حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ مُوسَى، قَالَ أَخْبَرَنَا حَنْظَلَةُ بْنُ أَبِي سُفْيَانَ، عَنْ عِكْرِمَةَ بْنِ خَالِدٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ ـ رضى الله عنهما ـ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم “ بُنِيَ الإِسْلاَمُ عَلَى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، وَإِقَامِ الصَّلاَةِ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ، وَالْحَجِّ، وَصَوْمِ رَمَضَانَ ”.
হাদীসের তরজমা :
হযরত ইবনে ওমর রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘পাঁচটি জিনিসের উপর ইসলামের ভিত্তি রাখা হয়েছে।’ ১. ‘এ বিষয়ে সাক্ষ্য দেওয়া যে আল্লাহ ব্যতীত আর কোন উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল।’ ২. ‘নামায কায়েম করা।’ ৩. ‘যাকাত প্রদান করা।’ ৪. ‘হজ আদায় করা।’ ৫. ‘রমাযানের রোযা রাখা।’ (সহীহ বুখারী, হাদীসক্রম : ০৮)
শাহাদাতাইন :
ইসলামের সবপ্রথম ও সর্বশ্রেষ্ঠ রুকন হল ‘শাহাদাত’। অর্থাৎ খাঁটি অন্তরে আল্লাহর একত্ববাদ এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রিসালাতের সাক্ষ্য দেয়া। শাহাদাত হলো ঈমানের মূল। কারণ, শাহাদাত অর্থ হচ্ছে, ‘অন্তরে যে বিশ্বাস ও আনুগত্য রয়েছে মুখে তা প্রকাশ করা’। এজন্যই মুনাফিকদের উক্তি- ‘انك لرسول الله’ এর জবাবে আল্লাহ তাআলা বলেছেন- ‘ان المنافقين لكاذبون’ অর্থাৎ, বাস্তবতার অবিদ্যমানতার কারণে মুনাফিকদের সাক্ষ্যকে এখানে মিথ্যা সাব্যস্ত করা হয়েছে। কারণ, তারা মুখে সাক্ষ্য দিলেও এটি তাদের অন্তরের কথা ছিল না। তাদের অন্তরে রিসালাতের সাক্ষ্য বিদ্যমান ছিল না।
আল্লাহ তাআলার একত্ববাদ এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রিসালাত উভয়ের উপরই সাক্ষ্য নিরেট হতে হবে। যদি কোন ব্যক্তি খাঁটি অন্তরে তাওহীদ-রিসালাত কিংবা এ উভয়ের যেকোনো একটির সাক্ষ্য না দেয়, তবে সেই ব্যক্তি মুমিন হিসেবে গণ্য হবে না। কাফের, মুশরিক ও মুনাফিকদের প্রায় সবাই আল্লাহ তাআলার তাওহীদের প্রতি বিশ্বাসী ছিল। যদিও তাদের অনেকে শিরকও করতো। যেমন কুরআনে কারীমে এসেছে-ولئن سالتهم من خلق السموات والارض ليقولن الله অর্থাৎ, “আপনি যদি তাদের নিকট জিজ্ঞেস করেন যে, আকাশ ও পৃথিবী কে সৃষ্টি করেছেন? তবে তারা বলবে, আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করেছেন।” উক্ত আয়াত থেকে জানা যায় যে, মক্কার কাফেররা আল্লাহ তাআলাকে এক হিসেবে জানতো, বিশ্বাস করতো। তথাপি তাদের মুমিন বা মুসলিম হিসেবে গণ্য করা হয় না। কারণ তারা রিসালাতের প্রতি বিশ্বাস রাখতো না। অথচ আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজিদে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রিসালাতের ঘোষণা দিয়েছেন- انا ارسلنا اليكم رسولا شاهدا عليكم كما ارسلنا الى فرعون رسولا অর্থাৎ “আমি তোমাদের কাছে একজন রাসূলকে তোমাদের জন্য সাক্ষী করে প্রেরণ করেছি। যেমন প্রেরণ করেছিলাম ফেরাউনের কাছে একজন রাসূল।” আল্লাহ তাআলার আনুগত্য করতে হলে সর্বপ্রথম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুসরণ করতে হবে। قل ان كنتم تحبون الله فاتبعوني يحببكم الله অর্থাৎ, “হে নবী! আপনি বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসো তবে আমার অনুসরণ করো।” তবে আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে ভালোবাসবেন। এ আয়াতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আল্লাহ তাআলার ভালোবাসা পেতে হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালোবাসতে হবে এবং তার অনুসরণ করতে হবে। এর পরের আয়াতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুসরণ-বিমুখতার উপর হুঁশিয়ারি বর্ণনা করা হয়েছে-قل اطيعوا الله والرسول فان تولوا فان الله لايحب الكافرين অর্থাৎ, “হে নবী! আপনি বলুন, তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য প্রকাশ করো। যদি তারা বিমুখতা প্রদর্শন করে তবে আল্লাহ তাআলা কাফেরদের ভালোবাসেন না।”
উল্লেখিত আয়াতে আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করার আদেশ করা হয়েছে। এর বিপরীত করাকে কুফরি আখ্যা দেয়া হয়েছে। সুতরাং এতে বোঝা গেল যে, তাওহীদ এবং রিসালাত উভয় বিষয়ের সত্যতার উপর খাঁটি অন্তরে সাক্ষ্য প্রদান করতে হবে। কোন ব্যক্তি যদি কেবল তাওহীদে বিশ্বাসী হয় এবং রিসালাতকে না মানে, তবে সে ব্যক্তি মুমিন নয়, বরং সে কাফির। কারণ রিসালাতকে মানার নির্দেশ স্বয়ং আল্লাহ তাআলাই দিয়েছেন। তদ্রুপ কোন ব্যক্তি যদি কেবল রিসালাতকে স্বীকার করে এবং তাওহীদকে অস্বীকার করে, তবে সেও নির্দ্বিধায় কাফের। মোটকথা, আল্লাহ তাআলা যেসকল বিধি-নিষেধ মেনে চলার আদেশ দিয়েছেন, তার প্রতি পরিপূর্ণভাবে বিশ্বাস স্থাপন করা। এর মধ্যে রিসালাত, পরকালের প্রতি বিশ্বাস, পূর্ববর্তী নবী আলাইহিস সালামগণের প্রতি ঈমান আনয়ন, আসমানী কিতাবসমূহের প্রতি ঈমান আনয়ন, ভাগ্যের প্রতি ঈমান আনয়ন, আল্লাহ তায়ালার যাবতীয় বিধি-নিষেধের প্রতি ঈমান আনয়ন ইত্যাদি সবই অন্তর্ভুক্ত।
এক কথায় বলতে গেলে উল্লেখিত সকল বিষয়ের প্রতি পূর্ণরূপে বিশ্বাস রাখতে হবে। যদিও পূর্ণরূপে কেউ ঐ সকল বিষয় কার্যে পরিণত করতে পারুক বা না পারুক। কিন্তু এগুলোর প্রতি বিশ্বাসে কোন প্রকার অপূর্ণাঙ্গতা গ্রহণযোগ্য হবে না। অর্থাৎ, বিশ্বাসের ক্ষেত্রে শতভাগ থাকতে হবে, যদিও আমলের ক্ষেত্রে ঘাটতি থাকে।
নামায :
ইসলামের দ্বিতীয় রুকন বা স্তম্ভ হলো নামায। ঈমানের পরেই সর্বোত্তম স্তম্ভ হলো এটি। সকল প্রকারের ইবাদতের মধ্যে নামায হলো সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত। অন্যান্য ইবাদতের তুলনায় নামাযের মাধ্যমে বিশ্ব জাহানের প্রতিপালক ও বিশ্ব চরাচরের একচ্ছত্র অধিপতির সামনে বান্দা তার দাসত্ব প্রকাশ করে থাকে। নামাযের মাধ্যমেই মুনিব ও ভৃত্যের মধ্যকার সম্পর্ক পরিষ্কাররূপে ফুটে ওঠে।
নামাযর পূর্বে ‘আযান’ দেয়া হয়ে থাকে। এটি যেন শাহী দরবারে যাওয়ার জন্যে আহ্বান-ধ্বনি। এরপর ওযু করে পাক-পবিত্র হয়ে উত্তম পোশাক পরে মসজিদে গিয়ে কাতারবদ্ধ হয়ে প্রভুর সামনে দাঁড়িয়ে বান্দা তার মুনিবের সামনে নিজের সর্বস্ব উজাড় করে দিয়ে স্বীয় তুচ্ছতা প্রকাশ করে থাকে। সেজদার মাধ্যমে বান্দা যেন তার মুনিবের পায়ে স্বীয় কপাল ঠুকে তার চূড়ান্ত হীনতা ও দীনতার প্রকাশ ঘটিয়ে থাকে। বান্দা যখন তাকবীরে তাহরিমা বলে দু’হাত বাঁধে, তখন সে পৃথিবীর সবকিছুকে পেছনে ফেলে একাগ্রচিত্তে মহান প্রভুর সামনে অপরাধীর মত দাঁড়িয়ে থাকে। এরপর রুকু করে স্বীয় দীনতা প্রকাশ করে। এরপর দীনতা ও তুচ্ছতার পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে সেজদায় লুটিয়ে পড়ে। নামাযের মাধ্যমে বান্দার চূড়ান্ত দাসত্বরূপ ফুটে ওঠে বিধায় এ ইবাদত সর্বোত্তম ইবাদত। নামাযের মাধ্যমেই মানুষের দেহ-মন পুতঃপবিত্র হয়ে ওঠে। এদিকে ইঙ্গিত করে কুরআনে কারীমে এসেছে- ان الصلاة تنهى عن الفحشاء والمنكر অর্থাৎ, নিশ্চয়ই নামায অশ্লীল ও গর্হিত কাজ থেকে বিরত রাখে।
যাকাত :
নামাযের মাধ্যমে বান্দা শাহী দরবারে তার রাজত্বের স্বীকৃতি দিয়ে এসেছে যে, আমি তোমারই অনুগত, তোমার দাস ও অধীনস্থ এবং আমি তোমারই রাজত্বে বসবাসকারী। আর সকল রাষ্ট্রেরই বিধান রয়েছে প্রজাদের উপর কর আরোপ করার। যেন এটা প্রমাণ হয় যে, আমার প্রজা-সাধারণ জান-মাল উভয় দিয়েই হাজির আছে। যদি দুনিয়ার শাসকবর্গ নিজেদের স্বার্থে ট্যাক্স নিতে পারে তাহলে আল্লাহ তাআলা যিনি সকল সৃষ্টির মালিক ولله خزائن السماوات والارض অর্থাৎ, “ভূমণ্ডল ও নভোমণ্ডলের ধনভান্ডার আল্লাহ তাআলারই।” এ কারণেই আল্লাহ তাআলা স্বীয় প্রজ্ঞাসুলভ শানে যাকাত ফরজ করে নির্দেশ প্রদান করেছেন যে, যাকাত প্রদান করো। আর বান্দাও যাকাত প্রদান করে এটা প্রমাণ করে যে, আমরা যেভাবে স্বশরীরে হাজির আছি তদ্রুপ আর্থিকভাবেও হাজির আছি। অবশ্য আল্লাহ তাআলা নিজের জন্য যাকাত গ্রহণ করেন না। যেমন রাজা বাদশাহরা তাদের নিজেদের জন্য এবং জনগণের সার্বিক পরিচালনা ব্যবস্থা বজায় রাখার লক্ষ্যে জনগণের কাছ থেকে ট্যাক্স আদায় করে থাকেন। আল্লাহ তাআলা যাকাত আদায়ের খাত নিম্নোক্ত আয়াতে ব্যক্ত করেছেন-
انما الصدقات للفقراء والمساكين و العاملين عليها والمؤلفه قلوبهم وفي الرقاب والغارمين وفي سبيل الله وابن السبيل فريضة من الله والله عليم حكيم
অর্থাৎ, “যাকাত হলো ফকীর-মিসকিন, যাকাত আদায়ে নিযুক্ত কর্মচারীদের জন্য, যাদের চিত্ত আকর্ষণ প্রয়োজন তাদের হক। আর তা দাস মুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে জিহাদকারীদের জন্য এবং মুসাফিরদের জন্য। এই হল আল্লাহর নির্ধারিত বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।”
এই জগৎ-সংসারে আল্লাহ তাআলা কাউকে বানিয়েছেন ধনী আর কাউকে বানিয়েছেন গরিব। এটি কেবল আল্লাহ তাআলার ইচ্ছাতেই হয়েছে। কাউকে তিনি অনেক ভূসম্পত্তি, অর্থ সম্পদ ও প্রভাব-প্রতিপত্তির অধিকারী বানিয়েছেন। মৌলিকভাবে এতে কারো হাত নেই। এ কারণেই কোন ব্যক্তির জন্য এমন বলা উচিত নয় যে, ‘আমি কেবল আমার প্রচেষ্টাতেই এ সম্পদ অর্জন করেছি।’ প্রত্যেক সম্পদশালীর সম্পদে এতিম, গরিব, মিসকীন প্রভৃতি ব্যক্তির অধিকার রয়েছে।
মোটকথা, নামায ও যাকাত হলো আল্লাহ তাআলার জালালী শান বা শাসক সুলভ শানের বহিঃপ্রকাশ। আর রোযা ও হজ হলো জামালী তথা প্রেমাস্পদ সুলভ শানের বহিঃপ্রকাশ।
রোযা :
রোযা ইসলামের চতুর্থ রুকন। ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে এর গুরুত্ব অপরিসীম।
রোযা বিধিবদ্ধ হওয়ার হেকমত : ইসলামে রোযা বিধিবদ্ধ হওয়ার পিছনে বহুবিধ হেকমত রয়েছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হল-
ক. রোযা দ্বারা কুপ্রবৃত্তি দমন হয় এবং চক্ষু, কর্ণ, জিহ্বা ও লজ্জাস্থান প্রভৃতি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের অতিরিক্ত চাহিদা অবদমিত হয়।
খ. রোযা দ্বারা অন্তরের যাবতীয় মলিনতা দূর হয়।
গ. রোযা মানুষকে নিয়মানুবর্তিতা শিক্ষা দেয়।
ঘ. রোযা পালনের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহ ভীতি বা তাকওয়া অর্জনের সক্ষমতা লাভ করে। যেমন আল্লাহ তাআলার বাণী-كتب عليكم الصيام كما كتب على الذين من قبلكم لعلكم تتقون অর্থাৎ, “তোমাদের উপর রোযা ফরজ করা হয়েছে যেমনিভাবে ফরজ করা হয়েছে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পারো।”
ঙ. রোযার কারণে ক্ষুধার অনুভূতি ধনীর অন্তরে দরিদ্রের জন্য সহানুভূতি জাগিয়ে তুলে এবং দরিদ্রকে সাহায্য করার মানসিকতা সৃষ্টি করে।
চ. রোযার মাধ্যমে ক্ষুধার তীব্র পীড়নে জর্জরিত গরিবদের প্রতি ধনীদের অন্তরে বেদনার অনুভূতি জাগ্রত হয়।
ছ. রোযা ব্যক্তিকে যাবতীয় অবাঞ্চিত কাজ থেকে বিরত থাকতে অভ্যস্ত করে তোলে।
জ. সর্বোপরি, রোযাই মানুষকে আল্লাহ ও বান্দার অধিকার আদায়ের যোগ্য হিসেবে গড়ে তোলে।
হজ :
ইসলামের পঞ্চম রুকন বা স্তম্ভ হলো হজ। যা প্রভু-প্রেমের এক উজ্জ্বল নিদর্শন। বান্দা তার প্রেমাস্পদ প্রভুর প্রেমে বিভোর হয়ে যায়। প্রেমিক তার প্রেমাস্পদের সান্নিধ্য লাভের আশায় ছুটে চলে তার বাড়িতে। প্রেমিকের কোনো লক্ষ্যই থাকে না তার দেহের প্রতি। গায়ে ধুলা পড়ে গেছে। মাথার চুল এলোমেলো। পোশাক-আশাকের নেই কোন শ্রী। এ সময় প্রেমিকের মনে প্রেমের জোয়ার বয়ে যায়। প্রেমাস্পদকে পাওয়ার জন্য তার চিত্ত অশান্ত হয়ে ওঠে। ছুটে চলে প্রেমাস্পদের সান্নিধ্যের আশায় দিগ্বিদিক। প্রেমাস্পদের বাড়ির আশেপাশে ঘোরাফেরা করতে থাকে। প্রেমাস্পদকে দেখার জন্য তার বাড়ির আশেপাশে উঁকিঝুঁকি মারতে থাকে। হজের ক্ষেত্রেও ঠিক এমনই হয়ে থাকে। পরম প্রেমাস্পদ আল্লাহ তাআলাকে পাওয়ার জন্য বহু দূর-দুরান্ত থেকে এবং বহু দেশ থেকে আল্লাহ-প্রেমিকগণ ছুটে আসেন কাবা ঘরের উদ্দেশ্যে। খালি মাথা, নগ্ন পদে, সেলাইবিহীন দু’টুকরো বস্ত্র পরে, সবপ্রকার সাজসজ্জা পরিহার করে, তারা আল্লাহর ঘরের চতুর্দিকে প্রদক্ষিণ করতে থাকে। উচ্চ আওয়াজে প্রেমাস্পদকে উদ্দেশ্য করে তারা বলে ওঠে- لبيك اللهم لبيك অর্থাৎ, ‘হে আল্লাহ! হে আমাদের পরম প্রেমাস্পদ সত্তা! আমরা তোমার দরবারে হাজির হয়েছি।’ প্রভু-প্রেমে মাতোয়ারা হয়ে হৃদয় মাঝে প্রভুকে ধারণ করে তাঁর গৃহের দেয়ালে চুম্বন করে থাকে। প্রভু-প্রেমের শরাব পানকারী প্রেমিকরা হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করে থাকে।
হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে নামাযের মাধ্যমে তোমার নৈকট্য লাভ করার, রোযার মাধ্যমে তাকওয়া অর্জন করার, যাকাতের মাধ্যমে তোমার আনুগত্য প্রকাশ করার এবং হজের মাধ্যমে তোমার প্রেমে বিভোর হওয়ার তাওফীক দান করো। আমীন।