ছয় মঞ্জিল প্রসঙ্গ : আলমে আজসাদ বা দুনিয়ার জগত (৭ম পর্ব)

মহর প্রসঙ্গ

মহর হলো বিবাহের সময় কনের দাবিকৃত অর্থ বা সম্পদ, যা বর বা বরের পিতার পক্ষ থেকে কনেকে প্রদান করা হয়। এটি প্রদান করা বাধ্যতামূলক। মহরের সর্বোচ্চ কোনো সীমারেখা নির্ধারিত নেই। তা মূলত বরের আর্থিক অবস্থার উপর নির্ভর করে নির্ধারণ করা হয়। তবে মহরের সর্বনিম্নপরিমাণ ইমাম আবু হানীফা রাহমাতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে ১০ দিরহাম বা সমপরিমাণ সম্পদ।

মহরে ফাতিমী : মহরে ফাতিমী হলো ৫০০ দিরহাম অর্থাৎ এক উক্তি অনুযায়ী ১৩১.২৫ তোলা তথা ১.৫৩০.৯ কিলোগ্রাম রুপা। আরেকটি উক্তি হলো ১৫০ তোলা রুপা তথা ১৭৪৯.৬০০ কিলোগ্রাম রুপা। সতর্কতা স্বরূপ ১৫০ তোলার মতটি গ্রহণ করা যায়।

ইসলামী আইন অনুসারে বিয়ে বৈধ হয় পাঁচটি শর্ত পূরণ সাপেক্ষে। মহর প্রদান সেই পাঁচ শর্তের অন্যতম একটি শর্ত। মহর প্রদান ছাড়া বিয়ে পুরোপুরি বাতিল না হলেও এ ধরনের বিয়ে ত্রুটিযুক্ত।

মহরের গুরুত্ব—

  • এটা ইসলাম নির্ধারিত স্বামী কর্তৃক প্রদেয় স্ত্রীর অধিকারবিশেষ।
  • মহর আদায় করা ফরয।
  • মহর বিবাহ বৈধ হওয়ার মাধ্যম।
  • মহর নারীর আইনসম্মত অধিকার।
  • মহরের মাধ্যমে নারীর সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।
  • অসহায়ত্বের কষ্ট দূরীভূত হয়।

দাম্পত্যজীবনে স্বামী-স্ত্রী পারস্পরিক অধিকারসমূহ আদায়ে সচেষ্ট থাকা ও মার্জিত-শালীন ব্যবহারে একে অন্যকে প্রফুল্ল রাখতে যত্নবান হওয়া কর্তব্য। যাতে এই মধুময় সম্বন্ধে কোনো তিক্ততা না আসে।

 

তালাক প্রসঙ্গ

হযরত ইবনু উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহপাকের নিকট সর্বাপেক্ষা অপছন্দনীয় বৈধ কাজ হলো তালাক।[1]

সুতরাং এ বিষয়ে খুবই সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।

প্রাসঙ্গিকভাবে একটি বিষয় লক্ষণীয়

বিয়ে-শাদির পর অনেককেই দেখা যায় যে, তারা মা-বাবাকে ভুলে যান। অথচ মাতাপিতার হক আদায় করা একান্ত কর্তব্য। কর্তব্য তাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা, তাদের মুহাব্বাত ও দরদ হৃদয়ে লালন করা। মা-বাবার বৈধ হুকুমগুলো পালন করা। তবে যদি শরীয়তের খেলাপ কোনো হুকুম তাঁরা করেন তাহলে সেগুলো না করা। মা-বাবার খেদমত চালিয়ে যাওয়া, তাঁদের যাবতীয় প্রয়োজনাদি মিটিয়ে দেওয়া, তাঁদের আরাম পৌঁছানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করা। নিয়মিত তাঁদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করা। মোটকথা, বিয়ে-শাদির পর মা-বাবার হক আদায়ে কোনো ধরণের দুর্বলতা ও অবহেলা না করা।

এ বিশ্বাস দৃঢ়ভাবে অন্তরে রাখা যে, মা-বাবার খেদমতের বিনিময়ে আল্লাহপাক উভয় জীবনে উত্তম বদলা ও নেয়ামত দান করবেন।

ক্ষণিকের জীবনসফরে চারটি স্তর অতিক্রম করতে হয়। যথা : শৈশব, কৈশোর, যৌবন ও বৃদ্ধকাল। বৃদ্ধ বয়সে শক্তি ও সাহস ধীরে ধীরে কমতে থাকে। কর্মক্ষমতা হারিয়ে যায়। কিন্তু যৌবনের মূল্যবান সময় যদি নেক আমল ও ইবাদাতে অতিবাহিত হয়ে থাকে, তা হলে বুড়ো বয়সে উজরের কারণে ইবাদত না করতে পারলেও ইবাদতের সওয়াব দেওয়া হবে।

হাদীস শরীফে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ ফরমান- ‘বান্দা যখন অসুস্থ হয়ে যায় অথবা সফরে বের হয় তখন উজরবশতঃ স্বাভাবিক নফল আমলগুলো না করতে পারলেও পূর্বের ন্যায় তার আমলনামায় সওয়াব লেখা হয়।’[2]

এটা যেন অবসরে যাওয়া কর্মকর্তার মালিকের পক্ষ থেকে পেনশন-ভাতা। যা কাজ ছাড়াই পাওয়া যায়।

বৃদ্ধ বয়সের বিশেষ আমলসমূহ

  • অধিক পরিমাণে যিকির করা।
  • অধিক পরিমাণে তাসবীহাত আদায় করা।
  • অধিক পরিমাণে তিলাওয়াত করা।
  • অধিক পরিমাণে দরূদ শরীফ পাঠ করা।

সাধ্যমতো চেষ্টা করা যাতে কোনো আমল ছুটে না যায়। মনে রাখতে হবে দুনিয়া সাপের মতো, দেখতে নরম কিন্তু তার ছোঁবল বড় কঠিন ও শক্ত। তাই দুনিয়ার মোহে পড়ে আখিরাতকে ভোলা যাবে না।

দুনিয়ার জীবনে চলার বিষয়টিকে আল্লামা জালালুদ্দীন রুমী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি এভাবে উদাহরণ দিয়ে বলেছেন : নৌকা পানির উপরে থাকা তার স্বাভাবিক চলাচলের উপায় কিন্তু নৌকার ভেতরে পানি ঢোকা তার নিমজ্জিত হওয়ার কারণ। তেমনিভাবে দুনিয়াতে এমনভাবে চলতে হবে যে, দুনিয়ার মুহাব্বাত অন্তরে স্থান দেওয়া যাবে না। মনে রাখতে হবে, দুনিয়াকে অন্তরে স্থান দেওয়া ধ্বংসের কারণ হবে। তাই দুনিয়াতে এমনভাবে চলতে হবে যেন একজন পরবাসী পথচারী। এ জগৎ একটি তামাশা এবং এ তামাশাটাও আবার খুব অল্প সময়ের জন্য। এখানে যা কিছু দেখা যাচ্ছে সবই স্বপ্ন।

তাই দুনিয়ার বাস্তবতা অনুধাবন করে আমাদের জীবনকে সাজাব। আমল-আখলাকে সজ্জিত গোছালো জীবন নিয়ে আমরা পরবর্তী মানযিলে যাত্রা করব, ইনশাআল্লাহ।

[1] আবু দাউদ : ২১৭৮

[2] বুখারী : ২৯৯৬

সত্য ও সুন্দরের প্রহরায় ৪৮ বছর

প্রতিষ্ঠাতা : শায়খ আল্লামা লুৎফুর রহমান বর্ণভী রহ.
নিবন্ধন নম্বর : চ-৪৭৩/০৫

সত্য ও সুন্দরের প্রহরায় ৪৮ বছর

প্রতিষ্ঠাতা : শায়খ আল্লামা লুৎফুর রহমান বর্ণভী রহ.
নিবন্ধন নম্বর : চ-৪৭৩/০৫

কপিরাইট © ২০২৪ | মাসিক হেফাজতে ইসলাম, আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলামের মুখপত্র। Developed By Shabaka IT