আত্মাপবিত্র করণে আধ্যাত্মিক সাধনা
আত্মাপবিত্র করণে আধ্যাত্মিক সাধনার প্রথম স্তর হলো ‘তাওবার আমল’। দেহ ও আত্মাকে গুনাহ থেকে পবিত্র রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা। জীবনের সকল ক্ষেত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাতের অনুসরণ ও অনুকরণে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া। সুন্নাতের অনুসরণকে স্বভাবে পরিণত করে নেওয়া, বিশেষত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেগুলোকে ফিতরাত তথা ধর্মীয় স্বভাব বলে ঘোষণা করেছেন তা যথাযথভাবে পালন করা। যেমন : নাভির নিচের অবাঞ্চিত লোমগুলো পরিষ্কার করা, গোফ ছাটা, বগলের লোম পরিষ্কার করা ও নখ কাটা।
স্বাভাবিক পরিমাণের চেয়ে অতিরিক্ত লম্বা নখ রাখা সুস্থ স্বভাবের পরিপন্থি। দাড়ি লম্বা করা অন্তত এক মুষ্টি পরিমাণ লম্বা রাখা। কোনো অবস্থাতেই দাড়ি মুণ্ডানো যাবে না।
মানবজীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময় যৌবনকাল
যৌবনে পদার্পণের মধ্য দিয়ে মানবজীবনে শরীয়তের মৌলিক বিধিবিধান আরোপিত হয়। তখন থেকে মালিকের যাবতীয় আদেশ-নিষেধ যথাযথ গুরুত্ব ও মর্যাদার সহিত আমলে এনে নিজেকে খাঁটি বান্দা হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করা একান্ত কর্তব্য। অন্যথায় এ জীবন মূল্যহীন ও মাটিতে রূপান্তরিত হবে।
কবি বলেন—
‘যৌবনকে উৎসর্গ করো সেই সত্তার জন্য, যিনি (তোমাকে) এ যৌবন দান করেছেন।
ধুলির ধরায় (চাকচিক্যের আকর্ষণে) নিজের জীবনকে মাটি (মূল্যহীন) করো না। বরং যৌবনকে গনীমত মনে করে এ সময়েই জীবন সফলতার পূঁজি সংগ্রহ করে নাও।’
যৌবনকালের ইবাদাতের শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনায় বুখারী শরীফে হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত এক হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ ফরমান- ‘কিয়ামাত দিবসে সাত শ্রেণির মানুষকে আল্লাহপাক তাঁর আরশের নিচে স্থান দেবেন। সেদিন এই ছায়া ব্যতীত অন্য কোনো ছায়া থাকবে না। (১) ন্যায়পরায়ণ শাসক। (২) ওই যুবক যে স্বীয় যৌবনকাল আল্লাহপাকের ইবাদাতে কাটিয়েছে। (৩) ওই নামাযী ব্যক্তি যে মসজিদ থেকে ফিরে এসে পুনরায় মসজিদে যাওয়া পর্যন্ত তাঁর অন্তর মসজিদের সাথে লেগে থাকে। (৪) এমন দুই ব্যক্তি, যারা পরস্পরে মুহাব্বাত রাখে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। যাদের একত্র হওয়া ও পৃথক হওয়া শুধুমাত্র আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি হাসিলের উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে। (৫) ওই ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহ তাআলাকে স্মরণ করে ও তাঁর ভয়ে দুচোখের অশ্রু ফেলে। (৬) ওই ব্যক্তি যাকে কোনো সম্ভ্রান্ত ও সুন্দরী রমণী খারাপ কাজের প্রস্তাব দেয় আর সে প্রতি উত্তরে বলে, আমি আল্লাহকে ভয় করি। (৭) ওই দানশীল ব্যক্তি যার ডান হাত কী দান করে বাম হাত তা জানে না।’[1]
আল্লাহপাক আমাদেরকে বর্ণিত হাদীসের সৌভাগ্যবান ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার তাওফীক দান করুন।
যৌবনকাল হচ্ছে চরিত্র গঠন ও আমল সংশোধনের উপযুক্ত সময়। এ সময়ের নামায ও অন্যান্য ইবাদাত-বন্দেগীর এবং তাওবার মধ্যে নূর থাকে। অধিকাংশ সাহাবী যৌবনকালেই ইসলামে দীক্ষিত হয়েছেন এবং চরিত্রগঠন ও নেকআমলের অনুশীলনে জান্নাতী হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন।
একটা বিষয় লক্ষ রাখা জরুরি যে, যৌবনকালই হচ্ছে বিবাহের উপযুক্ত সময় এবং বিবাহবহির্ভূত জীবনযাপন ইসলাম মোটেও পছন্দ করে না। তাই পিতা-মাতা ও অভিভাবকের কর্তব্য হলো, বিয়ের উপযুক্ত সন্তানের বিবাহ-শাদিতে বিলম্ব না করা। যদি কোনো উযর না থাকে।
এ প্রসঙ্গে সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফে হযরত আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণিত হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ ফরমান- ‘হে যুবসম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যারা সামর্থ্যবান তারা যেন বিবাহ করে নেয়। কেননা, বিবাহ হচ্ছে দৃষ্টিকে আনত করা ও লজ্জাস্থান হেফাজত করার অধিকতর সহায়ক। যে সামর্থ্যরে অধিকারী নয়, সে যেন রোযা রাখে। কেননা, রোযা তার জন্য নিবীর্যকরণস্বরূপ।’[2]
বিবাহের হুকুমের প্রকারভেদ
(১) যদি যৌনউত্তেজনা বেশি হয়, বিবাহ না করলে যিনা-ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং বিবাহের সামর্থ্যও থাকে, এ পর্যায়ের লোকদের জন্য বিবাহ করা ফরয।
(২) যৌনআকাঙ্ক্ষা তীব্র হলে এবং অন্যান্য দিক থেকে বিবাহের সক্ষমতা থাকলে এমন ব্যক্তির জন্য বিবাহ করা ওয়াজিব।
(৩) যৌনউত্তেজনা স্বাভাবিক থাকলে এবং অন্যান্য দিক হতে বিবাহে সক্ষম হলে এমন ব্যক্তির জন্য বিবাহ করা সুন্নাত।
উপরোক্ত হুকুম ইমাম আবু হানীফা রাহমাতুল্লাহি আলাইহি-এর অভিমত অনুসারে বর্ণিত।
বিবাহের ফায়দাসমূহ
১. ঈমানের পূর্ণতা হাসিল হয়।
২. আত্মশুদ্ধির জন্য সহায়ক হয়।
৩. সুস্থ জীবনযাপনে সহায়ক হয়।
৪. সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।
৫. যিনা-ব্যভিচার ও অনৈতিকতা হ্রাস পায়।
৬. সুষ্ঠু ও সুন্দর সমাজগঠনে সহায়ক হয়।
[1] বুখারী : ৬৬০
[2] মুসলিম : ৩২৯১