আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র দাম্পত্য সম্পর্ক নিয়ে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র নুপুর শর্মার কুরুচিপূর্ণ এক মন্তব্যের জেরে বিগত মাসটিতে পুরো মুসলিম বিশ^ উত্তাল ছিল। নবীজিকে কট‚ক্তির বিরুদ্ধে এবারের প্রতিবাদ নিকট-অতীতের সকল প্রতিবাদকে ছাড়িয়ে গেছে। এবারের প্রতিবাদে ঘুমন্ত আরব বিশ^ সবার আগে জেগে উঠেছে। কুয়েত, কাতার ও ইরান তাদের দেশে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে এবং অফিশিয়ালি রাষ্ট্রীয় প্রতিবাদী স্মারকলিপি প্রদান করেছে। সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ও তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েঠে। ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান শক্ত প্রতিবাদ জানিয়ে দাবি করেছে যেন এ ধরনের অপরাধীকে ক্ষমা না করা হয়। পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ ও সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানও তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দেন। ওআইসিও প্রতিবাদ জানায়। এভাবে ১৫টিরও বেশি মুসলিম দেশ রাষ্ট্রীয়ভাবে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায় এবং পৃথিবীর সকল প্রান্তের মুসলমানরা দলমত নির্বিশেষে রাস্তায় নেমে টানা কয়েক সপ্তাহ বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন। আরব বিশে^র বাজার ও সুপারশপগুলো থেকে ভারতীয় পণ্য সরিয়ে ফেলা হয়। ইত্যকার প্রতিবাদ ও প্রতিক্রিয়ায় ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদী সরকার তুমুল চাপের মুখে পড়ে। বিশেষ করে আরব বিশে^র বিরূপ প্রতিক্রিয়া ভারতীয় অর্থনীতির জন্য বড় ধরনের হুমকি। নিরূপায় ভারত ক‚টনৈতিক নমনীয়তার মাধ্যমে বিষয়টি নিরসনে বাধ্য হয়। তাদের জানবাজ ও উৎসর্গপ্রাণ উঠতি নেত্রী নুপুর শর্মাকে দল থেকে বের করে দেয়। এবং এ বক্তব্য বিজেপি বা সরকারের তরফে নয়, তা বিবৃতি দিয়ে বারবার প্রচার করে।
বর্তমান প্রেক্ষিতে এই ঘটনা অনেক তাৎপর্য। পৃথিবীর দিকে দিকে মুসলমানরা যখন নির্যাতিত ও কোণঠাসা, বিশেষ করে ভারতে, এমতাবস্থায় নবীজির অপমানের ঘটনায় আরব বিশে^র জেগে ওঠা, সঙ্গে পুরো মুসলিম বিশে^র প্রতিবাদমুখরতা এবং এর প্রতিক্রিয়ায় ভারতের নমনীয়তা অবলম্বন এটাই প্রমাণ করে যে, মুসলিম বিশ^ যদি এখনো শুধু মৌখিক ও ক‚টনৈতিকভাবেও ঐক্যবদ্ধ হতে পারে, তাহলে মুসলমানদের অধিকার ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে অমুসলিম কোনো দেশ বা গোষ্ঠী টু-শব্দটি করারও সাহস পাবে না, ইনশাআল্লাহ।
২.
সিলেট ও সুনামগঞ্জে মে মাসের বন্যার ধকল কাটতে না কাটতে জুনের মাঝামাঝি সময় থেকে আরও ভয়াবহ আকারে প্লাবিত করে ফেলল পুরো অঞ্চলটি। দ্বিতীয় বারের এ বন্যায় বিগত ১০০ বছরের ইতিহাসকেও ছাড়িয়ে গেছে। এবার কেবল সুনামগঞ্জ ও সিলেট নয়, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের বিরাট এলাকাও প্লাবিত করেছে। প্লাবিত করেছে সুনামগঞ্জের ভাটি অঞ্চল কিশোরগঞ্জ-নেত্রকোণাও। কুড়িগ্রামসহ উত্তরাঞ্চলের বন্যাপরিস্থিতিও ভয়াবহ। বানভাসি মানুষের দুঃখ-দুর্দশার অন্ত নেই। বন্যার তোড়ে ভেসে গেছে অসংখ্য মানুষের বাড়িঘর, ভেসে গেছে তাদের গবাদি পশু ও মজুদ খাদ্যদ্রব্য। অসংখ্য মানুষ শুধু প্রাণটুকু নিয়ে আশ্রিত হয়েছেন বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে। সম্পাদকীয়টি যখন লিখছি, এখনও অসংখ্য মানুষ পানিবন্দী। অসংখ্য এলাকা এখনও পানির নিচে।
বানভাসি এসব ক্ষতিগ্রস্ত ও অসহায় মানুষের পাশে বরাবরের মতো এবারও আলেম সমাজ দাঁড়িয়েছেন। এবারের ক্ষতির পরিমাণ বেশি হওয়ায় সাহায্যের পরিমাণও বেশি। তবে তা মানুষের ক্ষতির পরিমাণের তুলনায় কিছুই না। কিন্তু তারপরও তাঁদের তাৎক্ষণিক প্রয়োজন মেটাতে এবং বন্যার তোড় থেকে তাঁদেরকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসতে এ দেশের আপামর জনসাধারণ, বিশেষত উলামায়ে কেরাম বিভিন্ন সংস্থা, প্রতিষ্ঠান ও নিজস্ব উদ্যোগে ভালোবাসা ও মানবতার যে নজির স্থাপন করেছেন তা তুমুল প্রশংসনীয় এবং আশাজাগানিয়া। বন্যার্ত মানুষের উদ্ধার ও সহযোগিতায় সেকুলার ও সাধারণ নাগরিকদের একটি অংশ কাজ করছেন ঠিক, কিন্তু উলামায়ে কেরামের অংশগ্রহণটা সবচেয়ে বেশি, কার্যকরী এবং তৎপরতাপূর্ণ। কোটি কোটি টাকার ত্রাণ সামগ্রী তাঁরা বিতরণ করেছেন, এখনও করছেন। বন্যার্ত মানুষের পুনর্বাসনের কাজও ইতিমধ্যে তাঁরা শুরু করে দিয়েছেন। পুনর্বাসনের কাজে ত্রাণের চেয়েও কয়েকগুণ বেশি আর্থিক অনুদানের প্রস্তুতি ইতিমধ্যেই তাঁরা নিয়ে ফেলেছেন। আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশও আছে এই মহৎ কাজে। কেন্দ্রীয় ও শাখাপর্যায়ে বিভিন্নভাবে বন্যাদুর্গতদের সহায়তা করা হয়েছে। সেই ধারা এখনও অব্যাহত আছে, আলহামদুলিল্লাহ।
আল্লাহ তাআলা বানভাসি মানুষের দুঃখদুর্দশাগুলো দূর করে দিন। বন্যায় তাঁদের যে ক্ষতি হয়েছে তার উত্তম বদলা দান করুন। বন্যার্ত মানুষের সেবায় যাঁরা যেভাবে সহযোগিতা করে চলেছেন প্রত্যেককে জাযায়ে খায়ের দান করুন। আমীন, ইয়া রাব্বাল আলামীন।
—হামমাদ রাগিব