ছয় মঞ্জিল প্রসঙ্গ : আলমে আজসাদ বা দুনিয়ার জগত (৮ম পর্ব)

স্ত্রীরা হলেন শান্তির ঠিকানা

পরম দয়ালু আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের জীবন-সংগ্রামে সুকূন ও শান্তি লাভের জন্য দাম্পত্য-সম্পর্কের প্রচলন করে দিয়েছেন। এ সম্পর্কের মধ্য দিয়েই গড়ে ওঠে একেকটি পরিবার।

স্ত্রীদেরকে বলা হয়ে থাকে স্বামীর অর্ধাঙ্গিনী। আল্লাহ তাআলা পুরুষদের জন্য স্ত্রীদেরকে বানিয়েছেন শান্তির ঠিকানারূপে। কুরআনুল কারীমে তিনটি জিনিসের ব্যাপারে সুকূন বা শান্তি শব্দটির উল্লেখ রয়েছে—

১. সূরা রূমে স্ত্রীদের ব্যাপারে বলা হয়েছে, যে, তাঁরা হলেন শান্তির ঠিকানা। ইরশাদ হয়েছে“আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য হতেই তোমাদের সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন যাতে তোমরা তার কাছে শান্তি লাভ করতে পারো।”[1]

২. ঘরের আলোচনা প্রসঙ্গে সুকূন বা শান্তি শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। সূরা নহলে ইরশাদ হয়েছে- আল্লাহ তোমাদের গৃহগুলোকে তোমাদের আরামশান্তির জায়গা বানিয়ে দিয়েছেন।”[2]

৩. রাতের আলোচনা করতে গিয়ে সূরা আনআমে ইরশাদ হয়েছে- “আর তিনি রাত সৃষ্টি করেছেন শান্তি ও আরামের জন্য, এবং সূর্য ও চন্দ্র বানিয়েছেন গণনার জন্য।”[3]

বিবাহের বুনিয়াদি মাকসাদ বা মৌলিক উদ্দেশ্যই হলো, স্বামী তার স্ত্রীর কাছে শান্তি খুঁজে পাবে এবং স্ত্রীও তার স্বামীর আশ্রয়ে পরম শান্তি লাভ করবে।

শান্তির ঠিকানায় কেন এত অশান্তি?

কিন্তু বর্তমান সমাজের দিকে নজর দিলে বড় আফসোস আর পেরেশানি লাগে। যে দাম্পত্য-জীবন আল্লাহ তাআলা দিলেন আরাম ও প্রশান্তি লাভের জন্য, আজকের সমাজে সেই দাম্পত্য ও পারিবারিক জীবনে অনেকেই চরম অশান্তিতে ভুগছে। বাড়ি-গাড়ি, ধন-সম্পদ, স্ত্রী-সন্তান-সবই আছে, নাই শুধু শান্তি। নাই শুধু সুকূন।

মাআযাল্লাহ! অনেক পরিবার তো এমন আছে, স্বামী তার স্ত্রীর ব্যাপারে আতঙ্কিত কখন না জানি স্ত্রীর হাতেই তার প্রাণ চলে যায়! স্ত্রী তার স্বামীর ব্যাপারে আতঙ্কিত-কখন না জানি অর্ধাঙ্গিনী স্ত্রীর হাতেই সে খুন হয়ে যায়!

এমন ঘটনা অহরহ ঘটে চলেছে। পত্রিকার পাতায় কয়দিন পরপরই এ ধরনের শিরোনাম দৃষ্টিগোচর হয়।

আবার অশান্তির অনলে পুড়তে পুড়তে অনেকে বিষের বোতল হাতে নিয়ে নিজেই নিজের মূল্যবান যিন্দেগিটাকে শেষ করে দেয়। আত্মহত্যা মহাপাপ। অনেক বড় গুনাহ। হালাল মনে করে কেউ এই পথ বেছে নিলে চিরকালের জন্য সে জাহান্নামী হয়ে যাবে।

এই অশান্তি কেবল দাম্পত্য-জীবনেই আটকে নেই, সন্তান-সন্ততির মধ্যেও তা মহামারি আকারে ছড়িয়েছে। নাউযুবিল্লাহ। এ ধরনের বিষয়ে আলোচনা করতেও দিল কেঁপে ওঠে। অনেক সন্তান নিজ মা-বাবাকে মারধর করছে! অনেকে খুন পর্যন্ত করে ফেলছে!

আপন মা-বাবা! যে মা-বাবার মাধ্যমে সে পৃথিবীর মুখ দেখেছে! যে মা-বাবা তাকে বহু কষ্ট সহ্য করে লালন-পালন করেছেন! সেই মা-বাবাকে মারছে, হত্যা করছে!

আবার এর উল্টোটাও হচ্ছে। পরকীয়ার জেরে অনেক মা-বাবা আপন সন্তানকে হত্যা করছে! চিন্তা করা যায়? কী মূর্খতা, জাহালাত আর অন্ধকারপূর্ণ সমাজে আমরা বসবাস করছি!

মা-বাবার নাফরমানি এবং বৃদ্ধ মা-বাবার খেদমত ও দেখাশোনা না করার ঘটনা তো এখন স্বাভাবিক ঘটনা; অহরহই ঘটছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় বৃদ্ধাশ্রম খোলা হয়েছে। অনেক সন্তান তাদের বৃদ্ধা মা-বাবাকে সেই বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসছে। রোগে-শোকেও খোঁজ-খবর রাখে না। অসুস্থ মা-বাবার খেদমত করা সন্তানের জন্য অবশ্য-কর্তব্য তো বটেই, এমনিতে কোনো স্বজন-পরিজন বা কোনো মুসলিম ভাই অসুস্থ হলে তার সেবা করা, ইয়াদাত করা, তাকে দেখতে যাওয়াও অনেক বড় সওয়াব ও দায়িত্বশীলতার কাজ।

হাদীস শরীফে এসেছে, দিনের প্রথম ভাগে যে ব্যক্তি কোনো রোগী দেখতে যায়, ৭০ হাজার ফেরেশতা দিনভর তার জন্য মাগফিরাতের দুআ করতে থাকেন। অনুরূপ রাতের প্রথম ভাগে যে ব্যক্তি কোনো রোগী দেখতে যায়, ৭০ হাজার ফেরেশতা সারা রাত তার জন্য মাগফিরাতের দুআ করতে থাকেন।

রোগী দেখার মহা-ফযীলতপূর্ণ এই আমল আমাদের কাছ থেকে বিলুপ্ত তো হয়েছেই, যে রোগীকে দেখভাল করার দায়িত্ব নিজের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে, তিনি মা-বাবা হলেও আজ অনেক সন্তান ঠিকমতো তাদের সেবা করে না। মা-বাবা তো অসুস্থতার সময় এমনিতেই কষ্ট পান, তার উপর সন্তান যদি এই করুণ মুহূর্তে তাঁকে অবহেলা করে, তাহলে সেই কষ্ট মারত্মক অশান্তির রূপ নেয়।

পরিবারে এই যে এত অশান্তি, এর উৎস কোথায়, তা আমাদের জানতে হবে। এবং তার শিকড়টি উপড়ে ফেলতে হবে। নইলে জীবনভর এই অশান্তির আগুনে নিজেও পুড়ব, অন্যকেও পুড়াব।

পরিবার ও দাম্পত্য-ব্যবস্থার একদম প্রথম ধাপ হলো বিয়ে। এই বিয়ের আয়োজনেই আমরা নানাবিধ নাফরমানির মধ্যে লিপ্ত হয়ে পড়ি। আর এই নাফরমানিই পরবর্তী-জীবনে তৈরি হওয়া অশান্তির অন্যতম এক কারণ।

[1] সূরা রূম : ৭০

[2] সূরা নহল : ৮০

[3] সূরা আনআম : ৯৬

সত্য ও সুন্দরের প্রহরায় ৪৮ বছর

প্রতিষ্ঠাতা : শায়খ আল্লামা লুৎফুর রহমান বর্ণভী রহ.
নিবন্ধন নম্বর : চ-৪৭৩/০৫

সত্য ও সুন্দরের প্রহরায় ৪৮ বছর

প্রতিষ্ঠাতা : শায়খ আল্লামা লুৎফুর রহমান বর্ণভী রহ.
নিবন্ধন নম্বর : চ-৪৭৩/০৫

কপিরাইট © ২০২৪ | মাসিক হেফাজতে ইসলাম, আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলামের মুখপত্র। Developed By Shabaka IT