জুন ২০২২

সিলেটে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যাটি হয়ে গেল গত মাসে। দেশের উত্তর-পূর্ব সীমান্তের ঐতিহ্যমÐিত এই অঞ্চলকে অনেকটা সুতোর মতো পেঁচিয়ে রেখেছে ভারতের করিমগঞ্জ ও মেঘালয়। ভারতের বরাক নদ আসামের করিমগঞ্জ হয়ে সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার অমলশিদ এলাকায় সুরমা ও কুশিয়ারা নামে ভাগ হয়েছে। সুরমা সিলেটের কানাইঘাট, গোলাপগঞ্জ ও সিলেট সদর হয়ে সুনামগঞ্জে গিয়ে মিশেছে। আর কুশিয়ারা সিলেটের গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ উপজেলা হয়ে মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে চলে গেছে।

বিগত কয়েক বছর ধরে বৃষ্টির সিজনে নিয়ম করে বন্যা হয় সিলেটে। এ বছরের বন্যা অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করল। পাউবোর তথ্যমতে অঞ্চলটির ১৫ লক্ষাধিক বাসিন্দা এ বছর বন্যার কবলে পড়ে সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হয়েছেন।

সিলেটবাসীর এই কষ্ট ও দুর্ভোগের পেছনে ভারতের নদীশাসন-নৈরাজ্যের দায় তো আছেই, একই সঙ্গে দেশের পানিসম্পদ কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় প্রশাসন এবং জনগণের অবহেলা ও অসতর্কতাও সমানভাবে দায়ী।

প্রায় ২৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ সুরমা নদীর ১১০ কিলোমিটারই পড়েছে সিলেটে। গত দুই দশকে এই ১১০ কিলোমিটারের ৪০-৪৫ শতাংশ অংশে চর পড়েছে। যেখানে চর পড়েনি, সেখানে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। সুরমা এখন অনেকটাই মৃত নদীতে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া প্রায় ২১০ কিলোমিটার দীর্ঘ কুশিয়ারার ১২০ কিলোমিটার পড়েছে সিলেটে। এ নদীতে খুব বেশি চর না পড়লেও গভীরতা অনেকটাই কমে এসেছে। ফলে বড় এই নদী-দুটোতে দেখা দিয়েছে তীব্র নাব্যতা-সংকট। গভীরতা কমে যাওয়ায় টানা বৃষ্টিতে দুই নদীর পানি উপচে উঠে সহজেই বিপৎসীমা অতিক্রম করে ফেলে।

এ দিকে সিলেট নগরীর জলাশয় ও পানি নিষ্কাশনের প্রাকৃতিক খালগুলোর অধিকাংশ বেদখল কিংবা ভরাট হয়ে যাওয়ায় প্রতি বছরই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। টানা বৃষ্টিতে সুরমার পানি উপচে উঠলে শহরের নানা এলাকা প্লাবিত হয়ে যায়। সিলেটকে বলা হতো দিঘির শহর। ধোপাদিঘির পাড়, সাগরদিঘির পাড়, লালদিঘির পাড়সহ নগরীর অন্তত ২০/২৫টি এলাকার নাম এমন। দিঘির নামে এলাকার নাম ঠিকই আছে, কিন্তু নেই দিঘিগুলো। ভরাট হয়ে গেছে অনেক আগেই। এ ছাড়া নগরীর ভেতর দিয়ে প্রবাহিত ছিল ছোট-বড় প্রায় ২৫টি প্রাকৃতিক খাল। যা ‘ছড়া’ নামে পরিচিত। সেগুলোও ভরাট কিংবা বেদখল হয়ে গেছে। অনেক স্থানে এসব ছড়ার অস্তিত্বই এখন আর খুঁজে পাওয়া যায় না।

অবশ্যি সিটি কর্পোরেশন ছড়াগুলো উদ্ধারে গত কয়েক বছর ধরে তৎপর ভ‚মিকা পালন করছে। তাদের দাবি ও তথ্যমতে এ অবধি ১৩টির মতো খাল তারা উদ্ধার করতে পেরেছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে নগরীর জলাবদ্ধতার সমস্যা খানিকটা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। কিন্তু বন্যা-সমস্যার সমাধানের জন্য সুরমা ও কুশিয়ারা নদীতে পরিকল্পিত ও বড়ধরনের খননের বিকল্প নেই। দুই নদীর গতিপথ অনুযায়ী নদীশাসন নিশ্চিত করে বাস্তবসম্মত খনন-প্রকল্প অতি দ্রæত বাস্তবায়ন না করলে সিলেটবাসীকে প্রতিবছরই এ ধরনের ভয়াবহ বন্যা-বিপর্যয়ের মুখোমুখি হওয়া লাগতে পারে। আর এ বিপর্যয় প্রতি বছর বাড়বে বৈ কমার কোনো সম্ভাবনা নেই।

এবারের বন্যায় সিলেটের বানভাসি মানুষ খুবই বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন। নি¤œবিত্তরা তো বটেই, অবস্থাসম্পন্ন অনেক পরিবারও তুমুল বন্যার সময় খাদ্য ও বাসস্থানের সংকটে পড়েছিলেন। কৃষকদের চোখে এখন সর্ষেফুলের দৃশ্য! বন্যায় ডুবে গেছে তাদের ক্ষেতের ফসল। এই সংকটাপন্ন সময়ে বন্যাগ্রস্ত প্রায় সকলেরই জরুরি ত্রাণ-সহায়তার প্রয়োজন দেখা দেয়। আলহামদুলিল্লাহ, এ ক্ষেত্রে সবার আগে এবং সর্বাধিক কার্যকরী পন্থায় এগিয়ে আসেন এ দেশের উলামায়ে কেরাম। বন্যার শুরু থেকেই ব্যক্তিউদ্যোগ ও বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে আলেমদের শতাধিক স্বেচ্ছাসেবী টিম জরুরি ত্রাণসহায়তায় সর্বাত্মকভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। দেশ ও প্রবাসের বিত্তবান মানুষের সহায়তার ভিত্তিতে প্রতিটি টিম ইতিমধ্যে লক্ষ লক্ষ টাকার ত্রাণ বিতরণ করেছেন। আমরা তাঁদেরকে সাধুবাদ জানাচ্ছি।

বন্যা-পরবর্তী সময়ে মানুষের প্রয়োজন আরও ব্যাপক আকারে দেখা দেবে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত নি¤œবিত্তদের ঘর-মেরামত থেকে শুরু করে নানাবিধ সহায়তার দরকার পড়বে। আলেমদের নেতৃত্বে পরিচালিত এই টিমগুলো সেই সময়ও যেন বানভাসি এসব মানুষের পাশে থাকেন, এ দাবি ও আরজিটুকু রইল তাঁদের প্রতি। আল্লাহ তাআলা তাঁদের এ মেহনতকে কবুল করুন। প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট সবধরনের বিপর্যয় থেকে সিলেটসহ সারা দেশবাসীকে হেফাজত করুন। আমীন।

—হামমাদ রাগিব

সত্য ও সুন্দরের প্রহরায় ৪৮ বছর

প্রতিষ্ঠাতা : শায়খ আল্লামা লুৎফুর রহমান বর্ণভী রহ.
নিবন্ধন নম্বর : চ-৪৭৩/০৫

সত্য ও সুন্দরের প্রহরায় ৪৮ বছর

প্রতিষ্ঠাতা : শায়খ আল্লামা লুৎফুর রহমান বর্ণভী রহ.
নিবন্ধন নম্বর : চ-৪৭৩/০৫

কপিরাইট © ২০২৪ | মাসিক হেফাজতে ইসলাম, আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলামের মুখপত্র। Developed By Shabaka IT