ্ঞানের চরম উন্নতি দান করা সত্ত্বেও যে শিক্ষা মনুষ্যত্ব ও আত্মার উন্নতিকে ব্যাহত করে তা প্রকৃতপক্ষে মানব-ধ্বংসী শিক্ষা, তাকে কিছুতেই মানুষের উপযোগী শিক্ষা বলা চলে না। নতুন শিক্ষা কারিকুলামে আমরা মানুষের শিক্ষা চাই। ভবিষ্যৎ প্রজন্মে মনুষ্যত্বহীন মানুষ আমরা চাই না।
সালাহ উদ্দীন তারেক
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, মাসিক হেফাজতে ইসলাম